২০০৮ থেকে ২০২৩ । এই ১৬ বছরে ব্যালণ ডি’অরের তালিকায় যুক্ত ছিল লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নাম। যেখানে আবার মেসি জিতেছেন ৮ বার এবং রোনালদো জিতেছেন ৫ বার। মাঝখানে লুকা মদ্রিচ এবং করিম বেনজেমা ভাগ না বসালে টানা ১৬ বছরই এই ট্রফি যেত মেসি বা রোনালদোর ঘরে। তবে এবারে অবসান হয়েছে মেসি–রোনালদোর যুগের। তবে সেটি এই দুই তারকা ফুটবলার ইউরোপ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায়। না হয় মেসির যা পারফরম্যান্স এবারেও হয়তো তার ঘরেই যেতো এই ব্যালণ ডি’অর। তবে দীর্ঘ ৬৪ বছর পর মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি জিতলেন স্পেনের কোনো পুরুষ ফুটবলার। সবশেষ ১৯৬০ সালে জিতেছিলেন লুইস সুয়ারেস। এতদিন স্পেনে জন্ম নেওয়া একমাত্র ব্যালন ডি’অর জয়ী ছিলেন বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলানের সাবেক এই মিডফিল্ডার। এবার তার পাশে বসলেন আরেক মিডফিল্ডার। তার নাম রদ্রি। তিনি ইংলিশ লিগে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে খেলেন। আর ম্যানচেস্টার সিটির প্রথম ব্যালন ডি’অর জয়ীও রদ্রি। প্যারিসে সোমবার রাতে জমকালো অনুষ্ঠানে ২৮ বছর বয়সী রদ্রির হাতে তুলে দেওয়া হয় ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’ এর পুরস্কার, ব্যালন ডি’অর। ইনজুরির কারণে বর্তমানে মাঠের বাইরে থাকা এই ফুটবলার ক্রাচে ভর দিয়ে মঞ্চে ওঠেন পুরস্কার নিতে। তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন ১৯৯৫ সালের বিজয়ী ও লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ইন্টার মিলানের সাবেক ফুটবলার জর্জ ওইয়াহ।
তবে এবারের ব্যালন ডি’অর পুরষ্কার ঘোষণার আগে কয়েক ঘণ্টার নাটক হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদের অনুষ্ঠান বয়কট এবং তুমুল আলোচনা–সমালোচনার পর ঘোষণা করা হলো ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম। রিয়ালের ব্রাজিলীয়ান তারকা ভিনিসিউস জুনিয়রকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারটি জিতলেন ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার রদ্রি। আর সে সাথে ফুরাল তার দেশ স্পেনের ছয় দশকের বেশি সময়ের অপেক্ষাও। এবার ব্যালন ডি’অরের জন্য অনেকেই এগিয়ে রাখছিলেন ভিনিসিউসকে। পুরস্কারটি তার ‘প্রাপ্য’ বলেও মনে করছিলেন কেউ কেউ। গত মৌসুমে রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দলের ২–০ ব্যবধানের জয়ে একটিসহ আসরে তিনি করেন ৬ গোল। নির্বাচিত হন আসরের সেরা খেলোয়াড়। ২০২৩–২৪ মৌসুমে লা লিগায় তিনি করেন ১৫ গোল। এছাড়া স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪–১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে করেন হ্যাটট্রিক। জুন–জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকায় জাতীয় দল ব্রাজিলের হয়ে গ্রুপ পর্বে ভিনিসিউস জোড়া গোল করেন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। কার্ডের খাড়ায় কোয়ার্টার–ফাইনাল খেলতে পারেননি তিনি। ওই ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। সোমবার ভোটাভুটির ভিত্তিতে ব্যালন ডি’অরের ১২ জনের একটি তালিকা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে সবার ওপরে দেখা যায় ভিনিসিউসের নাম। এর খানিক পরই ছড়িয়ে পড়ে বিস্ফোরক এক খবর। সূত্রের বরাত দিয়ে ইএসপিএন জানায়, ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানের জন্য প্যারিসে যাচ্ছেন না রিয়াল মাদ্রিদের কেউ। কারণ ক্লাবটি বুঝতে পেরেছে, ভিনিসিউস নয়, বর্ষসেরার পুরস্কারটি পাচ্ছেন রদ্রি। রদ্রির পারফরম্যান্সও বেশ উজ্জ্বল ছিল গত মৌসুমে। ম্যানচেস্টার সিটির টানা চতুর্থ প্রিমিয়ার লিগ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। গত জুলাইয়ে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে স্পেনের শিরোপা জয়েও এই স্প্যানিয়ার্ড রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ইনজুরির কারণে ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধে না খেলেও জিতেন টুর্নামেন্টের সেরার খেলোয়াড়ের পুরস্কার। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে আসরে দলের সাত ম্যাচের সবগুলোতেই শুরুর একাদশে থেকে মাঝমাঠে সুর বেঁধে দেন তিনি। একটি গোল করেন শেষ ষোলোয় জর্জিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। ম্যানসিটির হয়ে ২০২৩–২৪ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫০ ম্যাচে তিনি গোল করেন ৯টি। এছাড়া অবদান রাখেন সতীর্থদের ১৪ গোলে। এদিকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়েদের ব্যালন ডি’অর জিতেছেন বার্সেলোনার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আইতানো বনমাতি। গত মৌসুমে বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লিগা এফ, কোপা দেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। স্পেনের নেশন্স লিগ জয়েও তার ছিল উল্লেখযোগ্য অবদান। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ২০২৩–২৪ মৌসুমে ২৬ গোল করার পাশাপাশি তিনি অ্যাসিস্ট করেন ১৮টি।