চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের বিশেষ আকর্ষণ ও অন্যতম বিনোদন স্পট ঝুলন্ত সেতু। ব্যতিক্রমী এ স্থাপনাকে ঘিরে সারাদিন চলে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস, আড্ডা আর আলাপচারিতা। ক্লাসে যাওয়ার ফাঁকে কিংবা একটু অবসর পেলেই দলবেধে বন্ধু নিয়ে, কেউবা আবার প্রেয়সীর সাথে দোল খেতে ভুলেন না যেন। এককথায় দিনভর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে এই সেতু। গত তিন বছরেরও বেশি সেতুটি কাঁটাতারে বাঁধা রয়েছে। পড়ে আছে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুলন্ত সেতুর অনেকগুলো কাঠ ভেঙে পড়েছে। যেগুলো আছে সেগুলো নড়বড়ে অবস্থা। ভেঙে পড়েছে কয়েকটি লোহার গ্রিল, বাকিগুলোতে ধরেছে মরীচিকা। যেখানে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থীর আনাগোনা থাকতো, ঝোপঝাড়ে ঘিরে ফেলেছে সেসব স্থান।
অপরদিকে ক্যাম্পাসের অন্যতম আড্ডার স্থান হলো বঙ্গবন্ধু উদ্যান। করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলে বঙ্গবন্ধু উদ্যানও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত ১৮ নভেম্বর ক্যাম্পাস খুললেও অজানা কারণে বন্ধ রয়েছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও ব্যবসায় প্রসাশন অনুষদের মাঝামাঝিতে চবির ঝুলন্ত সেতুটি অবস্থিত। প্রয়াত প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ ভিসি থাকাকালে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে ২০০৯ সালে নির্মাণ করেন বিশেষ এই স্থাপনাটি। এরপর ২০১২ সালে ঘূর্ণিঝড়ে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন থাকার পর মেরামত করা হয়। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার আগে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কাঁটাতারে বাঁধা হয় সেতুটি। সেই হিসেবে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আগে সেতুটি কাঁটাতারে বাঁধা হয়। এরপর সংস্কারের অজুহাতে আর খোলা হয়নি।
ঝুলন্ত সেতু থেকে শহীদ মিনার হয়ে সামনে গেলেই দেখা মিলবে দৃষ্টিনন্দন বঙ্গবন্ধু উদ্যানের। সকাল থেকে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল, বঙ্গবন্ধু উদ্যানে শিক্ষার্থীদের আড্ডা যেন শেষ হয় না। নানারকম বাহারি ফুল আর সবুজে মোড়ানো এই উদ্যান। দিনভর ছোটখাটো সভা, আলোচনা চক্র, বিতর্ক চর্চা, গানের আসর এবং আড্ডায় শিক্ষার্থী ভরপুর থাকে এই উদ্যান। এছাড়া এখানে গ্রুপ স্টাডিও করে থাকেন অনেকে। জাতির জনকের স্মরণে স্থাপনাটি ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ঝুলন্ত সেতুটি সংস্কার করতে বেশি দিন লাগার কথা না। কিন্তু প্রসাশনের সদিচ্ছা ও গুরুত্বের কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না। যে কাজটি এক সপ্তাহের সে কাজটা আজ তিন বছরেও হচ্ছে না। সমাজতত্ত্ব বিভাগের রাসেল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতুটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের নানা প্রান্তের সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ এ সেতুটি দেখতে আসে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সংস্কারের নাম করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেতুটি বন্ধ করে রেখেছে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ক্যাম্পাসের আড্ডার অন্যতম স্থান। কিন্তু অজানা কারণে সেটিও বন্ধ রয়েছে। সংস্কার কাজ শেষ করে ঝুলন্ত সেতু এবং বঙ্গবন্ধু উদ্যান অতিসত্বর খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আজাদীকে বলেন, আমরা এটার প্রস্তাব প্রশাসনকে দিয়েছি। কর্তৃপক্ষ বললেই আমরা সংস্কার কাজ করতে পারবো। নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধু উদ্যান আমি আসার পর থেকে বন্ধ দেখে আসছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের এ ব্যাপারে কিছু বলেনি।