বড় হতে হবে, তবে চরিত্র বিসর্জন দেওয়া যাবে না

চবি সাংবাদিকতা বিভাগে আন্তর্জাতিক কর্মশালায় এম এ মালেক

চবি প্রতিনিধি | বুধবার , ৯ মার্চ, ২০২২ at ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ

দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, আমাদেরকে বড় হতে হবে। কিন্তু বড় হয়ে আজকের যে নিষ্কলুষ চরিত্র, সেটা বিসর্জন দেওয়া যাবে না। চরিত্র বিসর্জন না দিলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আর কোনো আইডিয়া মাথায় এলে সেটাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। সেটা যদি মাথার মধ্যে রেখে দেন, তাহলে সেই আইডিয়া থেকে কেউ উপকৃত হবে না। এপিজে আবদুল কালামের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে একটি স্ফূলিঙ্গ রয়েছে, সেটাকে প্রজ্বলিত করার নামই শিক্ষা। আরেক মনীষীর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্কুল-কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করে ভুলে গিয়ে যা মনে থাকে সেটা হলো শিক্ষা। এজন্য আমাদের বেশি বেশি পড়তে হবে। যত বেশি পড়ব, তত বেশি জানব। এর মাধ্যমেই দেশ-জাতি উন্নতির দিকে ধাবিত হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে একাডেমি জার্মানির আয়োজনে দুদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কর্মশালা শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চবি ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ অডিটরিয়ামে ‘IDEAthon : Constructive Journalism in Bangladesh’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এম এ মালেক এসব কথা বলেন।
উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে বিশেষ কাজের জন্য অনুপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী পর্বে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি শহীদুল হক সভাপতিত্ব করেন। বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী ও ডয়েচে ভেলের বাংলাদেশ, ভারত ও আফগানিস্তানেরর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর প্রিয়া এসেলবর্ন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কর্মশালার আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সহিদ উল্যাহ।
এম এ মালেককে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখিত পত্র পাঠ করেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নীপু। পাঠ শেষে ফ্রেমে বাঁধাই করা শুভেচ্ছাপত্রটি এম এ মালেককে হস্তান্তর করা হয়।
আজাদী সম্পাদক বলেন, সবার মধ্যে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। এটা না থাকলে আমরা বেঁচে থাকতে পারব না। একটা সিংহ জন্ম হওয়ার পর থেকেই খাবার খোঁজে। একটি পশু স্বভাবমূলক আচরণ নিয়েই জন্ম নেয়। অপরদিকে একজন মানবশিশুকে তা আয়ত্ব করে নিতে হয়। ধীরে ধীরে শিখে নিতে হয়। একুশে পদক পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি মারা গেলে বঙ্গবন্ধুর লাল-সবুজের পতাকা আমার কফিনে স্থান পাবে। একুশে পদক পাওয়ার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার কাছে এটাই।
শিক্ষা সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষা এমন একটি অস্ত্র যা সমাজকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। তিনজন ব্যক্তি আমাদের সবচেয়ে ভালো চান, তারা হলেন মা, বাবা ও শিক্ষক। কারণ, তারা আপনার থেকে কিছু চান না। একজন শিক্ষক সবসময় চান তার শিক্ষার্থী ভালো কিছু করুক, প্রতিষ্ঠিত হোক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক-দৈনিক আজাদী বৃত্তি প্রসঙ্গে এম এ মালেক বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের একটি বৃত্তি চালু রয়েছে। প্রতি বছর ১০ জনকে মেধার ভিত্তিতে এ বৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাংবাদিকতা বিভাগের দুজন পেয়ে থাকেন। এর বাইরেও যদি কোনো শিক্ষার্থী থাকে, যে পারিবারিকভাবে অসচ্ছল বা বৃত্তি পাওয়ার মতো, তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। আমরা তাকেও সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড না হলে আমিও জানতে পারতাম না এটি কত ভয়ংকর। আমি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ১১ দিন হাসপাতালে থেকেছি। তাই সকলকে স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পাবলিসিটির প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত দুই-তিন বছরে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছেন পাবলিসিটি খাতে। যে টাকা দিয়ে পুরো পৃথিবীর আট বছরের নিচে শিশুদের একদিন খাবার খাওয়ানো যাবে। সবাই চায় ফোকাসে আসতে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে পাবলিসিটি কোথায় গিয়েছে।
বক্তব্য শেষে তিনি দৈনিক আজাদীর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বরের একটি করে কপি দেন অতিথিদের।
এম এ মালেককে অভিনন্দন জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন নীপু বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সূচনালগ্ন থেকে দৈনিক আজাদী অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। দৈনিক আজাদীর প্রয়াত সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ এ বিভাগ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি এ বিভাগের প্রথম পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যক্রম প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ খালেকের নামে বৃত্তি চালু করার মধ্য দিয়ে আপনি এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন ও বিদ্যায়তনিক পাঠ অনুশীলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ বৃত্তি এখন বৃহত্তর পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের শিক্ষার্থীদের মেধার স্বীকৃতি প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ডয়েচে ভেলের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর প্রিয়া এসেলবর্ন বলেন, করোনায় আমরা খেয়াল করেছি নেগেটিভ নিউজ কিভাবে আমাদের জনমনকে বিষিয়ে তুলছে। তাই আমরা ভাবলাম এখনই উপযুক্ত সময় কন্সট্রাকটিভ জার্নালিজম চর্চা করার। কারণ এটি একটি নতুন বিষয়, যা এখনো অনেকের কাছে অপরিচিত। আমরা আশা রাখি এই চর্চা জনসাধারণকে সংবাদ বিতৃষ্ণা থেকে ফিরিয়ে আনবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিধিরা আসছেন। আশা করি নতুন নতুন আইডিয়া উঠে আসবে। চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাথে এ সম্পর্ক আরো দীর্ঘ হবে।
চবি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, গঠনমূলক সাংবাদিকতা সংবাদমাধ্যমে একটি নতুন টার্ম। এ কর্মশালার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা অনেক কিছু শিখতে পারবে। একটি সংবাদে সমস্যার পাশাপাশি সমাধানের উপায় বেরিয়ে আসবে।
সমাপনী বক্তব্যে শহীদুল হল বলেন, গঠনমূলক সাংবাদিকতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। বর্তমান সময়ে এটির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
এর আগে সকাল ৯টা থেকে কর্মশালার মূল অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে সংরক্ষিত সেশন হয়। উদ্বোধনী সেশনে বিভাগে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বর্ষের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার দিনব্যাপী কর্মশালা চলবে। বাংলাদেশে গঠনমূলক সাংবাদিকতা চর্চা ও সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করার প্রয়াসে এই কর্মশালা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক এলজিআরডি মন্ত্রীর ভাই বাবর গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধদায়েরের চেয়ে নিষ্পত্তির সংখ্যা এক চতুর্থাংশ