বিশ্বে এই প্রথম স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাজনিত মৃগী রোগে গুরুতরভাবে আক্রান্ত এক কিশোরের মাথার খুলিতে পরীক্ষামূলকভাবে একটি যন্ত্র (ডিভাইস) স্থাপন করেছেন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকরা।
খিঁচুনি কমাতে ওরান নোলসন নামের ওই কিশোরের মাথায় অস্ত্রোপচার করে যন্ত্রটি বসানো হয় গত বছর অক্টোবরে লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে। এই যন্ত্রের নাম নিউরোস্টিমুলেটর, যা মস্তিষ্কের গভীরে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠিয়ে খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণে রাখে। যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে দিনের বেলায় নোলসনের খিঁচুনি ৮০ শতাংশ কমে গেছে। নোলসনের মা জাস্টিন বিবিসিকে বলেন, তার ছেলে এখন খুবই খুশি। তার জীবন এখন আগের তুলনায় অনেক ভাল কাটছে। খবর বিডিনিউজের।
যুক্তরাজ্যের সমারসেটের বাসিন্দা নোলসনের মাত্র তিন বছর বয়সেই লেনঙ–গ্যাস্টট সিন্ড্রোম দেখা দেয়। এটি মৃগী রোগের একটি মারাত্মক পর্যায়, যা শিশুদের স্নায়ুকে শৈশব থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং একপর্যায়ে শিশু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে যায়।
মৃগীরোগ নোলসনের শৈশব কেড়ে নেয়। দিনে দুই ডজন থেকে শতাধিকবার পর্যন্ত তার খিঁচুনি হত। নোলসনের মা জাস্টিন বলেন, তার ছেলের বিভিন্ন ধরনের খিঁচুনি হয়। কোনও কোনও সময় খিঁচুনিতে সে মাটিতে পড়ে যায়। প্রচণ্ডভাবে কাঁপে এবং জ্ঞান হারায়। খিঁচুনির কারণে কখনও কখনও নোলসনের শ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যেত। তখন তাকে বাঁচাতে জরুরি ওষুধের প্রয়োজন হত বলে জানান জাস্টিন। তিনি বলেন, নোলসনের অটিজমও আছে। তবে তার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল মৃগীরোগ। তিন বছর বয়সে সে ছিল বুদ্ধিদীপ্ত। কিন্তু খিঁচুনি শুরু হওয়ার পর কয়েকমাসের মধ্যেই তার অবস্থার অবনতি হয়েছে। সে অনেক দক্ষতা হারিয়ে ফেলেছে।
কিন্তু নোলসনের মাথার খুলিতে যন্ত্র স্থাপনের পর অবস্থার দারুণ উন্নতি হয়েছে বলেই জানিয়েছেন তার মা। তিনি বলেন, এখন দিনে খিঁচুনি প্রায় নেই বললেই চলে। আর রাতে খিঁচুনি উঠলেও মাত্রা সামান্য।
মৃগী রোগের চিকিৎসায় একটি ক্যাডেট প্রকল্পের অংশ হিসাবে নোলসনের মাথার খুলিতে যন্ত্র (ডিভাইস) বসানো হয়। এই প্রকল্পটি গুরুতর মৃগী রোগীদের গভীর মস্তিষ্ক উদ্দীপনার নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা মূল্যায়নের একটি সিরিজ পরীক্ষা। গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতাল, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, কিংস কলেজ হাসপাতাল ও অঙফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে চলছে প্রকল্পের কাজ। আর পিকোস্টিম নিউরোট্রান্সমিটার যন্ত্রটি তৈরি করেছে যুক্তরাজ্যের কোম্পানি অ্যাম্বার থেরাপিউটিকস।