বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

মোহাম্মদ আসলাম হোসেন | বুধবার , ২ জুলাই, ২০২৫ at ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ভালো ভালো সব কথা বলা হয়েছে ভালো ভালো অনেক কাজ বাকী রয়েছে’ এ উক্তিগুলি আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে প্রযোজ্য। প্রতি বছর অতি জাকজমকের সাথে পরিবেশ অধিদপ্তর, বন মন্ত্রণালয়, ঢাকঢোল পিটাইয়া দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালন করে আসছে। এতে, দেশের সর্বস্তরের মানুষ কেমন সাড়া দেনতার পরিসংখ্যান আমরা আমজনতার কাছে নাই। পরিবেশ বান্ধব দেশ গঠনে বৃক্ষরোপন অতীব জরুর। বৃক্ষ আমাদের অক্সিজেন দেয়, কার্বনডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে শুধু তাই নয়। বৃক্ষ ফলমূল, ঔষধ, আসবাবপত্র তৈরী, জ্বালানী ছায়াও দেয়। তাই একটি সুপরিকল্পিত সরকারি/বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, এনজিও সংস্থা তথা ব্যক্তি উদ্যোগে বৃক্ষরোপন করা যায়। সেজন্য বিশেষ করে সরকারি উদ্যোগে সকলকে উৎসাহিত করে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা যায়। এজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে নিম্নলিখিত প্রস্তাব সরকারের প্রতি রাখতে চাই। ০১. মহামান্য রাষ্ট্রপতি সহ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় থেকে শুরু করে সকল মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়গণ, সচিব মহোদয়গণ থেকে সরকারি সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ যার যার বাড়ির ও অফিস আদালতের আঙ্গীনায় ফলদ, বনজ ও ঔষধী গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিলে জনগণ উৎসাহিত হবেন। ০২. সকল সরকারি অব্যবহারিত ভূমিতে বিশেষ বরে সড়ক, রেলপথে ও নদীর পাড়, সাগর চর প্রভৃতিতে স্বস্ব এলাকার টি.এন., স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেম, মাদ্রাসার ছাত্রশিক্ষক, স্থানীয় জন প্রতিনিধি, সামাজিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়েমালিকানা হারাহারি অংশ নির্ধারণ করে বৃক্ষরোপনের সমন্বিত কর্মসূচী গ্রহণ করলে আশা করি ফলপ্রসু ফলাফল পাওয়া যাবে। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে রেললাইন ও সড়কের ধারে খালি জায়গায় ভবিষ্যতে রাস্তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থাকলে, সে হিসেবে দূরত্ব বজায় লাগাতে হবে এবং নদী বা সাগর তীরে অধিক শিকড় যুক্ত গাছ যেমন: নারিকেল, খেজুর, তালগাছ, কড়াই গাছ লাগানো যেতে পারে আর সড়কের ধারে আমগাছ, কাঁঠাল গাছ, কড়াই গাছ, সেগুন গাছ, মেহগনি, তেঁতুল ও বড় বড় ঔষধি গাছ লাগালে অনেক ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা কালে গাড়ি ও ঐসব গাছের সাথে ধাক্কা লেগে উলটাইয়া যাওয়া হতে রক্ষা পেতে পারে। অর্থাৎ ঐ গাছগুলি প্রতিরক্ষা দেওয়ালের কাজ দিবে। এক কথায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ও মাদ্রাসার দাখিল পরিক্ষার্থীরা অন্তত ২ জন নিরক্ষর ব্যক্তিকে অক্ষর জ্ঞান শিখাইলে তাদেরকে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরের মত ২০ নম্বরের জন্য প্রতিযোতিগার সম্মুখীন হতে হতো। এখনো সরকার চাইলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করে মাদ্রাসা অথবা ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শ্রেণি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার বিষয়ে উৎসাহমূলক প্রণোদনা দিয়ে কাজে লাগানো যায়। এতদবিষয়ে সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বস্ব দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারেন। এছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, ফায়ার বিগ্রেড সহ সকল দেশ প্রেমিক বাহিনীর সদস্যবৃন্দকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা যায়। অর্থাৎ যাতে প্রতিটি দেশপ্রেমিক সৈনিকবৃন্দ অন্তত নিজ নিজ ইউনিট কিংবা ছুটিতে বাড়ি গেলে অন্তত ১টি গাছের যেন চারা লাগান। দেশকে সবুজায়ন করতে দেশের সর্বস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকেও সকল বাহিনীর সদস্যকে অবৈতনিকভাবে বৃক্ষরোপনে কাজে লাগানো গেলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। বৃক্ষরোপণে শিল্পালয়নে যাতে কোন সাংঘর্ষিক ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে শিল্পায়ন করতে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ও বিভিন্ন সংস্থার বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই সমন্বিত কর্মসূচী একান্ত আবশ্যক। দেশে বেকারত্ব দূর, অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়ন ও জরুরি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের বাধা বিপত্তির কারণে শিল্পায়নে বাধাগ্রস্ত হয় এবং দীর্ঘসূত্রতার বেড়াজালে আটকে যায়। এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জনগণসহ সর্বস্তরের অংশীজনকে উৎসাহিত করতে পারেন। লেখক: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতফাৎ
পরবর্তী নিবন্ধতুমি থাকলে কাছে