রাজধানীর বেইলি রোডের ছয়তলা ভবনে আগুনে কমপক্ষে ৪৩ জন মারা গেছে। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন জনের, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ১১ জনের মৃত্যুর কথা জানান। এরপর ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন। পরে রাত ১ টা ৫৫ মিনিটে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান। এর মধ্যে ১০ জন মারা যান শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে, ঢাকা মেডিকেলে মারা যান ৩৩ জন। মন্ত্রী আরো জানান, এখনো ২২ জনকে নিয়ে তারা শঙ্কায়। তাদের সবার কণ্ঠনালী পুড়ে গেছে। রাত আড়াইটায় এ রিপোর্ট লেখার সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে মৃতের সংখ্যা আরও একজন বেড়ে ৪৪ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
খবরে বলা হয়, গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে আগুন লাগে। ভবনটির বিভিন্ন তলায় কাচ্চি ভাই, ইলিয়েনসহ একাধিক রেস্টুরেন্ট ছিল। এসব রেস্টুরেন্টের কারণে পুরো ভবনজুড়ে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ রাখা ছিল। ফলে ভবনটিতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা দাউ দাউ করে অগ্নিচুল্লির মতো জ্বলে উঠতে শুরু করে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার পর ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ৪২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে অচেতন অবস্থায়, যাদের মধ্যে ৪ জন শিশু ও ২১ জন নারী ছিলেন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হওয়া অনেককে আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, হতাহতরা আগুনে দগ্ধ হননি, তাদের শরীরে পোড়া দাগ নেই। কিন্তু প্রচণ্ড ধোঁয়ায় শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে না পেরে তারা আক্রান্ত হয়েছেন। ভবনে একটিমাত্র সিড়ি। আগুন লাগার পর মানুষ ভবন থেকে নেমে আসতে পারেননি। আগুনের কারণ কী– এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা চুলা থেকে অথবা গ্যাস লিক থেকে আগুন হতে পারে।’
বিডিনিউজ জানায়, রাত পৌনে বারোটা থেকে একটার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে থাকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতাল জুড়ে স্বজনদের কান্না, ভিড় সামলাতে বাঁশির শব্দ আর মাঝে মাঝে আসতে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ। একেকটা অ্যাম্বুলেন্স আসার পর শুরু হচ্ছে হাসপাতাল কর্মীদের ছোটাছুটি। ‘সরেন সরেন‘, ‘রাস্তায় কেউ দাঁড়াবেন না’, এমন কথা বলতে বলতে সমানে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন হাসপাতালে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসারেরা। কাঁদতে কাঁদতে বন্ধুদের কাছে ভর দিয়ে হাসপাতালে ঢুকছিলেন এক তরুণ। ঢোকার মুখেই আর এক বন্ধুর কাছে শুনলেন প্রিয়জনটি শুয়ে আছে মর্গে। সেটি শুনে মেঝেতেই লুটিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন তিনি।
রাত সোয়া একটার দিকে পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘৪২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা তাদের বিষয়ে শঙ্কিত। তাদের চিকিৎসা ও জীবন রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্যের মেয়ে আছে বলেও উল্লেখ করেন আইজিপি।