সবুজ শ্যামল সুজলা সুফলা দেশ আমাদের বাংলাদেশ। চারিদিকে সবুজে ঘেরা দেশ ও দেশের মানুষ। এই কথাটি কেমন যেনো আমাদের মাঝ থেকে মুছে যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে গাছ কেটে মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে। গাছের উপকারিতা কী তা আমরা ভুলতে বসেছি। কিংবা ভুলেই গেছি। আমরা গাছ কেটে যায়, লাগানোর কথা চিন্তা করি না। আমাদের দেশের বায়ুদূষণ ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবাহাওয়ায় গরমের তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। এসব কিছুর অধিকাংশ গাছ ও বৃক্ষের অপসারণের ফলে হচ্ছে। ভারসাম্যপূর্ণ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছি, গাছ আমাদের অঙিজেন দেয়। আর আমরা এই অঙিজেনের সাহায্যে বেঁচে থাকি। তারপর গাছ আমাদের থেকে নির্গত কার্বনডাইঙাইড চুষে নিয়ে পরিবেশকে ভারসাম্যপূর্ণ ও দূষণমুক্ত করে তুলে। তাহলে গাছ আমাদের বেঁচে থাকারও একটি মাধ্যম। আমাদের পরিবেশ সুস্থ ও ঠিক রাখতে আমাদের নিজেদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। নিজের আঙিনাকে ও ছাদকে সবুজায়ন করতে হবে। তাছাড়া ইসলাম বৃক্ষরোপণের প্রতি চমৎকার উপদেশ দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষরোপণে বেশ উৎসাহিত করেছেন। বৃক্ষরোপণ, পুল কালভার্ট নির্মাণ, হাসপাতাল ইত্যাদিকে সাদকায়ে জারিয়াহ বলে সম্বোধন করেছেন। বৃক্ষরোপণ সাদকায়ে জারিয়াহ এই কথার ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারদগণ বলেন, পথের ধারে গাছ লাগালে যে কেউ এতে উপকৃত হতে পারে। ফলদার বৃক্ষ হলে পথিক ক্ষুধার্ত হলে ফল খেয়ে নিজের ক্ষুধা নিবারণ করবে। তাছাড়া ক্লান্ত পথিক গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিবে। সব কিছুই রোপণকারীর জন্য সাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব বহন করবে। অন্য একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি জানে যে একটু পর কিয়ামত কায়েম হবে। আর তার হাতে একটি চারাগাছ আছে। সে যেনো চারাগাছটি রোপণ করে দেয়। কেননা এতে সাদকার সওয়াব আছে। হয়তো এই পুণ্য তার জন্য মুক্তির কারণ হবে’। তিনি চারাগাছ রোপণও তার পরিচর্যার বিষয়েও যত্নবান হতে বলেছন। অযথা গাছের পাতা ছেঁড়া, ডালপালা কাটা ইত্যাদি নিষেধ করেছেন। ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নিয়েও বৃক্ষরোপণের একটি চমৎকার ইতিহাস আছে। দিল্লির সম্রাট হুমায়ুনের পতনের পর শের শাহ সুরি বাংলা জয় করে নিজেকে মুঘল নতুন সম্রাট ঘোষণা করেন। তার শাসনকাল ছিলো ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ সন পর্যন্ত। তিনি এই অল্পসময়ে তাঁর ভৌগলিক অভিজ্ঞতা থেকে ব্যবসাকে আন্তর্জাতিক ও নিরাপদ মানের করতে ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করেন। এটি তার অমর কীর্তি হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত। বিগত চার শতাব্দী ধরে এই সড়ক বিশ্বে অদ্বিতীয় এক জীবন নদীর মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। আজও ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রে এই সড়ক অন্যতম প্রধান রাস্তা। তিনি মহাসড়কটি নির্মাণকালে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে কয়েক মাইল পরপর সারাইখানা নির্মাণ করেন। প্রতিটি সারাইখানার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে ডাকপোস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এই সড়কের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দুপাশে ফলদার গাছ। এসব গাছ থেকে পথিক ছায়া ও আহার দুটোই ভোগ করত। এই মহাসড়কটির সুবাদে আমদানি-রপ্তানির সুন্দর একটি দুয়ার খুলে যায়।
তাছাড়া প্রতিটি সারাইখানাতে আলাদা পুলিশ ফাঁড়িও যুক্ত করেন। সারাইখানা নির্মাণের ফলে ব্যবসায়িক নিরাপত্তা অনেক নিশ্চিত হয়। আমার এখানে সম্রাটের সড়কের দুপাশে ছায়াদার ও ফলদার বৃক্ষরোপণের অসাধারণ কৌশলটি সত্যি অনেক সুন্দর লেগেছে। বৃক্ষরোপণ যেমন ইবাদাত ঠিক তেমনি শারীরিক ভাবে মানুষের কাজের একঘিয়েমি দূর করতে এসব প্রাকৃতিক পরিবেশের অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দীর্ঘক্ষণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পড়ে থাকলে মাথায় ব্লাড সার্কুলেশনের বিরূপ প্রভাব ফেলে। নিজেকে প্রকৃতির ছোঁয়ায় কিছু সময় সোপর্দ করে দিলে মনমগজ সব সতেজ হয়ে যায়। তাই সবার উচিত বৃক্ষের প্রতি যত্নবান হয়ে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে নিজেকে যুক্ত করা।