চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রতিদিন শত শত শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে। শিক্ষকরা আসেন নিজেদের পড়াশোনা ও গবেষণার কাজে, নিতে পারেন তথ্য সমৃদ্ধ হাজারো বইয়ের রেফারেন্স। শিক্ষার্থীরাও আসেন নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে পড়াশোনার জন্য। এখানে আছে প্রতিটি বিভাগের অগণিত লেখকের বই। যেখান থেকে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে বড় করেন নিজেদের জ্ঞানের ঝুলি। কিন্তু এই তীব্র তাপদাহের মাঝে দেশের আয়তনে সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষগুলো ও শিক্ষকদের গবেষণার কক্ষগুলোতে ঘুরছে না বৈদ্যুতিক পাখা এবং নেই পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। এই তীব্র তাপদাহে শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে পোহাতে হচ্ছে গরমের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। এটা নিয়ে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
সরেজমিনে দেখা যায়, চবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কলা, সমাজবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অনুষদের পাঠকক্ষগুলোতে বিদ্যুৎ চলে গেলে বন্ধ থাকে বৈদ্যুতিক পাখাগুলো। সেখানে নেই আইপিএস, জেনারেটর বা অন্য কোনো ব্যবস্থা। পাখার বাতাস ছাড়া তীব্র তাপদাহে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে বসতে পারছেন না এক মিনিটও। বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায়ও পাখাগুলো পুরাতন হওয়ায় বাতাস পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত।
জানতে চাইলে গ্রন্থাগারে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, এখানে যে আইপিএসগুলো দেওয়া আছে সেগুলো দিয়ে শুধু বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো যাবে। আমরা লাইব্রেরিতে কর্মরতরা প্রশাসনকে অনেকবার দরখাস্ত দেওয়ার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না।
এতোবড় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টার মাত্র দুইটি। একটা নিচতলায় কলা পাঠকক্ষের সামনে আরেকটা দোতলায় সমাজবিজ্ঞান পাঠ কক্ষের সামনে। কিন্তু নিচতলায় ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টার অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। ঠিক করার মত নেই কোনো উদ্যোগ। ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টার ছাড়াও নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় সাধারণ ছোট ছোট ওয়াটার ফিল্টার দিলেও সেখানে থাকে না পর্যাপ্ত পানি। ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে এই তীব্র তাপদাহে পানির অভাবে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পড়তে আসা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, গ্রন্থাগারে বিদ্যুতের সমস্যা প্রকটভাবে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে। লোডশেডিংয়ে আইপিএস দিয়ে শুধু বাতি জ্বলে, পাখা চলে না। এছাড়াও পর্যাপ্ত ফিল্টার না থাকায় পানির স্বল্পতা রয়েছে। গরমে পড়াশোনায় মন বসে না অনেক শিক্ষার্থীর। অনেকে লাইব্রেরিতে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এই তাপদাহে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে লাইব্রেরিতে আইপিএস ও পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা অতীব জরুরি।
এই নিয়ে আরেক শিক্ষার্থী মো. আতিক বলেন, এই তীব্র তাপদাহে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন লাইব্রেরিতে বসে শিক্ষার্থীদের পড়তে কষ্ট হয়। এতবড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে নেই কোনো আইপিএস বা শক্তিশালী কোনো জেনারেটর এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। প্রশাসনের এই বিষয়গুলো নজর দেওয়া খুব প্রয়োজন। না হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রশাসনিক প্রধান মো. সাইফুর রহমান জানান, আমরা কাজ করি গ্রন্থাগারিক স্যারের সাথে সমন্বয় করে। পাখাগুলো পুরাতন হওয়ায় গত বছর ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসে দরখাস্ত করে ছয়টি পাখার নতুন ক্যাপাসিটার লাগিয়েছি। এই বছরও দরখাস্ত করেছি উনারা এসে ঠিক করে দিবেন। যদি পুরাতন পাখা দিয়ে না হয় তাহলে আমরা আবার দরখাস্ত করবো তখন বিষয়টি তারা দেখবেন। আর আমাদের লাইব্রেরি কমিটির মিটিংয়ে পাওয়াফুল অটো জেনারেটরের জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসে চিঠি দিয়েছি আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। সেটা আসলে আশা করি আর কোনো সমস্যা হবে না। পানির ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন, ইলেকট্রিক ওয়াটার ফিল্টারগুলো ঠিক করলে প্রতি চার মাস অন্তর আবার ঠিক করাতে হয়। প্রতিবার ঠিক করাতে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে তবে বাজেট না থাকায় সব কিছু করতে দেরি হচ্ছে।