আগামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রতি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সমর্থনকে ‘স্বাভাবিক’ বলেই মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ীরা জানেন ও বোঝেন যে সরকারের স্থিতিশীলতা থাকলে দেশের উন্নতি হবে। তাই তারা এমন কথা বলেছেন। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে মন্তব্য করে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, শেখ হাসিনার বিকল্প শুধু শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা এখন বিশ্বে একটি ব্র্যান্ড।… সারা দেশের ব্যবসায়ীদের ম্যান্ডেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়ে গেছেন। খবর বিডিনিউজের।
ব্যবসায়ীদের ওই বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা চাইবে সেটিই স্বাভাবিক। তাদের বক্তব্যে সেটি উঠে এসেছে। তারা (ব্যবসায়ীরা) জানে এবং বোঝে যে, সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। দেশের অগ্রগতিও অব্যাহত থাকবে। সেটি অনুধাবন করতে পেরে শীর্ষ ব্যবসায়ীরা শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী দেখতে চান বলে দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। এক এগারোর মতো সরকার আর নয় : ২০০৭ সালে জরুরি আইন জারির পর যে ধরনের সরকার এসেছিল, সেই ধরনের সরকার গঠনের সুযোগ দেশের মানুষ আর দেবে না বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী। ‘এক এগারো’ নামে পরিচিতি পাওয়া সেই ঘটনার কুশীলবরা আবার সক্রিয় হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা নানা জায়গায় প্রকাশ্যে–গোপনে বৈঠক করছে। বিভিন্ন দূতাবাসে গিয়ে ধরনাও দিচ্ছে। এক–এগারোর কুশীলবরা সক্রিয় হয়ে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশনও দেওয়া শুরু করেছে। বাংলাদেশের মানুষ আর কখনও কাউকে সেই ধরনের সরকার গঠনের সুযোগ করে দেবে না। এটি সার্বভৌম বাংলাদেশ, আমাদের দেশ চলবে আমাদের সংবিধান ও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী। অন্য কারও প্রত্যাশা কিংবা প্রেসক্রিপশনে আমাদের দেশ চলবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরানোর দাবিতে ফের আন্দোলনে বিএনপি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফরে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ সফর করে গেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি দল।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে তাগাদা দেননি জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এক–এগারোর কুশীলবরাই এই সংলাপ চাচ্ছে। বিএনপিও তো সংলাপের কথা বলছে না। তারা তো বলছে না যে আমাদের সঙ্গে সংলাপ করতে চায়। এটা কারা বলছে, সেটা আপনারা কিছুটা জানেন, আমরাও জানি।
তিনি বলেন, গতকাল (শনিবার) ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের (আওয়ামী লীগ) বৈঠক হয়েছে। সেখানে তারা দেশের আইন ও সংবিধানের আলোকে দেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায়। সেই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ব্যাপারে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে এসেছেন তারা।
জরুরি আমলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতিতে জড়ায় : ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পরের ঘটনাপ্রবাহও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে এক–এগারো পরিবর্তনের পর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তারা দুর্নীতি–দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে ক্ষমতা গ্রহণ করে। কিন্তু নিজেরাই দুর্নীতি ও দুঃশাসনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হয়েছিল যাদের বিরুদ্ধে কথা বলে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু যে বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি–দুঃশাসনের কারণে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কারণেই জেল থেকে শেখ হাসিনার পাশাপাশি খালেদা জিয়াও মুক্তি পেয়েছিলেন বলে দাবি করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, তারা বুঝতে পারেনি, মুক্ত শেখ হাসিনার চেয়ে বন্দি শেখ হাসিনা কম শক্তিশালী নয়। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার পর হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ জনগণ। সে কারণে এগারো মাস পরে শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল তারা। প্রকৃতপক্ষে আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াও মুক্তি লাভ করেছিলেন। আজকে সেই দিন। বাংলাদেশের মানুষ আর কখনও সেই ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না।