আগের দিন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক বলেছিলেন দ্বিতীয় দিনে সাড়ে তিনশর মধ্যে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে অল আউট করতে চায় বাংলাদেশ। অধিনায়কের চাওয়াকে আরো সহজ করে দিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। সাড়ে তিনশ পর্যন্ত যেতে দেয়নি স্বাগতিকদের। ৩২৮ রানেই থামিয়ে দিয়েছে কিউইদের। জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আরো উজ্জ্বল করেছে দিনটাকে। দিনের একেবারে শেষভাগে নাজমুল হোসেন শান্ত আউট না হলে আরো রঙ্গিন হতে পারতো দিনটা। দ্বিতীয় দিন শেষ ২ উইকেটে ১৭৫ রান করেছে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সচরাচর উল্টো পথেই হাটে। তাছাড়া নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়াটা যেকোন দলের জন্যই কঠিন। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। নিউজিল্যান্ড যখন নিজেদের উইকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেয় তখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রানের জন্য মাথা কুড়ে মরে। আবার বোলাররা যখন মুড়ি মুড়কির মত উইকেট তুলে নেয় তখন বাংলাদেশের বোলাররা বল ফেলার জায়গা খুঁজে পায় না। তবে এবারের সফরে একেবারে ব্যতিক্রম এক বাংলাদেশকে দেখা যাচ্ছে। প্রথম দিনেই শরীফুল, এবাদতরা চাপে রেখেছিল নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের। প্রথম দিন শেষে স্বাগতিকরা করেছিল ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রান।
গতকাল দ্বিতীয় দিনের সকাল থেকে বাংলাদেশের বোলাররা তাদের দাপট ধরে রাখে। দিনের শুরুতেই আঘাত হানেন শরীফুল। তিনি ফেরান রাচিন রবীন্দ্রকে। দলের খাতায় তখন যোগ হয়েছে মাত্র ৭ রান। এরপর বল হাতে এসে জেমিসনকে ফেরান মিরাজ। পরের ওভারে পরপর দুই বলে সাউদি এবং ওয়াগনারকে ফিরিয়ে হ্যাট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন মিরাজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করছিলেন হেনরী নিকোলস। শেষ পর্যন্ত টাইগার অধিনায়ক এসে তাকে ফেরানোর গুরু দায়িত্বটা পালন করলেন। আগেরদিন সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়েকে ফেরানো মোমিনুল গতকাল নিকোলসকে ফিরিয়ে যবনিকা টেনে দেন নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের। শেষ ৫ উইকেটে মাত্র ৭০ রান যোগ করতে পেরেছে স্বাগতিকরা। শেষের পাঁচ ব্যাটসম্যানের কেউই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেনি। বাংলাদেশের পক্ষে সফল বোলার শরীফুল ৬৯ রানে নেন তিন উইকেট। ৮৬ রানে তিন উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মোমিনুলের শিকার নিউজিল্যান্ডের দুই সেরা ব্যাটসম্যান।
নিউজিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে অল আউট করার স্বস্তি নিয়ে নিজেদের ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশের দুই ওপেনার বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে শুরু করেছিলেন। সাদমান এবং মাহমুদুল হাসান জয় দারুণভাবে সামাল দিচ্ছিলেন কিউইদের পেস আক্রমণ। যদিও ৪৩ রানের বেশি ছিল না বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। ২২ রান করে ফিরেন সাদমান। তিনি ফিরতি ক্যাচ দেন ওয়েগনারকে। এরপর দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মাহমুদুল হাসান জয়। শতরানের জুটি গড়ে শান্ত এবং জয় অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেটা আর হয়নি। হঠাতই ধৈর্যচ্যুতি ঘটে শান্তর। ওয়াগনারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ১০৯ বলে ৬৪ রান করে। ৭ চারের পাশাপাশি বিশাল একটি ছক্কাও মেরেছেন শান্ত। যে ছক্কা দিয়ে তিনি পূরণ করেন তার হাফ সেঞ্চুরি। তবে আস্থায় অবিচল ছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টেস্টে ধৈর্যশীল ও স্থিতধী ব্যাটিংয়ের অসাধারণ প্রদর্শনী করেছেন জয়। তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। দিন শেষ করেছেন ২১১ বলে ৭০ রান করে। নিউজিল্যান্ডে এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ওপেনার খেলতে পেরেছে ২০০ বল। জয় তার ইনিংসে মেরেছেন ৭ চার। যদিও ২০ রানের মাথায় ফিরতে পারতেন জয়। কিন্তু নিউজিল্যান্ড রিভিও না নেওয়ায় সে যাত্রায় বেঁচে যান বাংলাদেশের এই তরুণ। তবে জয় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যে দৃঢ়তা দেখিয়েছে সেটা ছিল অন্য ব্যাটসম্যানদের জন্য অনুকরণীয়। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় উইকেট আঁকড়ে রেখে তিনি ধরে রাখেন দলের হাল। সফল হ্যান্ডে প্রতিপক্ষ পেসারদের বাউন্স সামলানোর দক্ষতাও ছিল দেখার মতো। অধিনায়ক মোমিনুলকে নিয়ে আজ আবার ইনিংস শুরু করবেন মাহমুদুল হাসান জয়। দ্বিতীয় দিনের মত তৃতীয় দিনে নিউজিল্যান্ড বোলারদের সামনে কতটা প্রতিরোধ গড়তে পারে এই তরুণ সেটাই এখন দেখার বিষয়।