বিষয় যখন ‘শিশুসাহিত্য’ এবং একই সঙ্গে ‘মুক্তিযুদ্ধ’…

রাশেদ রউফ | মঙ্গলবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

শিশুসাহিত্য’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন রবীন্দ্রনাথ, আর ‘ছড়াসাহিত্য’ শব্দটি প্রথম আসে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর কলমে। ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে (১৩০১ বঙ্গাব্দ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘মেয়েলি ছড়া’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন: ‘ভালো করিয়া দেখিতে গেলে শিশুর মতো পুরাতন আর কিছুই নাই। দেশ কাল শিক্ষা প্রথা অনুসারে বয়স্ক মানবের কত নূতন পরিবর্তন হইয়াছে, কিন্‌তু শিশু শত সহস্র বৎসর পূর্বে যেমন ছিল আজও তেমনি আছে। সেই অপরিবর্তনীয় পুরাতন বারংবার মানবের ঘরে শিশুমূর্তি ধরিয়া জন্মগ্রহণ করিতেছে, অথচ সর্বপ্রথম দিন সে যেমন নবীন তেমন সুকুমার যেমন মূঢ় যেমন মধুর ছিল আজও ঠিক তেমনি আছে। এই নবীন চিরত্বের ধারণ এই যে, শিশু প্রকৃতির সৃজন। কিন্‌তু বয়স্ক মানুষ বহুল পরিমাণে মানুষের নিজকৃত রচনা। তেমনি ছড়াগুলিও শিশুসাহিত্য; তাহারা মানবমনে আপনি জন্মিয়াছে!’

এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ শিশুসাহিত্য শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। অন্যদিকে এর ঠিক পাঁচ বছর পর ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে (১৩০৬ বঙ্গাব্দ) যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘খুকুমণির ছড়া’ সংকলনের ভূমিকায় ‘ছড়াসাহিত্য’ ও ‘শিশুসাহিত্য’ শব্দ দু’টি উল্লেখ করেছেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী। তাই ‘শিশুসাহিত্য’ শব্দটির প্রথম ব্যবহার নিয়ে যে সব অভিমত প্রচলিত আছে, সেসব অভিমত আমরা উপরে উল্লিখিত দু’টি উদ্ধৃতি দিয়ে বিবেচনা করতে পারি। রবীন্দ্রনাথকে এখানেও পথিকৃতের মর্যাদা দিতে হয়।

সুখলতা রাও ‘শিশুসাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা ও রুচি’ বিষয়ে লিখেছেন: ‘শিশুসাহিত্যের ভিতর দিয়ে শিশুর সরল মনে যে ছবি, যেশিক্ষা, যেআদর্শ পৌঁছায়, তাহা তাহার অজ্ঞাতসারে সেখানে নিজের ছাপ রাখিয়া যায় এবং ভবিষ্যতে তাহার শিক্ষা দীক্ষা, এমনকি রুচির উপরে প্রভাব বিস্তার করে।’ বিষয়টিকে আরো ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন প্রাবন্ধিক অজিত দত্ত। শিশুসাহিত্যের স্বরূপ নির্ণয়ের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, “আমাদের সকলেরই আজ একথা উপলব্ধি করা দরকার যে, শিশুর শিক্ষা ও শিশুর সাহিত্যকে অভিন্ন করে না তুলতে পারলে, শিক্ষাও হবে অসম্পূর্ণ এবং সাহিত্যও হবে পঙ্গু। এই শিক্ষার মানে ‘সদা সত্য কথা কহিবে’ এবং ‘চুরি করা বড় দোষ’ মাত্র নয়। এ শিক্ষার মানে শিশু মনে যতগুলো সদ্‌বৃত্তি অপুষ্ট আছে, তাদের ফুটিয়ে তোলা। এই সদ্‌বৃত্তির মধ্যে আছে ভদ্রতা, সমবেদনা ও করুণা, আছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, নির্ভীকতা ও স্বাদেশিকতা, আছে দয়া, দাক্ষিণ্য ও মমতা, আছে মানবতাবোধ, আছে প্রকৃতির সৌন্দর্যের সন্ধান। তেমনি আছে রসনাভূতি কাব্যবোধ ও সাহিত্যপ্রীতি, আছে অনুসন্ধিৎসা এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনও কিছুকে বিচার করবার ক্ষমতা।”

এখানে বলে রাখা দরকার যে, বাঙালি শিশুর জন্য শিশুপাঠ কেমন হওয়া উচিতসেই পথ প্রথম দেখালেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহপাঠীবন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কার। ১৮৪৯ সালে ‘শিশু শিক্ষা’ গ্রন্থমালা লিখে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। ‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল’ এই লাইনটি ‘শিশু শিক্ষা’ প্রথম ভাগের ‘প্রভাতবর্ণন নামে চিরকালের শিশু কবিতার অংশ। ‘লেখাপড়া করে যে/ গাড়িঘোড়া চড়ে সে’একসময়ে ছোটোদের কাছে এই আপ্তবাক্যটি আওড়ানো হতো। সময়ের পরিবর্তনে আজ এই বাক্যটি ভুলে যেতে বসলেও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এটি ছিলো বিদ্যা গ্রহণ বিষয়ে উজ্জীবনের মূলমন্ত্র। এই বইয়ে প্রচুর নীতিশিক্ষা রয়েছে। তবে কোনো বিশেষ ধর্মীয় নীতিবোধের চেয়ে সর্বজনীন মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিশুসাহিত্য সে হিসেবে আনন্দ আর শিক্ষার অপূর্ব সমন্বয়। প্রমথ চৌধুরীর ভাষায়, ‘শিশু শিক্ষার পুস্তকে যে বস্তু বাদ পড়ে যায়অর্থাৎ আনন্দ সেই বস্তু যুগিয়ে দেবার উদ্দেশ্যেই এ সাহিত্যের সৃষ্টি’। বিষয়টাকে আরো খোলাসা করেছেন নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘শিশুসাহিত্য আনন্দের আশ্রয়ে চরিত্রগঠন ও শুভবুদ্ধির সঞ্চার মাতৃস্নেহ, পিতৃনিয়ন্ত্রণ এবং খেলার সাথীর সাহচর্যএই তিনটির উপরেই নির্ভর করে’। শিশুসাহিত্য গবেষকদের নানা মতকে আমরা যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে এই ধারণায় উপনীত হওয়া যায় যে শিশুসাহিত্য হলো ছোটোদের এক রঙিন জগৎ। তাদের মনে বিশুদ্ধ আনন্দরস সঞ্চারের জন্য যে সাহিত্য রচনা করা হয়। যে রচনা পড়ে ছোটোরা মজা পায়, আনন্দ পায়, পরিতৃপ্ত হয়। তাকে তারা সহজেই অন্তর দিয়ে গ্রহণ করে নেয়। ছোটোদের চঞ্চল, কল্পনাপ্রবণ ও জিজ্ঞাসু মনকে অনুষঙ্গ করে সাহিত্য রচনা করেন লেখকরা। হাসি, কৌতুক, মজা বা আনন্দ গ্রহণের অন্তরালে ছোটোরা অনায়াসে পেয়ে যায় জাগতিক জ্ঞান, বুদ্ধিযুক্তি ও চিন্তার চমৎকার উপাদান। এই জ্ঞান বা শিক্ষা জটিল নয়, কঠিন নয়, জগৎ ও পরিবেশ বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান। শিশুসাহিত্যিকদের এসব রচনা থেকে জীবনকে তারা দেখবে এবং অনিসন্ধিৎসু মন দিয়ে খুঁজে পাবে জীবনের বিচিত্র রূপ।

.

চন্দ্রাবতী একাডেমি আয়োজিত শিশুসাহিত্য উৎসব শেষ হলো সম্প্রতি। গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনঢাকায় সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো শিশুসাহিত্যিকদের এই মহাউৎসব। চন্দ্রাবতী শিশুসাহিত্য উৎসব নানা কারণে বিশিষ্ট। আমরা যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিশুসাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে থাকি, তাদের প্রতিটি আয়োজন থেকে এই আয়োজন আলাদা ও সর্ববৃহৎ। দেশের বরেণ্য লেখকরা এই উৎসবে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং আছেন। উৎসবের আহ্বায়ক লেখক মাহফুজুর রহমান ও সচিব কামরুজ্জামান কাজল এই উৎসবের সমস্ত কর্মসূচি তত্ত্বাবধান করেছেন সনিষ্ঠ আন্তরিকতায়। তাঁদের পুরো টিম শ্রম দিয়েছেন, কাজ করেছেন কীভাবে উৎসব সফল করা যায়তার ভাবনায়। সারাদেশ থেকে অসংখ্য শিশুসাহিত্যিক যোগ দিয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই লেখা পাঠ করেছেন। আবার কেউ কেউ এই মিলনমেলায় সংযোগ স্থাপনে সচেষ্ট ছিলেন। এ ধরনের উৎসব লেখকদের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন তৈরিতে সহায়তা করে, হৃদ্যতা বাড়ায় এবং ভাবনা বিনিময়ে প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করে। উৎসবের প্রথমদিন উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব হাশেম খান। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ছিলেন প্রধান অতিথি। এই পর্বে ৪ শিশুসাহিত্যিককে পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন : আমীরুল ইসলাম, মারুফুল ইসলাম, ফারুক হোসেন ও রহীম শাহ।

.

চন্দ্রাবতী সাহিত্য উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিলো ‘বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক সেমিনার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেছি আমি রাশেদ রউফ। সভাপতিত্ব করেন শিশুসাহিত্যিক কাইজার চৌধুরী। আলোচনায় ছিলেন শিশুসাহিত্যিক রফিকুর রশীদ ও কবি ওমর কায়সার।

.

বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত ‘মুক্তিযুদ্ধই’ আমাদের শ্রেষ্ঠ গৌরব ও অহঙ্কার। এই অহঙ্কারের স্বতন্ত্র চিত্রায়ন ঘটেছে আমাদের শিল্পসাহিত্যের নানা শাখায়, নানা প্রশাখায়, কবিতায়, ছড়ায়, গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে, চলচ্চিত্রে। আমাদের শিল্পীসাহিত্যিকরা তাঁদের লেখায় রেখায় তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের দুঃসহ চিত্র, ব্যক্ত করেছেন আগুন ঝরা দিনের কথা, লিপিবদ্ধ করেছেন বীরত্ব ও গৌরবগাথা। বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় নানা আখ্যান, ধ্বনিত হয়েছে শৌর্যবীর্যের প্রদীপ্ত অহঙ্কার, উন্মোচিত হয়েছে বাঙালি জাতির স্বরূপচেতনা। অত্যন্ত সফলভাবে রূপায়িত হয়েছে যুদ্ধ দিনের বিচিত্র অনুষঙ্গ। ‘সন্ত্রাসবন্দি বুলেটবিদ্ধ দিন রাত্রি’র ভয়াল চিত্র, অবরুদ্ধ মানুষের নির্বাক আহাজারি, অসহায়ত্বের গোঙানি, হানাদার বাহিনীর হত্যা, লুট, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, শহীদের আত্মত্যাগ, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব, স্বপ্ন, প্রাপ্তিসব কিছুই যেন উজ্জ্বল ও ছবির মতো স্পষ্ট ও জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে আমাদের শিশুসাহিত্যে। মুক্তিযুদ্ধের শিশুসাহিত্য আমাদের জাতীয় ইতিহাসের শৈল্পিক ফসল, বাঙালি চেতনাবোধের রক্তিম অনুরণন।

বর্তমানে আমাদের শিশুসাহিত্যের বিষয়, মান ও রচনার পরিমাণ নিয়ে আমরা গৌরববোধ করি। অনবরত চর্চার ফলে আমাদের শিশুসাহিত্য হয়ে উঠেছে উজ্জ্বল, মানবিক ও ইতিহাসঋদ্ধ। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাহিত্যের চেয়ে বাংলাদেশের সাহিত্যকে আলাদা করা যাচ্ছে দুটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের কারণে। একটি মহান ভাষা আন্দোলন, অন্যটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের আছে বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন। আমাদের আছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। যে দুটি আমাদের শিশুসাহিত্যের মূল উপজীব্য।

আমাদের দেশের শিশুকিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে লেখকরা ছড়াকবিতাগল্পউপন্যাস লিখে চলেছেন। এটা লেখকের দায়। শাহ্‌জাহান কিবরিয়া এ বিষয়ে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে শিশুদের সঠিক ধারণা দিতে হবে। তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। শিশুসাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে এ সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রাখা অতীব জরুরি।” অন্যদিকে, কাইজার চৌধুরী বলেছেন, ‘শিশুসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু আমাদের অহঙ্কারের বিষয়’।

আনজীর লিটন তাঁর ‘নতুন আলোয় জেগে উঠুক শিশুসাহিত্য’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে বলেছেন, ‘দেশ গড়বার প্রেরণামূলক লেখা ছড়িয়ে দিতে হবে শিশুদের মনে। এই দায়িত্বটি শিশুসাহিত্যিকদের ওপরই বর্তায়। কারণ শিশুসাহিত্যিকরা কল্পনার রঙে বিজয়ের গল্প শোনান। তারাই শিশুমনে জ্বালাতে পারেন আলোর প্রদীপ।’

সেহিসেবে আমাদের শিশুসাহিত্যের বিষয় হিসেবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এসেছে ইতিহাসঐতিহ্য থেকে শুরু করে আন্দোলনসংগ্রাম পর্যন্ত। মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি বিষয় হিসেবে এসেছে বাঙালি জাতির ধ্রুবতারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিষয় হিসেবে এসেছে শোষণহীন বাংলাদেশ গড়বার স্বপ্ন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী মহলের স্বরূপ উদঘাটনের সক্রিয় অনভূতি, স্বৈরাচার বিরোধিতা, অসামপ্রদায়িকতা, সমাকালীন প্রসঙ্গ ইত্যাদি।

আমাদের ভাবতে ভালো লাগে, এ দেশে এমন কোনো সাহিত্যিকই নেই, যাঁর লেখায় মুক্তিযুদ্ধ আসেনি। যে লেখক মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে কোনো লেখাই লিখতে পারেননি, তাঁকে বাংলাদেশের লেখক হিসেবে ভাবাও যায় না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা এত বড় একটি বিষয় যে একে বাদ দিয়ে সাহিত্য রচনার কথা ভাবাই যায় না। আমরা দেখেছি, লেখকদের লেখায় মুক্তিযুদ্ধ এসেছে নানাভাবে। ছড়া, কবিতা, যেমন লেখা হয়েছে, তেমনি লেখা হয়েছে গল্পউপন্যাস। এই গল্পউপন্যাস হয়তো ছড়াকবিতার মতো প্রবলভাবে হয়নি, কিন্তু মোটা দাগে বেশ কিছু রচনা আমরা পেয়েছি, যেগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে বাঙালির শৌর্যবীর্য তথা শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ। আমাদের শিশুকিশোরদের জন্য যা অনুসরণীয়।

.

এবার সামান্য ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনার পর সম্মানিত আলোচকদের কাছ থেকে যে প্রশংসা পেয়েছি, তাকে আমি আমার শ্রমের সফলতা ও কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মনে করি। আমাদের দেশে যে কয়েকজন নিবেদিতপ্রাণ শিশুসাহিত্যকর্মী রয়েছেন, আমি নিজেকে তাঁদের একজন ভাবি। আমি মনে করি, এই শিশুসাহিত্য বিষয়ে আমার যেমন ভালোবাসা আছে, তেমনি আছে দায়বোধ। ৪০ বছরের অধিক কাল ধরে কেবল লেগে আছি এ অঙ্গনে নিবিড় ভালোবাসায়। তাই প্রধান অতিথি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা যখন এই বক্তৃতা মঞ্চে বলেন, ‘এই পাঁচ হাজার শব্দের প্রবন্ধ যদি পঞ্চাশ হাজার শব্দের মধ্যে এনে একটি বই আমার কাছে দেওয়া হয়, তাহলে বাংলা একাডেমি থেকে তা প্রকাশের ব্যবস্থা করা হবে’, তখন মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। আমাদের সম্মানটা সেই জায়গায়, নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্যচর্চার যখন এরকম মূল্যায়ন হয়। আজকাল বই প্রকাশ করা কোনো জটিল ব্যাপার নয়। কিন্তু একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে বই প্রকাশের আগাম ঘোষণা যে কোনো সৎ লেখককে প্রাণিত করবে নিঃসন্দেহে। আমিও এক্ষেত্রে প্রাণিত হলাম। কৃতজ্ঞতা প্রিয় কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। ধন্যবাদ চন্দ্রাবতী একাডেমি।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী;

ফেলো (৪২২), বাংলা একাডেমি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বপ্নে সংযোগের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাক্তন ছাত্র সমিতির নির্বাহী কমিটির সভা ১৭ সেপ্টেম্বর