আকবর হোসেন। স্নাতক পাশ করেছেন ২০০২ সালে। এরপর চাকরির পিছনে ছুটতে থাকেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। শুরু করেন পোল্ট্রি ব্যবসা। সেখানেও ব্যর্থ। হতাশ হয়ে পড়েন। ফলে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন প্রবাসে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি এখানেও। এত ব্যর্থতার পর আকবর তীব্র হতাশ হয়ে পড়েন, কিন্তু ভেঙে পড়েননি। ফের শুরু হয় সংগ্রাম। ২০১৮ সালে বাড়ির পূর্বপাশের পাহাড়ে তিন একর জায়গা লিজ নিয়ে সমন্বিত ফলের বাগান গড়ে তোলেন। নাম দেন ফিউচার এগ্রো হোমস। বাগান করার আগে আকবর কোথাও থেকে কোনো প্রশিক্ষণ নেননি। ইউটিউব দেখে সমাধান করেছেন বাগানের সকল সমস্যা। জেনেছেন নতুন নতুন প্রজাতির চারা রোপণ ও পরিচর্যা সম্পর্কে।
এভাবে টানা তিন বছরের দৃঢ় মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমের কারণে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের খিলমুরারী গ্রামের আকবর এখন সফল উদ্যোক্তা। তার গড়ে তোলা ফিউচার এগ্রো হোমস এখন স্বাবলম্বী হতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে এলাকার অন্য বেকার যুবকদেরও। আকবর জানান, তার বাগানের ফরমালিনমুক্ত সুস্বাধু ফলের দারুণ চাহিদা রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এতে তিনি বছরে প্রায় ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেন তার বাগান থেকে।
সরেজমিনে আকবরের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, উঁচু নিচু পাহাড় ও ঢালুতে গাছের মধ্যে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো মাল্টা। গাছে রয়েছে পাকা ও আধ পাকা পেঁপে। ফলন এসেছে কমলা গাছেও। পাহাড়ের বুকে আকবরের একখণ্ড ফলের বাগান দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউই।
বাগানে বর্তমানে রয়েছে ২৫০ পিস বারি-১ ও বাউ গ্রিন মাল্টা, ২০০ পিস রেডলেডি পেঁপে, ৬০ পিস কমলা, ১০০ পিস থাই পেয়ারা, ১০০ পিস লেবু, ৩ পিস আপেল, ৩ পিস আলু বোখরা ও কিছু চায়না-৩ লিচু, ব্যানানা ম্যাংগো, কিউজাই, মিয়াজাকি, ব্ল্যাক স্টোন, ব্রুনাই কিংসহ অন্যান্য প্রজাতির ২০০ পিস আমের চারা। আকবর জানান, ২০১৯ সালে প্রায় ৭০ হাজার টাকার পেঁপে ও ৪০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন। তার বাগানে ২০২০ সালে মাল্টা উৎপাদন হয় দেড় টন। চলতি বছর মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ টন। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে এবার ৬-৭ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছেন তিনি।
আকবর বলেন, ইউটিউবই আমার সফলতার প্রথম সোপান। উন্নত দেশগুলোতে যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের কৃষকরা উচ্চ শিক্ষিত। তাই আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরির আশা না করে উদ্যোক্তা হওয়ার অনুরোধ করবো।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, আমি আকবর হোসেনের গড়ে তোলা ফিউচার এগ্রো হোমস সম্প্রতি পরিদর্শন করেছি। সবসময় তাকে নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছি। তার বাগানে পোকা দমনে সেঙ ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করেছেন যা নিরাপদ একটি পদ্ধতি, তাই খুব কমই বাগানে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হয়। তার বাগানে উৎপাদিত ফল নিরাপদ। বাণিজ্যিক ফল বাগানের দৃষ্টান্ত আকবর হোসেনের ফল বাগান।