কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও শেষতক থ্রি মিলিয়নস ক্লাব থেকে ছিটকে পড়েনি চট্টগ্রাম বন্দর। ব্যাপক উদ্বেগ এবং উৎকন্ঠা থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর খোলা পণ্য এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং এ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অপরদিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও ভয়াবহ রকমের বৈশ্বিক মন্দার মাঝে পণ্য রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি আয় করেছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে ৫৪২ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত থাকলেও ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন রপ্তানিকারকেরা। যা দেশের ইতিহাসে কোন একক মাসের সর্বোচ্চ রপ্তানি।
সূত্র জানিয়েছে, বৈশ্বিক সংকটে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মক রকমের নাজুক সময় পার করছে। আমদানি এবং রপ্তানি দুই ক্ষেত্রেই বিরাজ করছে মন্দা। কিন্তু মারাত্মক এই সংকটের মাঝেও সদ্য সমাপ্ত ডিসেম্বর মাসে বড় ধরণের অর্জন করেছে দেশের রপ্তানি খাত।
গতকাল সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্র জানিয়েছে যে, ডিসেম্বর মাসের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার। কিন্তু মাস শেষে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করছেন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও দেশের রপ্তানিখাত নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমকি ০৩ শতাংশ পিছিয়ে থাকলেও এর আগে আর কখনো বাংলাদেশ কোন একক মাসে এত বিপুল পরিমান রপ্তানি করতে পারেনি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ৪৯০ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। গত সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে দেশে রপ্তানি আয় ছিল যথাক্রমে ৩৯১ ও ৪৩৬ কোটি ডলারের কাছাকাছি।
ইপিবি গতকাল তথ্য প্রকাশ করে জানায় যে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ২ হাজার ৭৩১ কোটি ১২ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমকি ৫৮ শতাংশ বেশি। বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও রপ্তানি আয়ে এই প্রবৃদ্ধি সংকট উত্তোরণে বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ইপিবি সূত্র জানায়, গত ছয় মাসে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমকি ৫৬ শতাংশ। ছয় মাসে এ খাতে মোট রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২৯৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের পণ্য। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে রপ্তানি হয়েছিল ৫৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এতে প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৪৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। যা আগের বছররে একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমকি ৬৫ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে ৫৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। কৃষিপণ্য রপ্তানি ২৩ দশমকি ২৬ শতাংশ কমে গেছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে এই খাতে রপ্তানি হয় ৫০ কোটি ১৯ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরে ছিল ৬৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
ইপিবি সূত্র প্লাস্টিক খাতে পণ্য রপ্তানি ৪১ শতাংশ বেড়েছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, গত ছয় মাসে মোট ১০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরে যার পরিমান ছিল ৭ কোটি ডলার। রপ্তানি আয়ে ডিসেম্বরে রেকর্ড করলেও দেশের সার্বিক রপ্তানি কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে। গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রে কোন প্রবৃদ্ধি হয়নি। বরং আগের বছরের তুলনায় কমেছে। সদ্য সমাপ্ত বছরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.২ শতাংশ কম। আগের বছর বন্দরে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছিল।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, বৈশ্বিক সংকটে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল যে, আমাদের ধারণা ছিল চট্টগ্রাম বন্দর থ্রি মিলিয়নস ক্লাব থেকে ছিটকে পড়বে। তবে আশার কথা তা হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর ৩১ লাখেরও বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে। অবশ্য খোলা পণ্য কার্গো হ্যান্ডলিং এ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত বছরের তুলনায় ২.৬ শতাংশ বেশি পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে। সদ্য সমাপ্ত বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮২ টন পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে। আগের বছর যার পরিমান ছিল ১১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ টন। জাহাজ হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রেও চট্টগ্রাম বন্দরের ৩. ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ হাজার ৩৬১টি মাদার ভ্যাসেল হ্যান্ডলিং করেছে। আগের বছর যার পরিমান ছিল ৪ হাজার ২০৯টি।
বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও চট্টগ্রাম বন্দরের এমন কর্মকাণ্ড দেশের অর্থনীতির সার্বিক গতিশীলতা নিশ্চিত করেছে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, বিশ্বের দেশে দেশে বিরাজিত নানা সংকটের মাঝেও চট্টগ্রাম বন্দরের এমন কার্যক্রম আশা জাগানিয়া বার্তা দিচ্ছে। এই কার্যক্রম ধরে রাখার উপরও সংশ্লিষ্টরা গুরুত্বারোপ করেছেন।