করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্ব ব্যবস্থার ভেতরের দুর্বলতাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে মন্তব্য করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গতকাল শনিবার ঢাকায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব এখন অসংখ্য চ্যালেঞ্জ ও সংঘাতের মুখোমুখি। কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্ব ব্যবস্থার দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে।
আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই এবং পারস্পরিক শান্তি ও সমপ্রীতি নিশ্চিত না করি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে পারব না। এর মধ্যেই ধরিত্রী যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কবলে পড়েছে তাও তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্য নিয়ে গতকাল দুদিনের শান্তি সম্মেলন শুরু হয়। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে উদ্বোধন পর্বে ভিডিও কনফারেন্সে বঙ্গভবন থেকে যুক্ত হন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ সম্মেলন ‘ঢাকা শান্তি ঘোষণা’ শীর্ষক একটি সর্বসম্মত ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে। সমাপনী পর্বে সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি সম্মেলন আয়োজনের জন্য স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে সভাপতি ও সায়মা ওয়াজেদকে সদস্য সচিব করে ৪৬ সদস্যের আয়োজক কমিটি গঠন করা হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের অবশ্যই ধর্ম, বিশ্বাস, বর্ণ এবং জাতিগত বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। একটি সুষম বিশ্বব্যবস্থা সকলের জন্য অপরিহার্য। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে, আমরা সকলে ভাগাভাগি করে এমন একটি গ্রহে বাস করি, যার দায়িত্বও আমরা ভাগ করে নিয়েছি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সর্বোত্তম পন্থা। আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংঘাতের সমাধান এবং বিশ্বব্যাপী শান্তির প্রচারের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই নীতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি-উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের পর মানবাধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অবদান তুলে ধরেন।
শান্তি সম্মেলনে যোগদানকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের সকলের একটি মূল্যবোধ, একটি আদর্শ এবং একটি স্বপ্ন রয়েছে এবং তা হলো শান্তি, আমরা শান্তি লালন করি। বিশ্বজুড়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থাকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। আমরা শান্তিকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে দেখি।
স্পিকার শিরীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ভারতের সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু। ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ হামিদ আলবার, বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক ও জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আনোয়ারুল করিম চৌধুরী, মিশরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আরব লীগের সাবেক মহাসচিব আমর মুসা। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের ধারণকৃত ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে দেখানো হয়।