সাম্প্রতিক খবরে জানা গেছে, ব্যাংকের দেওয়া প্রণোদনায় প্রবাসী আয়ে গতি ফিরছে। অক্টোবর মাসের প্রথম ২৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ১৬৫ কোটি ডলার। এটি গত মাসের পুরো সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৩১ কোটি ডলার বেশি। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে ব্যাংকগুলো বাড়তি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে। এখন বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা মিলছে। ফলে প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১১৬ টাকার মতো, যা আগে মিলত সর্বোচ্চ ১১১ টাকা। এর ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি ফিরছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের পতন হয়। ওই মাসে রেমিট্যান্স আসে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলার, যা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই–সেপ্টেম্বর) হিসেবে রেমিট্যান্স কমে যায় প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। রেমিট্যান্সে এই ধস নামার পেছনে খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকের রেটের বিস্তর ফারাককে দায়ী করে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, খোলাবাজারে বেশি রেট মেলায় হুন্ডি পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে যাদের মাসিক আয় কম এবং যারা অবৈধ তারা হুন্ডিতেই টাকা পাঠাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স। এ কারণে গত ২১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এঙচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) যৌথসভায় ব্যাংকগুলো চাইলে রেমিট্যান্স আহরণে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাফেদা ও এবিবির ওই সিদ্ধান্ত গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
যদিও বাফেদা বলছে এই প্রণোদনা দেয়ার জন্য ব্যাংক বাধ্য নয়, ব্যাংক যদি প্রবাসী আয় কিনতে চায় তাহলে এই প্রণোদনা দিতে পারে। বাংলাদেশে আগে থেকেই রেমিট্যান্স প্রেরণকারী প্রতিটি পরিবার প্রবাস থেকে প্রেরণ করা অর্থের ওপর সরকারের কাছ থেকে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পেয়ে আসছে। এখন তার সঙ্গে এই বাড়তি প্রণোদনা যুক্ত হবে। ব্যাংক বা প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে লেনদেনে উৎসাহিত করা এবং চলমান ডলার সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ রেমিটেন্স বা প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো আয়।
তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স দেশে আনার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ ‘জোড়াতালি সমাধান’ এবং এই ধরনের উদ্যোগ নিয়ে রেমিট্যান্সের হার কিছুটা বাড়ানো সম্ভব হলেও সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হবে না। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, বৈধ চ্যানেলে আসা ডলার ও হুন্ডির মাধ্যমে আসা ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরনের পার্থক্য থাকার ফলে এই উদ্যোগ প্রবাসীদের মধ্যে খুব একটা উৎসাহ তৈরি করবে না।
তিনি বলেন, “ব্যাংক যদি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয়, তার পরেও ডলারের দাম হবে প্রায় ১১৬ টাকা। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে এখনই ডলারের দাম ১১৯ থেকে ১২০ টাকার মত। তাহলে কেন মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাবে?” ব্যাংকগুলো তাদের সিএসআর ফান্ড বা সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে প্রবাসী আয় কেনার জন্য প্রণোদনা দেয়ার কথা বলেছে। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, ব্যাংকগুলো তাদের সিএসআর ফান্ডের পুরো অর্থ ব্যয় করলেও রেমিট্যান্স প্রবাহে খুব বেশি হেরফের হবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতিবছর অর্থ প্রেরণকারী সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করে প্রয়োজনে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা গেলে কর্মীরা বৈধপথে টাকা প্রেরণ করতে উৎসাহিত হবে। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী কর্মীদের মধ্যে থেকে শ্রেষ্ঠ ১০/১৫ জন রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ অর্থ প্রেরণকারী এইসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে অর্থ পুরস্কার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ ফান্ডে গচ্ছিত অর্থ থেকে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। তাহলে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি আরো বাড়ানো সম্ভব হবে। প্রবাসী আয়ের ধীরগতি কাটিয়ে রিজার্ভ আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। প্রবাসী আয়ের গতি বাড়াতে এ ধরনের উদ্যোগ দরকার।