বেশিরভাগ ইরাকি বলছেন সাদ্দাম হোসেনের সময় দেশ ভালো ছিল

| শুক্রবার , ৭ এপ্রিল, ২০২৩ at ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নতুন একটি জরিপ বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরাকি মনে করেন যে ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর থেকে সে দেশের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিতে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতনের ২০ বছর পূর্তির সময় এই জরিপে বিভিন্ন বিষয়ে ইরাকি জনগণের মনোভাব সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা গ্যালুপ ইন্টারন্যাশনাল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরাকের ১৮টি প্রদেশে জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা অনুযায়ী ২,০২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ইরাকির সাথে মুখোমুখি দেখা করে এই জরিপ চালিয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।

মার্কিন হামলার আগের তুলনায় ইরাকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬০% বলেছেন যে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। অন্যদিকে ৪০% বলেন যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া আরব জনগোষ্ঠী ২০০৩ সালের পর থেকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে

ওঠে। অন্যদিকে সুন্নি আরব, কুর্দি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। আর এই সাম্প্রদায়িক বিভাজনটি এই জরিপেও ফুটে উঠেছে, যেখানে সুন্নি মুসলমান উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৪% বিশ্বাস করেন যে সাদ্দাম হোসেনের অধীনে তাদের জীবন সুন্দর ছিল। জরিপের এই নিরাশাজনক ফলাফল

সত্ত্বেও কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রগতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। উত্তরদাতাদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ইরাকের অবস্থাকে ‘খারাপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। গ্যালুপ ইন্টারন্যাশনাল যখন তার আর্কাইভে গিয়ে ২০০৩ সালে একই প্রশ্নের উত্তরের সাথে এই জবাব মিলিয়ে দেখে, তখন দেখা যায় যে প্রতি তিনজনের মধ্যে দু’জন ইরাকি তখন এই কথাই বলেছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করেছিল এই বিশ্বাস থেকে যে দেশটির হাতে ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ বা ডাব্লুএমডি রয়েছে এবং সাদ্দাম হোসেনের সরকার বিশ্ব নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। কিন্তু ডাব্লুএমডির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর পরবর্তী যুদ্ধের ফলে কয়েক হাজার ইরাকি প্রাণ হারান এবং সে

দেশে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। এই হামলার জন্য মার্কিন সরকার যে অজুহাতই দিক না কেন, বহু ইরাকি যুদ্ধের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও সন্দিহান। প্রায় ৫১% ইরাকি বিশ্বাস করেন, ইরাকের সম্পদ লুঠ করার জন্যই যে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে ঐ হামলা চালিয়েছিল। অন্যদিকে জরিপকৃতদের মধ্যে ২৯%

মনে করেন যে ঐ আক্রমণের লক্ষ্য ছিল সাদ্দাম হোসেনের সরকারকে উৎখাত করা। যুদ্ধের অন্যান্য কারণ, যেমন মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের স্বার্থ রক্ষা করা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো এবং ইরাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এগুলো সম্পর্কে উত্তরদাতাদের আগ্রহ ছিল কম।

জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, তাদের দেশে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার প্রশ্নটি নিয়ে ইরাকিরা এখনও বিভক্ত। ২০০৭ সালে যুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যদের মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ১,৭০,০০০। আর এখন মোতায়েন রয়েছে প্রায় ২,৫০০ মার্কিন সৈন্য। এই জরিপে ৭৫% শিয়া

উত্তরদাতারা তাদের দেশে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর অভিযানকে খারাপ ঘটনা বলে মনে করেন। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার দিক থেকে মিত্রদেশ হিসেবে তারা রাশিয়াকে সমর্থন করেন।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৪৭% ইরাকি দেশের ভেতরে থেকেই নতুন দেশ গড়ে তুলতে আগ্রহী। অন্যদিকে, ২৫% অর্থাৎ প্রতি চারজনের মধ্যে একজন উত্তরদাতা দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান।

কিন্তু ইরাকের জটিলতা শুধু পরিসংখ্যানের হিসেব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। গত দু’দশক ধরে লাখ লাখ ইরাকি ট্রমা আর গোলযোগের শিকার হয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেও ইরাকে একটি নতুন প্রজন্মের উত্থান ঘটছে। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সমস্যার বোঝা ঘাড়ে নিয়েই এরা একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। আশা করা যায়, ইরাকের নেতারা এবং তাদের আন্তর্জাতিক সমর্থকরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ৬.৪০ কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দৌড়ে নামছেন কেনেডি জুনিয়র