ভবিষ্যতের বিপদ এড়াতে আগেভাগে সতর্ক হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

ব্যাংকিং খাতের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে নির্দেশ

| সোমবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে এখনই বাংলাদেশ বিপদে না পড়লেও এবং যথেষ্ট রিজার্ভ থাকলেও আগের চেয়ে সাশ্রয়ী ও সচেতন থাকার পাশাপাশি আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস মহামারীর বৈশ্বিক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিভিন্ন দেশ যে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই বাস্তবতার কথা তুলে ধরে ভবিষ্যতে দেশ ও দেশের মানুষ যেন কোনো সংকটে না পড়ে সেজন্য আগেভাগে ব্যয় কমানো, রপ্তানি ও উৎপাদন
বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন সরকারপ্রধান।
গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সচিব সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এমন নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা রেমিটেন্স পাঠায় তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ, প্রণোদনা আমরা দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের রিজার্ভ যেটা হচ্ছে আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের ৫/৬ মাসের হিসাব আছে। তারপরও আমাদের এখন যা অবস্থা তাতে আমাদের একটু সাশ্রয়ী হতে হবে, আরেকটু সচেতন হতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
এর কারণ হিসেবে উন্নত অনেক দেশের রিজার্ভের সমস্যায় পড়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে ২/১টা দেশ হয়ত খুব লাভবান। কিন্তু বেশিরভাগ দেশগুলো একেবারে… যারা উন্নত দেশ তারাও কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। সেইদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এখন ব্যয় সীমিত করা দরকার, সাশ্রয়ী করা দরকার। আমরা এখনই যে বিপদে পড়েছি তা কিন্তু না। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে আমার আগাম ব্যবস্থাটা নিতে হবে, যেন আমি সামনে, ভবিষ্যতে কোনো বিপদে দেশ না পড়ে বা দেশের মানুষ না পড়ে আমাদের সেই সতর্কতাটা একান্তভাবে দরকার এবং সেই সতর্ক বার্তাটাই কিন্তু আমরা দিচ্ছি। একইসঙ্গে রপ্তানি বাড়াতে তিনি রপ্তানি বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু তারপরও আমাদের অনেক জিনিস এখনও কিনতে হয়। যে সমস্ত জিনিস আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হয় তার মধ্যে কী কী জিনিস আমরা দেশে উৎপাদন করতে পারি সেই দিকে আমাদের এখন দৃষ্টি দিতে হবে। যেন দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের চাহিদা যেন পূরণ করতে পারি। আমাদের যেন অন্তত বাইরের উপর নির্ভরশীলতা কতটা কমাতে পারি। সেই বিষয়টাকে আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।
বিদ্যুৎ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হলেও রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য জ্বালানি তেলের দাম বা গ্যাসের দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশেও সমস্যা দেখা দেয় বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাছাড়া আমি মনে করি আমাদের নিজেদেরও সাশ্রয়ী হওয়া এই কারণে দরকার আবার আমি বলছি যে, আমরা ভবিষ্যতে যাতে সমস্যায় না পড়ি। কাজেই এখন থেকে আমাদেরকে সেই ব্যবস্থা নেওয়া একান্তভাবে দরকার বলে আমি মনে করি।
আগামীতে রূপপুর পারমাণবিক ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে আসবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রিড লাইন ও সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ দ্রুত করার কথা বলেন। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী নদীর উপর টানেল নির্মাণের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও সভায় তুলে ধরেন তিনি। কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং সেইভাবে মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, এই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের সমস্ত পরিকল্পনাগুলো বা প্রকল্পগুলো সেগুলো বাছতে হবে। বেছে নিয়ে এবং কোনগুলো দ্রুত শেষ করা যায় আমরা সেগুলো আগে শেষ করে ফেলে নতুনটা যাতে ধরতে পারি সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে এ বিষয়ে নিয়মিত ‘আপডেট’ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
জানতে চেয়েছেন ব্যাংকিং খাতের সবশেষ অবস্থা : বাংলানিউজ জানায়, সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা নিয়ে মিটিংয়ে ইনডাইরেক্ট আলোচনা হয়েছে এবং নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স ডিভিশনকে। চারদিকে এত কথাবার্তা উঠছে, আসল সিনারিওটা কী সেটা শিগগিরই দেখে অবহিত করবেন আমাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএসএসসির ফল আজ, যেভাবে জানা যাবে
পরবর্তী নিবন্ধআচমকা ধর্মঘট, স্থবির নৌ পরিবহন সেক্টর