‘বড় সূচনার প্রথম পদক্ষেপে’ বাংলাদেশ ও ভারত

রুপিতে বাণিজ্য শুরু ।। ভারতে রপ্তানি করে তবেই নিতে হবে আমদানির রুপি

| বুধবার , ১২ জুলাই, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ডলার সংকটের দুনিয়ায় লেনদেন নিষ্পত্তির বিকল্প তৈরির চেষ্টায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে রুপিতে লেনদেনের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ ও ভারত। গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে এ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রুপিতে বাণিজ্য নিষ্পত্তি শুরুর বিষয়টিকে একটি ‘বড় সূচনার প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ঝুড়িতে থাকা ডলারের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনবে রুপির লেনদেন। বড় কোনো যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ এটি। সামনের দিকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে আরো বৈচিত্র্য নিয়ে আসবে আজকের এই উদ্যোগ। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, রুপিতে আমদানিরপ্তানি শুরু হওয়ায় দুই দেশের বন্ধুত্ব ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন হলো। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের পঞ্চম বাণিজ্যিক অংশীদার। রুপিতে বাণিজ্য নিষ্পত্তি দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করল। রুপিতে লেনদেন শুরু আমাদের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে উন্নয়ন ও অভিন্ন সংস্কৃতির ঘোষণার বিষয়টিই প্রমাণ করে।

গতকাল ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে রুপিতে ভারত থেকে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। বগুড়ার কোম্পানি তামিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ ভারতীয় রুপির পণ্য কেনার জন্য ভারতীয় আমদানিকারকের এলসি খোলার মধ্য দিয়ে হয় প্রথম লেনদেন।

স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ঢাকা শাখার মাধ্যমে এ রপ্তানি করা হয়। ভারতের আমদানিকারক ঋণপত্র (এলসি) খোলে দেশটির আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রুপিতে প্রথম আমদানি করে নিটা কোম্পানি। এসবিআই ঢাকা শাখার মাধ্যমে তারা এক কোটি ২০ লাখ রুপির পণ্য আমদানির আদেশ দেয়। এসবিআইয়ের মুম্বাই শাখা পণ্য আমদানিতে ভারতে প্রতিনিধি ব্যাংক হিসেবে কাজ করবে। প্রথম আমদানিরপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি হিসেবে কোম্পানিগুলোর মালিকদের অনুষ্ঠানে দেওয়া হয় স্মারক উপহার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, রুপিতে বাণিজ্য নিষ্পত্তি হওয়ায় আমাদের ডলারের সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় করলে যে আর্থিক ক্ষতি হয় তা আর হবে না। এটি শুধু লেনদেন নয়, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে আরো বৈচিত্র্য নিয়ে আসবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ সবসময় ভারতকে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও। শুধু পণ্য আমদানিতে নয়, সেবা, ভ্রমণ ও অন্যান্য খাতেও রুপি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে আমাদের কাজে লাগতে হবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে।

বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেন সহজ করতে এবং ব্যয় সাশ্রয়ে বিকল্প মুদ্রা চালুর উদ্যোগ নিতে গত কয়েক মাস ধরে ভারত ও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলে। সেই ধারাবাহিকতায় সীমিত পরিসরে রুপিতে লেনদেন শুরু হলো। এর ফলে উভয় দেশের উদ্যোক্তাদের বাণিজ্য খরচ কমে আসার পাশাপাশি ডলার নির্ভরতাও কিছুটা কমে আসবে বলে আশা করছেন ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

শুরুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও আইসিআইসিআই ব্যাংক রুপিতে বাণিজ্য লেনদেন নিষ্পত্তিতে অংশ নিচ্ছে।

ভারতে রপ্তানি করে তবেই নিতে হবে আমদানির রুপি : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রুপিতে যে বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু হয়েছে, সেই লেনদেনের জন্য আলাদা করে রুপি কিনতে পারবে না এই দেশের ব্যাংক। গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) কান্ট্রি ম্যানেজার অমিত কুমার জানান, পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংক যে রুপি আয় করবে, তাই দিয়ে কেবল আমদানির দায় পরিশোধ করা যাবে। এই সীমা ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ঠিক করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ভারতে থাকা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকে রপ্তানির আয় যোগ হওয়ার পর স্থানীয় রপ্তানিকারককে টাকায় পণ্য মূল্য পরিশোধ করে দিবে বাংলাদেশের ব্যাংক। এটি হবে বাংলাদেশের আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) লেনদেন ব্যবস্থার মাধ্যমে।

ডলার রেফারেন্সে বিনিময় হার : প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে আপাতত টাকারুপির বিনিময় হার ঠিক হবে ইউএস ডলারকে রেফারেন্স ধরে। অমিত কুমার বলেন, যতদিন না টাকারুপির সরাসরি বিনিময় হার ঠিক করা হবে, ততদিন ডলারকে রেফারেন্স দর হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছিনতাইয়ের পর প্রতিবাদে সোচ্চার চক্রের হোতা
পরবর্তী নিবন্ধআফগানিস্তানকে উড়িয়ে সান্ত্বনার জয়