ঈদকে ঘিরে ছিনতাইকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। ধরা পড়ছে কেউ কেউ। কিন্তু ছিনতাইকারীদের বেপরোয়া গতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের। পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর রমজান শুরুর আগে থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ঈদের আগে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। সেজন্য এবার আমরা আগেভাগেই বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ঈদের ছুটি শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাড়তি তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
নগরীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসি আজাদীকে বলেন, মূলত ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো এবারও কয়েকটি ছিনতাইকারী গ্রুপ নগরীতে সক্রিয় হয়েছে। ঈদের আগে বেতন-বোনাস দেওয়া হয়, মার্কেটে লোকজনের ভিড় বাড়ে। ব্যাংক কিংবা এটিএম বুথ থেকে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ টাকা তোলা হয়। এজন্য ছিনতাইকারীরা ব্যাংক এবং এটিএম বুথের সামনে ঘোরাফেরা করে। টাকা তুলে গ্রাহক বের হওয়ার পর তাকে টার্গেট করে। এছাড়া বিভিন্ন মার্কেট-শপিংমলের সামনে থাকে সন্ধ্যার পর। বাজার শেষে বেরিয়ে রিকশায় ওঠার পর নারীদের গলার চেইন, ভ্যানিটি ব্যাগ টান দিয়ে পালিয়ে যায়।
কোতোয়ালী থানা পুলিশ গত বৃহস্পতিবার (৬ মে) রাতভর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, বুধবার দুপুরে নগরীর ফিরিঙ্গীবাজার ব্রিজঘাট এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার রিদুয়ানুল আলমের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানে নেমে এ ১০ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- বেলাল হোসেন রুবেল (৩০), মেহরাজ হোসেন রাকিব (২৫), হাবিবুর রহমান কায়সার (২২), শরীফ হোসেন (২০), মো. জয় (২১), মো. রুবেল (২০), সাইফুল ইসলাম (২১), সাদ্দাম হোসেন (২৯), রাসেল প্রকাশ রাকিব (১৯) এবং মো. ইয়াকুব (১৯)। তাদের থেকে এলজি-ছোরাসহ ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেলালের বিরুদ্ধে ৪টি, রাকিবের ৫টি, সাদ্দামের ১টি, কায়সারের ৪টি, শরীফের ২টি, জয়ের বিরুদ্ধে ১টি ও সাইফুলের বিরুদ্ধে ২টি মামলা আছে। বেশির ভাগই দস্যুতা, ছিনতাই, অস্ত্র আইনে।
গত ৪ মে কোতোয়ালী থানা পুলিশ ৩টি ছোরাসহ ছিনতাইকারী চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৩ কিশোরও রয়েছে। মঙ্গলবার (৪ মে) রাত সাড়ে ১১টায় নিউমার্কেট পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
চান্দগাঁও থানা পুলিশ ছিনতাই চক্রের চার সদস্যকে বাড়ইপাড়া হাজীরপুল খালপাড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে গত ২৬ এপ্রিল। এসময় দেশীয় অস্ত্র ও বেশ কিছু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। সিএমপি উত্তর বিভাগের এডিসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় বিভিন্ন ধারায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। ২১ এপ্রিল নগরীর চান্দগাঁও থানার ওমর আলী মাতব্বর রোড থেকে ছোরাসহ মো. আশিক (১৯) ও মো. মামুন (২০) নামের দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি ধারাল টিপ ছোরা উদ্ধার করা হয়।
একই দিন নগরীর আকবরশাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকায় অভিযান চালিয়ে টিপ ছোরা ও ইয়াবাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন জানান, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
বায়েজিদ বোস্তামি থানাধীন চন্দ্রনগরের একটি নির্মাণাধীন ভবনের সামনে ২০ হাজার টাকাসহ তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। ২১ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড এলাকা থেকে ২০ এপ্রিল দেশী অস্ত্রসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিএমপি গোয়েন্দা বিভাগ।
সেহেরির পর কাভার্ড ভ্যান চালক স্বামীকে বিদায় জানাতে আসলে ছিনতাইকারীরা ১৯ এপ্রিল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনিয়ে নেয় গৃহবধূর টাকা ও মোবাইল। ঘটনার পর পরই গৃহবধূ নুর জাহান বেগমের অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে চার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ থানা পুলিশ।