জব্বারের বলী খেলা এবং বৈশাখী মেলা ১১৬ বছরে পা দিল এ বছর। জব্বারের বলী খেলাকে কেন্দ্র করে ২৪, ২৫ এবং ২৬ এপ্রিল এই তিনদিন বসে বৈশাখী মেলা। বলী খেলা হয় ১২ বৈশাখ। তবে গত কয়দিন থেকেই মেলার দোকানীরা আসতে শুরু করেছে। নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে কোতোয়ালী মোড় পর্যন্ত ফুটপাতে গত তিন দিন ধরেই মেলার দোকানীরা অবস্থান নিয়েছে যদিও তাদের পণ্য ঢেকে রেখেছিল। তবে আজ থেকে যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা শুরু হবে তাই গতকাল থেকেই পণ্য উন্মুক্ত করেছে। ইতোমধ্যে বেপা কেনা শুরু হয়ে গেছে। নগরীর সিনেমা প্যালেস এলাকা থেকেই মূলত মেলা শুরু। এই এলাকায় কাঠের ফার্নিচারের দোকানদাররা তাদের পণ্যের পসরা নিয়ে বসে। সুদূর গাজীপুর, কুষ্টিয়া এমনকি ফরিদপুর থেকেও এসেছে এই ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা। এখানে পাওয়া যায়না তেমন ফার্নিচার খুব কমই রয়েছে। সেখান থেকে কে সি দে রোড ধরে সামনে গেলে মাটির তৈজসপত্র আর শীতল পাটির ব্যাবসায়ীদের দেখা মেলে। বর্তমানে বিত্তবানরা এখন সিরামিকের পরিবর্তে মাটির তৈজসপত্র যেমন, বাসন, পেয়ালা, জগ, গ্লাস. কলসী, কাপ, পিরিচ দিয়ে তাদের ডাইনিং টেবিল সাজায়। তাছাড়া চট্টগ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে থাকা মাটির ব্যাংক এবং নানা রঙের ফুলদানি রাখা হয়েছে স্তুপ করে। লালদীঘি পাড়ের সোনালী ব্যাংকের সামনে কেবল পাটি আর পাটি। কেবল জব্বারের বলী খেলার মেলায় পাওয়া যায় সিলেটের শীতল পাটি। তেমন ধারণা চট্টগ্রামের মানুষের। আর সে ধারণা থেকে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ থেকে ব্যবসায়ীরা পাটি নিয়ে এসেছে এই বৈশাখী মেলায়।
বৈশাখী মেলায় সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তা হচ্ছে লোহার সামগ্রী। দা, ছুরি, বটি, কুড়াল, কোদাল, তলোয়ার সব মেলে মেলায়। তবে বৈশাখী মেলায় গৃহীনিদের সবচাইতে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে যে জিনিসটি থাকে তা হচ্ছে ফুলের ঝাড়ু, শলার ঝাড়ু, তাল পাতার পাখা। এসব এরই মধ্যে চলে এসেছে মেলায়। মেলার আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে গ্রামীণ খাবার। নানা ধরনের খাবার যা সচরাচর শহুরে জীবনে পাওয়া যায়না, মেয়েরা চিনেওনা সেসব মিলে এই মেলায়। লালদীঘির দক্ষিণ–পশ্চিম পাড়ের বড় এলাকাজুড়ে এই গ্রামীণ খাবারের দোকানীরা বসে। লালদীঘির উত্তর পাড় আর পূর্ব পাড়ে বসে নানা ধরনের ফল আর ফুলের গাছের পসরা। শহরের মানুষ এসব গাছও বেশ ক্রয় করে। আর মেলার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ রেশমী চুড়ি, চুলের ফিতা, হাতের বালা কি মেলেনা এই মেলায়। চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী থেকে আসে ঝাড়ু ব্যবসায়ীরা। তবে এবারের মেলায় একটি নির্দেশনা তাদের ভাবিয়ে তুলছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তা হচ্ছে এরই মধ্যে সিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আন্দরকিল্লা থেকে কোতোয়ালী পর্যন্ত প্রধান সড়কে মেলা বসা যাবে না। এতে ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশংকা করছে দোকানীরা। তাদের ভাষায় রাস্তায় গাড়ি চলাচল করলে মানুষ দাড়াতে পারবেনা ঠিকমত। ফলে তাদের বেচা বিক্রি কমে যাবে। তাই এই সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনারও অনুরোধ ব্যবসায়ীদের।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে কিছু বেচা বিক্রি শুরু হলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হতেই তা বাড়তে থাকে। রাতেও প্রচুর মানুষ ভিড় করে মেলায়। তবে প্রধান আকর্ষণ জব্বারের বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল শুক্রবার। এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলী খেলার মঞ্চ। শথাধিক বলী এরই মধ্যে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। আগামীকাল সন্ধ্যায় নিশ্চিত হওয়া যাবে কার মাথায় উঠছে এবারের বলী খেলার শিরোপা। তবে মেলা চলবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে সেটা আংশিক আকারে চলে আরো দু একদিন।