বর্ধিত দুই বছরসহ নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুনে। অথচ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৮৬ শতাংশ। মেয়াদ না থাকায় চলতি অর্থ বছরে প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ থাকা ৫৮০ কোটি টাকা ছাড় করছে না মন্ত্রণালয়। এতে থমকে যায় প্রকল্পের কাজ।
এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির সংশোধিত উন্নয়ন প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) উপস্থাপনের কথা রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটি শেষ একনেক। তাই প্রকল্পটি আজকের সভায় অনুমোদন পেতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আরডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে পারে ৩ হাজার ১২ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সময় বাড়বে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী আজাদীকে বলেন, একনেক সভায় উত্থাপিত প্রকল্পের তালিকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পটিও রয়েছে। আশা করছি অনুমোদন হবে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সিডিএর মেগা প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট। শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ সময়ে প্রকল্পের বিপরীতে মন্ত্রণালয় ছাড় করে ৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের আকার বৃদ্ধি করে ১০ হাজার ৪২০ কোটি টাকার সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব করে সিডিএ। তবে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি প্রস্তাবিত ব্যয় কমিয়ে ৮ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠানো হলে বর্ধিত ৩ হাজার ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। সর্বশেষ অর্থ বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয়, বর্ধিত অর্থের ৫০ শতাংশ সরকারি তহবিল থেকে, ২৫ শতাংশ সিডিএর ফান্ড থেকে এবং ২৫ শতাংশ সরকার থেকে ঋণ নিয়ে সিডিএকে পরিশোধ করতে হবে। এরপর গত ১২ অক্টোবর আরডিপিপি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় অনুমোদন পায়।
আরডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় থাকা ৩৬টি খাল থেকে কাদা অপসারণ ও মাটি খননে ব্যয় বাড়তে পারে ২৬৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ডিপিপিতে ৫৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা থাকলেও আরডিপিপিতে প্রস্তাব করা হয় ৩২৪ কোটি টাকা। একইভাবে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ খাতে ১৬৩ কোটি টাকা বাড়তে পারে। স্থাপনার ক্ষতিপূরণ ব্যয় বাড়তে পারে ১৯০ কোটি টাকা। আরসিসি প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণে ১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা, আরসিসি কালভার্ট স্থাপনে ৫৩ কোটি টাকা, মহেশখালসহ পাঁচটি খালের মুখে জোয়ার প্রতিরোধক ফটক (টাইডাল রেগুলেটর) নির্মাণে ১১৫ কোটি ব্যয় বাড়তে পারে। এছাড়া সিল্টট্রাপ নির্মাণ, নতুন নালা নির্মাণ ও পুরনো নালা সম্প্রসারণেও ব্যয় বাড়ছে। তবে প্রকল্প থেকে বাদ পড়তে পারে জলাধার নির্মাণ এবং আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিমাণও কমতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২৮ এপ্রিল নগরীর চশমা খাল ছাড়াও মুরাদপুর এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন খাল ও বহদ্দারহাট মোড়ের বড় নালা পরিষ্কার করার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল।