নিরস্ত্র বাঙালির উপর বর্বর পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস শেষ করা, লন্ডনের রয়েল কলেজ অব সার্জনসে এফ,আর,সি,এস ফাইনাল পরীক্ষার অল্প কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণ হয়েছিলেন যে মানুষটি তিনি আর কেউ নন, চট্টগ্রামের রাউজানের কোয়েপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লা চৌধুরী। তিনি রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের সনদ নিয়ে ভারতীয় ভিসা সংগ্রহ করে ভারতের আগরতলায় ৪৮০ শয্যা বিশিষ্ট ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে অসংখ্য যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা সেবায় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে গরীব দুঃখী মেহনতী মানুষের স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবার সুযোগ সৃষ্টি করে গণমানুষের আপনজনে পরিণত হয়েছিলেন। জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়নে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে দেশের ওষুধ শিল্পকে বিদেশি বেনিয়াদের বাণিজ্যিক আগ্রাসন থেকে মুক্ত করে ওষুধ উৎপাদনে দেশকে স্বনির্ভরই শুধু করেননি, ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রীত্বের লোভনীয় প্রস্তাব বিনয়ের সাথে গ্রহণ না করে জাতীয় যে কোনো সংকটে প্রত্যক্ষভাবে কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান না করেও কাউকে তোয়াক্কা তোষণ না করে তাঁর বিশ্বাস ও ভাবনা চিন্তা প্রকাশ্যে দৃঢ়চিত্তে প্রকাশ করে দেশকে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। নারী মুক্তির ব্যাপারে কথামালায় সীমাবদ্ধা না থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রে বিরাট সংখ্যক নারীকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে নারী জাগরণে অনন্য ভূমিকা পালনকারী প্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে চট্টগ্রামের কোন সরকারি হাসপাতালের নামকরণ করে তাঁর স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের এই প্রত্যাশা রইল।
মোজাফ্ফর আহমদ
চট্টগ্রাম।