বোয়ালখালী উপজেলাধীন কর্ণফুলী নদী এবং সংযুক্ত খালসমূহের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধকল্পে তীর সংরক্ষণের জন্য ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প গতকাল একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম। প্রকল্পটিকে একনেকে অনুমোদন দেয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এদিকে বাঁশখালী–আনোয়ারা উপকূলে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটিও গতকাল অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ‘বোয়ালখালী উপজেলাধীন কর্ণফুলী নদী ও সংযুক্ত খালসমূহের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধকল্পে তীর সংরক্ষণ কাজ’ শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উপজেলা থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পটি গতকাল একনেক সভায় উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম এমপি গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রকল্পটি বোয়ালখালী উপজেলার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। নদী ভাঙনের কারণে বছরের পর বছর ধরে ওই এলাকায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করলেও তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আনুমানিক ৬ হাজার ৬৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকার সম্পদ রক্ষা পাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট নদী–খাল সমূহের তীর ভাঙনরোধ করতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, ৬ দশমিক ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ কর্ণফুলী নদী এবং এর সংযুক্ত খালসমূহে তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি আগামী ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সেক্টর কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। নদী তীরবর্তী ভাঙন কবলিত স্থান প্রতিরক্ষা করে পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আবদুচ ছালাম এমপি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আমাদের আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, উপজেলার উপকূলীয় রায়পুর ও জুইদন্ডি এলাকার জন্য বেড়িবাঁধ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে সিসি ব্লকের মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধের কাজ করা হবে। অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর কাজ শুরু করতে ৪ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র। এই প্রকল্পে সাংগু নদী অংশে ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার ও সাগর অংশে ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানায়, গতকাল অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ হবে বাঁশখালী উপকূলে।
গতকালের একনেক সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া সভায় রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে ৮ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুইটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনা সচিব বলেন, মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয়দের জন্য নেওয়া প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক এক বছরের জন্য অনুদান দেবে। তাছাড়া কিছু ঋণও দেওয়া হবে। এসব টাকায় যোগাযোগ তথা রাস্তা, রেলপথ নির্মাণ করা হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে বনাঞ্চল নষ্ট হয়েছে তা উন্নয়নে কাজ করা হবে। সচিব জানান, বিশ্ব সাহায্য সংস্থা কথা দিয়েছিল তারা শুধু রোহিঙ্গাদের অর্থায়ন করবে। পাশের জেলাগুলোর মানুষের ভৌত উন্নয়নে সার্বিকভাবে করতে হবে। এসব নিয়ে সমন্বয় করতে হবে। ৭টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এটি একসঙ্গে করাটা কঠিন। এটি চ্যালেঞ্জিং ও গুচ্ছ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী তার অনুমোদন দিয়েছেন।