যে ব্যাট দিয়ে শচীন টেন্ডুলকার তার শততম সেঞ্চুরিটা করেছিলেন সেটি কি দেখতে চান? যে ব্লেজারটা পড়ে স্যার ক্লাইভ লয়েড় প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন সেটিও দেখা যাবে। মুরালীধরন, ওয়াসিম আকরাম, শেন ওয়ার্ন যে বলে ৫০০ তম উইকেট নিয়েছিলেন সে সবও রয়েছে সংগ্রহে। মহেন্দ্র সিং ধোনির বিশ্বকাপ জয়ী ম্যাচের জার্সিটাও রাখা হয়েছে সযতনে। এরকম একটি, দুটি কিংবা চার/ পাঁচশ নয়। এরকম ৭৫ হাজার স্মৃতি স্মারক রয়েছে একটি ঘরে। আর সে সব স্মারক যেন তেন ক্রিকেটারের নয়। বিশ্বের সব নামী দামি এবং তারকা ক্রিকেটারের। যেখানে টেন্ডুলকার, শেন ওয়ার্ন, ক্লাইভ লয়েড়, বিরাট কোহলি, কুমার সাংগাকারা, ওয়াসিম আকরাম, ব্রেট লি, এমন হাজারো ক্রিকেটারের স্মরণীয় ম্যাচের সবকিছু সাজানো আছে একেবারে সযতনে। আর এ সব পাওয়া যাবে ভারতের পুনের বিশ্বের সবচাইতে বড় ক্রিকেট মিউজিয়াম “ব্লেইডস অব গ্লোরি” খ্যাত ক্রিকেট মিউজিয়ামে। পুনে শহরের খব কাছেই গড়ে তোলা হয়েছে এই বিশ্ব সেরা ক্রিকেট মিউজিয়াম। আর এই মিউজিয়ামটি যিনি গড়েছেন তিনি কোন ক্রিকেটার ছিলেন না। কিংবা ক্রিকেটের সাথে সংশ্লিষ্টও নন। রোহান পাটে নামক এই ব্যাক্তি একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। অনেকটা শখের বসে ২০১২ সালে এই জাদুঘর শুরু করেন। এখন সেটি বিশ্বের সবচাইতে বড় ক্রিকেট জাদুঘর। যেখানে রয়েছে বিশ্বের সব নামি দামি ক্রিকেটারের স্মরনীয় সব সামগ্রী। যে সব সামগ্রী দিয়ে এসব ক্রিকেটাররা বিশ্ব সেরা হয়েছেন। একজোড়া প্যাড আর একজোড়া জুতা দেখা গেল একেবারেই ছিঁড়ে গেছে। কিন্তু সত্যি হচ্ছে এই ছেঁড়া দুটি সামগ্রী দিয়ে ৩০ টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন টেন্ডুলকার। এমন গৌরবের জিনিস স্থান পেয়েছেন সেখানে। ক্রিকেটে একশটি সেঞ্চুরি রয়েছে টেন্ডুলকারের। আর সে সেঞ্চুরি গুলো কখন, কোথায়, কার বিপক্ষে এবং কত রান করেছেন সে সব লিখে একশটি ব্যাট সাজিয়ে রাখা হয়েছে জাদু ঘরটিতে। এই টেন্ডুলকারই জাদু ঘরটি উদ্বোধন করেন। তাই টেন্ডুলকারকে নিয়ে রয়েছে একটি আলাদা কর্নার। তেমনই আলাদা কর্নার রয়েছে বিরাট কোহলির জন্য। যেখানে তার বিশ্ব সেরা হওয়ার পথে যে সব মাইল স্টোন অতিক্রম করেছেন, সে সব মাইলস্টোন অতিক্রম করতে যে সব সামগ্রী ব্যবহার করেছেন সে সব সাজিয়ে রাখা হয়েছে এই জাদুঘরে।
টেস্ট ক্রিকেটে তিনশ, চারশ কিংবা পাঁচশ উইকেট নিয়েছে যে সব ক্রিকেটার। তাদের সে সব মাইলস্টোনের স্মারক বল গুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে আলাদা আলাদা ভাবে। যে সব ক্রিকেটার ওয়ানডেতে দশ হাজার রান করেছেন, সে সব ক্রিকেটারের ব্যাট গুলোও সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বিশ্বের গ্রেট সব ক্রিকেটাররা যেসব ক্যাপ পড়তেন তার অনেকগুলোই শোভা পাচ্ছে এই জাদুঘরে। যেসব দল এ পর্যন্ত বিশ্বকাপর জিতেছে সে সব দলের বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটারদের স্বাক্ষর করা ব্যাট গুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে এখানে। যে সব ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন যে ব্যাট দিয়ে তাদের সে ব্যাট গুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে অতি যত্ন সহকারে। বিরাট কোহলির পুরো ক্যারিয়ারটাই যেন একেবারে চোখের সমানে তুলে ধরা হয়েছে। তার ক্যারিয়ারটা নিয়মিতই আপডেট করা হয় সে জাদুঘরে। লর্ডসে ঐতিহাসিক জয়ের স্মারক সৌরভ গাঙ্গুলীর জার্সিও রয়েছে সেখানে। ভারতীয় ক্রিকেটের জার্সির বিবর্তনও তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। কখন কোন ধরনের এবং কোন কাপড়ের জার্সি পড়তো ভারতীয় দল সেটা দেখতে পাওয়া যাবে এই জাদু ঘরে। যে সব সামগ্রী গুলো এই জাদু ঘরে রাখা হয়েছে হয়েছে সেগুলো এ সব ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারের একেবারেই মূল্যবান স্মারক। যে বল দিয়ে ৫০০ উইকেট পাওয়া, যে ব্যাট দিয়ে দশ হাজার রান পুরন করা, কিংবা যে গ্লাভস পড়ে বিশ্বকাপ জেতার ম্যাচ বা ফাইনাল ম্যাচ খেলা। সে সব কিছু একেবারে সে সব ক্রিকেটারদের স্বাক্ষর সহ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পুরো বিশ্ব ক্রিকেটের সব মহা তারকাদের যেন এক ছাদের নিচে নিয়ে এসেছে এই জাদু ঘর। বিশ্ব্ তারকাদের কাতারে যাওয়া এখনো হয়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। তাই বলে এই জাদুঘরে বাংলাদেশ থাকবেনা তা কি হয়। এখানে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটও। যেখানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের জার্সি। শুধু তাই নয় ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে দলটি খেলেছিল সে দলের সদস্যদের স্বাক্ষর করা একটি ব্যাটও রয়েছে এই ক্রিকেটের সর্ব বৃহৎ জাদু ঘরে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের জার্সিও রয়েছে এই জাদু ঘরে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সিতে নানা সময় যে পরিবর্তন এসেছে তার অনেক গুলো রয়েছে এই সংগ্রহশালায়। বলা যায় ক্রিকেটের সব তারকাকে যেন একই ছাদের নিচে নিয়ে এসেছে এই জাদুঘর। যদিও জাদু ঘরে ভারতীয়দের আধিক্য বেশি, তবে বাদ যায়নি কোন দেশ বা কোন তারকা। ওয়াসিম আকরাম যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন ইনজামাম, ওয়াকার, ইমরান কিংবা ইউনিস খানও। ভিভ রিচার্ডস, ডেসমন্ড হেইন্স, ব্রায়ান লারা, মার্ক টেইলর, স্টিভ ওয়াহ, ব্রেট লি, জয়সুরিয়া, সাঙ্গাকারা, কার স্মারক নেই এই জাদু ঘরে। ক্রিকেটের সম্পর্কে যারা খোঁজ খবর রাখেন বা ক্রিকেট সম্পর্কে যারা জানতে চান তাদের জন্য এই জাদু ঘর বিশাল ভূমিকা রাখবে সেটা বলা যায় নিঃসন্দেহে। এই জাদু ঘর প্রতিষ্ঠা যিনি করেছেণ সেই রোহান পাটে কিস্তু কোন ক্রিকেট দলের সাথেও জড়িত নেই। তবে এই জাদু ঘরের সুবাধে বিশ্বের সব তারকা ক্রিকেটারদের সাথে তার বেশ সখ্যতা। সু সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সাথেও। তামিম ইকবালের সাথে বেশ ভাল সম্পর্ক তার। তামিম সম্পর্কে জানেনও অনেক কিছু। ভব্যিষতে এই জাদুঘরকে একটি ফ্ল্যাট থেকে বের করে আরো বড় পরিসরে করা পরিকল্পনার কথাও জানালেন রোহান পাটে।