ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ৩ জুলাই, ২০২৫ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসাবাণিজ্যের পরিবেশসংক্রান্ত কোনো সূচক বর্তমানে চালু নেই। ফলে দেশের সার্বিক ব্যবসার পরিবেশ কোন অবস্থায় আছে, তা মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যবসার জন্য অনুকূল নয় বলেই ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন। শিল্প খাতে উৎপাদনের প্রধান উপকরণ গ্যাস ও বিদ্যুতে চরম সংকট বিরাজ করছে। ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে গেছে। ভারতের সঙ্গে চলছে বাণিজ্যিক বিরোধ। মূল্যস্ফীতির কারণে স্থানীয় চাহিদাও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সামপ্রতিক সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলনের কারণে বাণিজ্য বিঘ্নিত হয়েছে। বহুমুখী চাপে রয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানান, টালমাটাল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ বিশেষত ব্যবসাবাণিজ্য, বিনিয়োগ, রপ্তানি, পণ্য সরবরাহ, মুদ্রা ও পুঁজিবাজার, জনজীবন এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বহুমুখী সমস্যা বিরাজ করছে। নাজুক বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বছর ভিত্তিতে চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছরের মার্চের শেষের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি কমলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিও কমে যাবে। ফলে বেকারত্ব বাড়বে।

ডলারের উচ্চমূল্য ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দুই বছর আগের তুলনায় বর্তমানে শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানিতে অনেক বেশি অর্থ দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের রপ্তানি বাবদ আয় কমে যাচ্ছে। যারা স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসা করছেন, তাদের প্রফিট মার্জিনও মারাত্মকভাবে কমে গেছে। বিশেষ করে ওষুধশিল্পে এমনটি হচ্ছে। কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় অনেক কোম্পানি কিছু জীবন রক্ষাকারী ওষুধের উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে বাজারে সেসব ওষুধের সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ব্যবসাবাণিজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যবিরোধ। ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অনেক পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে ধস নেমেছে। ভারতে পণ্য রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি বিঘ্নিত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি দেশের ব্যবসার পরিবেশ কতটা সহায়ক, তা নির্ভর করে নানা বিষয়ের উপর। যেমন: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক কাঠামো, আইনকানুন, প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা। এসব উপাদান মিলে গড়ে তোলে একটি দেশ বা অঞ্চলে ব্যবসা গড়ে তোলার ও পরিচালনার উপযোগী পরিবেশ। আধুনিক বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে যে কোনো দেশের জন্য একটি শক্তিশালী ও উদ্যোক্তাবান্ধব ব্যবসা পরিবেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশও সেই লক্ষ্যেই শিল্প উন্নয়ন, উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ টানতে নানা ধরনের নীতিমালা গ্রহণ করেছে। তবে বাস্তবে ব্যবসা শুরু করা বা পরিচালনা করা এখনো সহজ নয়। প্রশাসনিক জটিলতা, দুর্নীতি, অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং অর্থপ্রাপ্তির প্রতিবন্ধকতা অনেক ব্যবসায়ীকে পিছিয়ে দিচ্ছে। তাঁরা বলেন বাংলাদেশে ব্যবসা করার পরিবেশে যেমন একদিকে রয়েছে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ, তেমনি অপরদিকে আছে সম্ভাবনার দ্বারও। প্রশাসনিক জটিলতা, কর ব্যবস্থার অস্বচ্ছতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও বিদেশি বিনিয়োগে অনিশ্চয়তাসব মিলিয়ে অনেক বাধা এখনো বিদ্যমান। তবে ডিজিটাল পেমেন্ট, নারী উদ্যোক্তা সহায়তা, স্থানীয় শিল্পে রপ্তানি প্রণোদনা ও ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে এমন এক স্টপ সার্ভিসের মতো ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো আশা জাগায়।

তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা করার পরিবেশে যেমন একদিকে রয়েছে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ, তেমনি অপরদিকে আছে সম্ভাবনার দ্বারও। প্রশাসনিক জটিলতা, কর ব্যবস্থার অস্বচ্ছতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও বিদেশি বিনিয়োগে অনিশ্চয়তাসব মিলিয়ে অনেক বাধা এখনো বিদ্যমান। তবে ডিজিটাল পেমেন্ট, নারী উদ্যোক্তা সহায়তা, স্থানীয় শিল্পে রপ্তানি প্রণোদনা ও ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে এমন এক স্টপ সার্ভিসের মতো ইতিবাচক পরিবর্তনগুলো আশা জাগায়।

বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ নিরাপদ ও উন্নত না করতে পারার পেছনে বাধা কোথায় এবং ব্যবসার পরিবেশ কীভাবে উন্নত করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধআলাউদ্দিন আল আজাদ : শিল্পচেতনায় দীপ্ত এক সাহিত্যপুরুষ