বৈশাখী মেলার আনন্দ

সুজন সাজু | বুধবার , ১২ এপ্রিল, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

মেলা মানেই ম্যালা আনন্দ। মেলার কথা উঠলেই মনে পড়ে বৈশাখী মেলার স্মৃতি। প্রতিবারই বছরের শেষদিন আর বছরের প্রথম দিন দেশের অন্যান্য স্থানের মতো আমাদের গ্রামেও বসে বৈশাখী মেলা। দূর দূরান্ত থেকে বেপারীরা নানা রকম পণ্য নিয়ে আসে মেলায় বিকিকিনি করতে। নাগরদোলা, ঘোড়ার গাড়ি, পুতুল নাচ এসব মেলার বিশেষ আকর্ষণ বলা যায়। মেলায় পসরা সাজিয়ে বসে কত শত দোকানী। মেলাতে যে ছোটরা আসে তা নয়, বড়রা ও আসে ছোটদের নিয়ে। মেলা উপলক্ষে ছোট বড় সকলের মাঝে এক উদ্দীপনার কাজ করে। বৈশাখী মেলা মানেই খুশির জোয়ার। বৈশাখ মানে নতুন, নতুনের আগমন।

চারিদিকে সবুজের সমারোহে কেড়ে নেয় মন। তাকে বরণ করতে আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভরে যায় বৈশাখী মেলার প্রাঙ্গণ। তাল পাতার বাঁশি বাজিয়ে ছোটরা উল্লাসে মেতে উঠে। গরমের হাবভাব থেকে রক্ষার্থে হাতপাখা নিয়ে বুড়ো দাদুটাও বড় বেশি ব্যস্ত যেন। মেলার মুড়ি মোয়া মুড়কি, চমচম, মন্ডা মিঠাই তো সকলের প্রিয়। গ্রাম বাংলার ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও বৈশাখী মেলায় থাকে ভরপুর। মেলায় থাকে পুতুলনাচ,থাকে বায়োস্কোপ সহ আরো কত কী। এসব ছোটদের অতি জনপ্রিয় বলে মেলার আকর্ষণটা থাকে একটু অন্যরকম। বৈশাখী মেলায় গিয়ে পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ দেখেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

সেই সময় বৈশাখী মেলার আয়োজন ছিল এখনকার চেয়ে আরো বিশাল। তখনকার বৈশাখী মেলায় কবিগান, যাত্রাপালা, নাটক ছিল খুব জনপ্রিয়। এখন নেই তা বলা বাহুল্য। তবে সংখ্যায় নগণ্য বলা যায়। তবুও বৈশাখী মেলা মানে আমাদের বাঙালী সাংস্কৃতির ঐতিহ্যের স্বারক। চট্টগ্রামের ডিসি হিলের বৈশাখী মেলা সর্বজন বিদিত। বৈশাখী মেলার আকর্ষণটা ও সকলের কাছে সমান কদরের। মেলা থেকে বেলুন কিনে ফুটানো ছোটদের জন্য একটি অন্য মাত্রার আনন্দ বহন করে। মেলায় যেতে ছোটরা বায়না ধরে মায়ের কাছে। আর দাদু থাকলে তো দাদুই হচ্ছে মেলায় নিয়ে যাওয়ার নির্ভরতার সঙ্গী। সুমিষ্ট এখনো ছোট, বয়স মাত্র চারের কোটায়। কিন্তু বড় বোন স্নিগ্ধা যা বলে তা মনে গেঁথে রাখে। স্নিগ্ধা দাদুকে বলে আমরা মেলায় যাবো।

আমাদের মেলায় নিয়ে যেতে হবে। কথাটা শুনলো সুমিষ্ট। সুমিষ্টের সাথে দাদুর ভাবসাবটা বড়ই মধুর। দাদুকে ছাড়া যেন চলেনা। খাওয়া দাওয়া, ঘুম যাওয়া, ঘুরতে যাওয়া সবই দাদুর সাথে। দাদুসুমিষ্ট যেন একে অপর ছাড়া সময় কাটে না। আর বৈশাখী মেলাতে নিয়ে যাওয়া মানে তো যেন দাদুর কাজই। সুমিষ্ট তো নাছোড়বান্দা। দাদু মেলায় যাব। দাদু কী,না বলার সাধ্য? আচ্ছা বিকেলে যাব। স্নিগ্ধা ও সুমিষ্ট দাদু দোকান থেকে আসার আগেই তৈরী। যেন তর সইছে না !

বৈশাখী মেলায় যাবে। নাগরদোলায় চড়বে, চমচম খাবে,মুড়ি মুড়কি কিনবে, বেলুন কিনবে, তাল পাতার বাঁশি কিনে আনবে। আরো কত কী বায়না দুই ভাই বোনের। মাকে বলে বেশি করে টাকা দাও? বৈশাখী মেলা থেকে সব কিনে আনব। হাসে মা’য়। সুমিষ্ট অল্পতে খুশি হলেও স্নিগ্ধা আগে থেকে মেলার জন্য টাকা জমা রাখছে। তবুও আরো টাকা চায়। মা মেয়ের কথোপকথনের ফাঁকে দাদু এসে হাজির। দাদু আসলো, দাদু আসলো বলে মহা খুশি। হ্যাঁ,দাদু চলো। দাঁড়াও না ? আমি একটু জিরিয়ে নিই। না না, জিরোনের দরকার নেই, চলো। আচ্ছা যাবো। তোমরা তৈরী তো ? দেখছ না, আমরা তৈরী যে ? ওরে বাব্বা, মহা গরম তো ? দাদু হাসি মুখে বলে। রওনা দিল বৈশাখী মেলার উদ্দেশ্যে। ভাই বোন দুইজনই দাদুর চেয়ে কয়েক কদম আগে হাঁটছে। মিনিট বিশের মত হেঁটে হাজির হলো মেলায়। লোকে লোকারণ্য মেলা প্রাঙ্গণ। চারিদিকে মাইকের শব্দ, বাঁশির আওয়াজ, ঝুমঝুমির ঝনঝনানি। এটাই তো বৈশাখী মেলার পরিবেশ। বেলুন দেখেই দাদুকে আবদার করে বসল, বেলুন কিনে দিতে। স্নিগ্ধা বলল আমি নাগরদোলায় চড়ব। সুমিষ্টের হাতে বেলুন কিনে দিয়ে স্নিগ্ধাকে তুলে দিল নাগরদোলায়। সুমিষ্ট ভয়ে নাগরদোলায় চড়তে অনিহা প্রকাশ করল। স্নিগ্ধা চড়ে সুমিষ্ট হাসে সাথে দাদুও। মেলা ঘুরে ঘুরে মন্ডা মিঠাই, রসমলাই, বেলুন, তাল পাতার বাঁশিসহ দুজনের ইচ্ছে মত কিনে নিল মেলার সামগ্রী। গচ্ছা গেল দাদুর পকেটও। এবার বাড়ি যাওয়ার পথে পা বাড়াল দাদু স্নিগ্ধারা। কিছুদূর আসার পথে ঘটল বিপত্তি। সুমিষ্টের বেলুন অকস্মাৎ হাত থেকে ছুটে উড়াল মাড়ল ঠিক আকাশের পথে। জুড়ে দিল মহা কান্না। বেলুন গ্যাস ভক্তি হওয়াতে দ্রত বেগে উপরের দিকে ছুটল। অগত্যা দাদ ুআদরের নাতিকে শান্ত করার চেষ্টায় ফের ছুটল মেলার দিকে। সুমিষ্ট তো বেলুন হারানোর বেদনায় পা বাড়াতে রাজি নয় আর। কোলে তুলে নিয়ে ছুটল দাদু। বেপারী থেকে যখন দুটো বেলুন কিনে সুমিষ্টের হাতে যেই না দিল দাদু, সুমিষ্টের মুখে যেন রাজ্য জয়ের হাসি। আদরের নাতির হাসিতে দাদুর মুখেও ফুটে উঠল হাসির রেখা। মেলা ভ্রমনের হাসি হাসতে হাসতে দাদু নাতিরা যখন ফিরল বাড়িতে, তখন সূর্য মামা ছুটিতে যেতে ব্যস্ত। সুমিষ্ট, স্নিগ্ধা থেকে দাদু পেল আজকের মত ছুটি। মেলার এসব কান্ড কারখানা বলতে বলতে ঘরের মাঝে পড়ে গেল আনন্দের রোল। দাদু বলে মেলায় গিয়ে আমাকে ও ম্যালা ঝামেলায় পড়তে হলো। তবুও দাদুনাতির আনন্দ তো অন্যদের মাঝে পাওয়া দুষ্কর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রবাহ
পরবর্তী নিবন্ধপহেলা বৈশাখ