শিল্পায়ন ছাড়া কোনও দেশ উন্নতি করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্পায়ন প্রয়োজন। শিল্পায়ন কোথায় হবে সেগুলো আমরা ঠিক করে দেব। শিল্পায়নের কারণে যেন কৃষি জমির কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা থাকলেও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যখন যা প্রয়োজন আমরা সেটি করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের অর্থনীতি সবসময় গতিশীল। এটাকে গতিশীল রাখতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা যেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে, সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার। এর ফলে দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে তরুণদের বেকারত্ব অনেকটাই দূর হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, আপনারা দেশের অর্থেনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। আর এগুলোর সবকিছুর মূলে রয়েছে কর্মসংস্থান।’
আসলে দেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। ৩০টির বেশি অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী এরই মধ্যেই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। দেশি-বিদেশি আরো অনেক বিনিয়োগ আসছে। এ পর্যায়ে এসে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সবাইকে হতাশ করেছে। তারা বিনিয়োগকারীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে। বলা হয়েছিল সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে জমির মূল্যের ওপর কোনো ধরনের ভ্যাট দিতে হবে না। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মতো পরিষেবা পেতে সার্ভিস চার্জ বা সেবা খরচ থাকবে না, ১০ বছর কর অবকাশসহ আরো বেশ কিছু সুবিধা থাকবে। এখন বলা হচ্ছে, এসব সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। বেজার এমন আচরণে ব্যবসায়ীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। প্রতিকারের জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেজার এমন সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহ করবে। বেজার প্রসপেকটাস ও ওয়েবসাইটে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভ্যাট ও সার্ভিস চার্জমুক্ত সেবা ও কর অবকাশ সুবিধাসহ নানা ধরনের লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাতে অনেক বিনিয়োগকারী আকৃষ্টও হয়েছিল। এখন সেসব সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করে নেওয়াটা নৈতিক নয়। এটি বেজার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট সৃষ্টি করবে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেজা এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা পর্যন্ত করেনি। হঠাৎ করেই গত ৩ সেপ্টেম্বর বেজা থেকে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্পকারখানায় পানির বিল দেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। একইভাবে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার পর গ্যাস বিল দেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি ৫ শতাংশ সেবা খরচ গুণতে হবে। একই সঙ্গে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ইজারা নেওয়া জমির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ ও ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধাও থাকবে না। এমনকি শিল্প কারখানা থেকে সৃষ্ট ময়লা পানি পরিশোধন করতে চাইলে সেখানেও ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। আবার তরল বর্জ্য শোধন করতে চাইলে সেখানেও আলাদা করে ৫ শতাংশ সেবা খরচ দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বেজার এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করে অবিলম্বে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ আকর্ষণে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। আমাদের প্রতিবেশী অনেক দেশই বিভিন্ন পরিষেবার সার্ভিস সার্জ অব্যাহতিসহ অনেক লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। সেসব দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে আমাদেরও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। কিন্তু আমরা করছি উল্টোটা- প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। এটা কোনো মতেই কাম্য হতে পারে না। আমরা আশা করি, নীতিনির্ধারকরা জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করবেন এবং বেজা তাদের একতরফা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবে।