রাওয়ালাপিন্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বল হাতে রেকর্ড গড়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার তৃতয়ী দিনে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন ব্যাট হাতে। লিটন দাশকে নিয়ে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া দলকে টেনেই শুধু তুলেননি এদুজন গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড। দুর্দান্ত জুটিতে এমন এক কীর্তি গড়লেন এই দুজন, ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসের যে নজির আর নেই। ক্রিজে যখন জুটি বাঁধলেন দুজন, বাংলাদেশের ইনিংস তখন এলোমেলো। টপ ও মিডল অর্ডার একেবারেই বিধ্বস্ত। সেই ধ্বংসস্তূপেই একটু একটু করে ভিত গড়ে তুললেন লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের হাত ধরে একসময় এই সৌধ ছুঁয়ে ফেলল এমন উচ্চতা, টেস্ট ইতিহাসে যা করতে পারেনি আর কোনো জুটি। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর পথে দুর্দান্ত এই লড়াই দেখান লিটন ও মিরাজ। গতকাল রোববার সকালে খুররাম শাহজাদ ও মির হামজার দারুণ বোলিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আলগা ব্যাটিং মিলিয়ে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে ৬ উইকেট ২৬। সেখান থেকেই লিটন–মিরাজের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের শুরু। চাপের মধ্যেও খুব অস্বস্তি ছিল না তাদের ব্যাটিংয়ে। সাবলিল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন। ক্রমে সরে যায় চাপ। লাঞ্চের পরতো দারুণ সব শটও খেলতে থাকেন দুজন। দুজনের বন্ধন সেঞ্চুরি ছাপিয়ে এক পর্যায়ে পেরিয়ে যায় দেড়শ। ইতিহাসে নাম খোদাই হয়ে যায় দুজনের। ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট পড়ার পর টেস্ট ইতিহাসের প্রথম দেড়শ রানের জুটি এটিই প্রথম। ৭৮ রানে মিরাজের বিদায়ে এই জুটি থামে ১৬৫ রানে। আগের রেকর্ডটি ছিল আব্দুল রাজ্জাক ও কামরান আকমলের। ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে করাচিতে ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ১১৫ রান যোগ করেছিলেন পাকিস্তানের ওই দুই ক্রিকেটার। বাংলাদেশের চেয়ে কম রানে ৬ উইকেট হারিয়ে শতরানের জুটি টেস্ট ইতিহাসে আছে কেবল আর একটি। ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ১৮ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ঠিক ১০০ রানের জুটি গড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এনক্রুমা বনার ও জশয়া দা সিলভা।
এই সিরিজের আগের টেস্টেই প্রথম ইনিংসে সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড ১৯৬ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মিরাজ। এবার লিটন ও মিরাজ সেই জুটিকে ছাড়িয়ে যেতে না পারলেও আরেকটি রেকর্ড ঠিকই হয়েছে। একই সিরিজে সপ্তম উইকেটে দেড়শ রানের একাধিক জুটি এই প্রথম গড়ল কোনো দল। জুটির রেকর্ডের পাশাপাশি দারুণ একটি রেকর্ড গড়েছেন মিরাজ নিজেও। ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর আট নম্বরে ক্রিজে গিয়ে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ইনিংসটি এখন তারই। ৭৮ রানের ইনিংসে তিনি পেছনে ফেলেছেন পাকিস্তানের মইন খানকে। ১৯৯৯ সালে ভারতের বিপক্ষে কলকাতায় ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তান। আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সেবার ৭০ রানের ইনিংস খেলেন কিপার–ব্যাটার মইন। এবার তাকে ছাড়িয়ে মিরাজ করলেন ৭৮। লিটন ও মিরাজের রেকর্ড গড়া বীরত্বে শেষ পর্যন্ত বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ।