ব্যাটারি রিকশা ছিনতাইয়ের জন্যই কি খুন!

বাবু পেশায় দর্জি, শখের বসে কেনা রিকশাটি চালান নিজে সেগুন বাগান থেকে মরদেহ উদ্ধার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

আবদুর রহিম বাবু (৫২) পেশায় দর্জি। শখের বসে তিন মাস আগে একটি ব্যাটারি রিকশা কিনেন। এটি ভাড়া দিয়ে দিনে আয় হয় ৬০০ টাকা। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই চালক (যাকে ভাড়া দেওয়া হয়) রিকশাটি আর চালাতে পারবে না বলে জানিয়ে দেন। শেষে বাধ্য হয়ে নিজেই রিকশা চালানো শুরু করেন। সেই রিকশা নিয়ে গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় নগরের চকবাজার থানার দেবপাহাড় এলাকার বাসা থেকে বের হন তিনি। এরপর রাত পেরিয়ে গতকাল রোববার সকাল হলেও বাবু বাসায় না ফেরায় উৎকণ্ঠিত হন তার পরিবারের সদস্যরা। এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খুলশী ঝাউতলা সেগুন বাগান এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে মরদেহটি আবদুর রহিম বাবুর। এ সময় সেখানে পাওয়া যায়নি তার রিকশাটি। পুলিশের ধারণা, ব্যাটারি রিকশা ছিনতাইয়ের জন্য বাবুকে খুন করা হতে পারে। পুলিশ জানায়, লাশ উদ্ধারের সময় বাবুর মরদেহের হাত গলার সাথে প্লাস্টিকের রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ছিল। এছাড়া তার চোখ এবং মুখে স্ক্রচটেপ মোড়ানো ছিল। তার ডান হাতে একটি লাল রঙের হাতমোজা ছিল। বাঁ হাত ছিল খালি।

জানা গেছে, বাবুর গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী উজেলার চাঁনপুরে। তার বাবা মৃত বাচা মিয়া। ২০০৫ সালে বিয়ে করেন দেবপাহাড় এলাকায় বেড়ে ওঠা সাবিনা বেগমকে। সেই থেকে দেবপাহাড়েই স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। সর্বশেষ দেবপাহাড় ইমতিয়াজের বাসায় ভাড়ায় থাকেন। দেবপাহাড় ৭ নং রোডে রয়েছে স্বামীস্ত্রীর টেইলার্স। এ দম্পত্তির একমাত্র ছেলে মো. এনায়েত একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।

গতকাল দেবপাহাড়ে বাবুর বাসায় উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, স্বামী হারানো স্ত্রীর আর্তনাদ। স্বজনরা ঘিরে ধরে তাকে দিচ্ছিল সান্ত্বনা। বাবার জন্য কাঁদছিল এনায়েত।

বাবুর স্ত্রী সাবিনা আজাদীকে বলেন, বাবু পেশাদার রিকশাচালক না। প্রায় তিন মাস আগে শখের বসে ব্যাটারি রিকশাটি কিনে। একজন তাকে লোভ দেখিয়েছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে রিকশা কিনে ভাড়া দিলে দৈনিক ৬০০ টাকা ভাড়া পাওয়া যাবে। এরপর একজন রিকশাচালককে নিয়ে রিকশাটি কিনে আনে। ২০ দিন মতো চালানোর পর পুলিশ রিকশাটি নিয়ে যায়। ১১ দিন পর আবার ছাড়িয়ে আবার পূর্বের চালককে চালাতে দেয়। এর ২০/২৫ দিন পর পুলিশ আবার ধরে। এরপর ছাড়িয়ে আনলে ওই চালক আর রিকশা চালাতে পারবে না বলে জানিয়ে দেন। তখন আমি রিকশা বিক্রি করে দিতে বলি। কিন্তু সে (বাবু) বলে, কাস্টমার না পাওয়া পর্যন্ত চালাই।

স্বামী হত্যায় কাউকে সন্দেহ করছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, যে ছেলেটা রিকশা চালাত তাকে সন্দেহ করছি। সাথে আরেকজনকে সন্দেহ করছি। রিকশাচালকের সঙ্গে কোনো ঝগড়াবিবাদ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, সেটা আমি জানি না।

খুলশী থানার এসআই বেলাল খান আজাদীকে বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। হত্যাকারীকে ধরার জন্য আমাদের টিম কাজ করছে। তিনি বলেন, সকালে উদ্ধারের পর লাশটি মর্গে নেওয়া হলে সেখানে তার এক স্বজন চিনতে পারেন। পরে বাবুলের স্ত্রী এসে লাশ শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, লাশটি উদ্ধার করলেও ঘটনাস্থলে রিকশাটি পাওয়া যায়নি। তাই রিকশা ছিনতাই করতে তাকে খুন করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআতঙ্ক নয়, স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর বিশেষজ্ঞদের
পরবর্তী নিবন্ধষোলশহরে ছাত্রদল-যুবদলের সংঘর্ষ, আহত ৩