চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া মেগা প্রকল্পের ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বাড়ছে। প্রকল্প ব্যয় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা থেকে দশ হাজার কোটিরও বেশি টাকায় উন্নীত হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ছে। প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর নতুন করে কিছু কাজ বাড়া এবং ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা থেকে মহানগরীকে রক্ষা করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল সংস্কার, খনন এবং সম্প্রসারণ ছাড়াও খাল দখল করে থাকা প্রায় ৩ হাজার ১৫০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার কাজ রয়েছে। খাল ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার ২৪০ কিলোমিটার নালা পরিষ্কার, খালের পাড়ে ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, খালগুলোর এক পাশে ১৫ ফুট চওড়া রাস্তা এবং অপর পাশে ৫ ফুট ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ৫৪টি ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত পাঁচটি খালের মুখে স্লুইচগেট নির্মাণের কাজ রয়েছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। ২০১৭ সালে নেওয়া প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২০ সালের জুনে প্রকল্প মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়। সরকার এক বছর মেয়াদ বাড়ায়। এতে করে চলতি জুনেই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সিডিএ ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির কাজ পঞ্চাশ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটিতে ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকার কাজ সেনাবাহিনীকে করার দায়িত্ব দিয়েছে সিডিএ। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কাঠা ভূমি অধিগ্রহণের খরচ বাবদ ১৭শ কোটি টাকা রাখা হয় সিডিএর হাতে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার ব্যয় এখন দশ হাজার কোটিরও বেশি টাকায় উন্নীত হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ভূমি অধিগ্রহণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে ১৭শ কোটি টাকা। এই প্রকল্প গ্রহণকালে ভূমি অধিগ্রহণের খরচ ছিল মৌজা রেটের দেড় গুণ। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার তা বাড়িয়ে তিন গুণ করে। ফলে প্রকল্পটিতে ভূমি অধিগ্রহণের খরচ প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে। এছাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে আলোচনা করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে বেশ কিছু কাজ বাড়তি করতে হচ্ছে। নতুন করে এসব কাজ প্রকল্পটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে। সবকিছু মিলে প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় দ্বিগুণে উন্নীত হচ্ছে।
প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। এই মেয়াদ আগামী এক বছর বাড়ানোর জন্য নতুন করে প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০ জুন ঢাকায় প্রকল্পটি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়বে বলে সূত্র আভাস দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর্থিক সমস্যা ছিল। প্রয়োজনীয় টাকা পেতে সমস্যা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ১৭শ কোটি টাকা, যা প্রকল্পের ৩১ শতাংশ। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে ৫০ শতাংশ। টাকার অভাবে বিভিন্ন এলাকায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ঠিকাদারদের বিল আটকে রয়েছে। করোনাকালে প্রকল্পটি নতুন সংকট মোকাবেলা করেছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের সিডিএর প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মইনুদ্দীন আজাদীকে বলেন, প্রকল্প নিয়ে নতুন করে হিসেব করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী তাদের কাজের খরচ হিসেব করছে। আমাদের এখনো জানায়নি। তবে প্রকল্প ব্যয় বাড়বে, এটা জানিয়েছে। শুধু ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, প্রকল্পটির মেয়াদ এবং ব্যয় দুটোই বাড়ছে। ভূমি অধিগ্রহণ এবং কাজ বৃদ্ধি করায় খরচ বাড়ছে বলে জানান তিনি।