স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেছেন, চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের বিষয়ে একটি কথা আমার কানে এসেছে, সেটি হলো এখানে আমরা ধনী মানুষের জন্য এই হাসপাতাল করছিনা। আমি বলব, আমরা বিশ্বমানের একটা হাসপাতাল বানাই, যেখানে ধনী–গরিব একই ধরনের চিকিৎসা পাবে। এখানে যদি আমরা ভালো ডাক্তার নিয়ে আসতে পারি, অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট আনতে পারি, ধনী মানুষরা যদি আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারে, তবে আমার মনে হয় তারা এখানেই চিকিৎসা নেবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে নগরীর সাগরিকা কাট্টলী ভূমি অফিসের পাশে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন ও নার্সিং ইনস্টিটিউটের ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে যান। এই চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন তৈরি হওয়ার পর যারা ধনী লোক আসবে, তাদের কাছ থেকে বেশি টাকা নিবেন। এই বাড়তি টাকা তাহলে আপনারা গরিব মানুষের জন্য ব্যয় করতে পারবেন। বিশ্বমানের যে চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেটা ধনীও পাবে, আবার গরিবও পাবে। ডাক্তারের চিকিৎসা সমান পাওয়া গেলেও ধনী লোক হয়তো এসি রুমে থাকবে আর গরিব লোক হয়তো সাধারণ একটা ওয়ার্ডে থাকবে।
নুরজাহান বেগম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি, আমার নিজের এলাকায় যা কিছু হয়েছে, সরকারের কিছুই ছিল না। একেবারে প্রাইমারি স্কুল থেকে মাদ্রাসা সবকিছু ব্যক্তির অনুদানে হয়েছে। কাজেই সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি ইনশাআল্লাহ আমরা পারব। একটা বিষয় আমি নিশ্চিত করতে চাই, সেটা হলো ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ মানুষ তৈরি করা। কারণ এই ফাউন্ডেশন শুধু ডাক্তারের বিষয় নয়। এখানে নার্সের বিষয় আসবে, টেকনোলজিস্টের বিষয় আসবে। অতএব জনবলটাকে যেন আমরা গুরুত্ব দিই। আমরা রমজানে নিয়ত করি ৩০টা রোজা রাখব, আমরা রোজা রাখতে পারি আলহামদুলিল্লাহ। ঠিক একইভাবে এখানেও বলছি, আমরা যদি নিয়ত করি ইনশাআল্লাহ সবাই মিলে ভালো কিছু করতে পারব।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আমি চট্টগ্রামের মেয়ে। চট্টগ্রামের জন্য যদি কিছু করতে পারি আমার নিজেরও খুব ভালো লাগবে। হার্টের কথা বললেই আমার শুরুতে যেটা মনে হয়, এখানে আমরা যারা উপস্থিত আছি কিংবা যারা শুনছেন প্রথম দায়িত্ব হলো প্রিভেনশনে যাওয়া। কেন হার্ট ডিজিজটা হবে? এটা তো আমরা ইচ্ছা করলে প্রিভেন্ট করতে পারি। আমরা বেশি বেশি করে গরুর মাংস খাব? ভাজাপোড়া খাব? সিদ্ধান্তটা আমাদেরকে নিতে হবে। প্রিভেনশনে না গেলে সারা বাংলাদেশকে যদি আমরা হাসপাতাল বানাই তাহলে রোগীর স্থান সংকুলান হবে না। তাই প্রিভেনশনে যাওয়ার জন্য আমাদের সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমরা যদি সচেতনতা বাড়াতে পারি তাহলে সম্ভব। কারণ এসডিজি গোলের যে জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে আমরা যেতে পারিনি। কাজেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে সমন্বিতভাবে দল মত নির্বিশেষে যেন আমাদের কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে পারি।
চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা সরকারে আছি সম্ভবত দুই মাসেরও কম সময়। হার্ট ফাউন্ডেশনের রিকুয়ারমেন্টগুলো আমাদের কাছে এখনো আসেনি। আসলে চট্টগ্রামে সবকিছু আমাদের কাছে যায় অনেক দেরিতে। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দেওয়ার জন্য ১৭৫ কোটি টাকার অনুমোদন নিয়েছি, যারা ৩০ বছর ধরে পাচ্ছে, তারাও পাবে। কিন্তু আপনাদের কোনো কাগজ আমাদের কাছে আসেনি। এগুলো তো শুরুতে হয়ে যায়। যাই হোক আপনাদের যদি কোনো রিকুয়ারমেন্ট থাকে সেগুলো আপনারা পাঠাবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এবং দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আসলে মানুষ চাইলে পারে না এমন কোনো কাজ নাই। তবে এজন্য তাকে চেষ্টা করতে হবে। আপনারা জানেন, চট্টগ্রামে মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যানসার ইনস্টিটিউট যেটি হয়েছে, সেখানে আমি, আজাদী এবং অন্যরা প্রায় ৩৫ কোটি টাকা নগদ তুলে দিতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে কেমোথেরাপির জন্য একটা মেশিন কেনা হয়েছে। সেই মেশিনের দাম হচ্ছে ৩০ কোটি টাকা। যেটার জন্য আমাদেরকে এখন ব্যাংকের ইন্টারেস্ট দিতে হচ্ছে। এই ৩০ কোটি টাকা যদি আমরা তুলে দিতে পারি তাহলে আমাদের সার্ভিস চার্জটা কমে যাবে। কারণ আপনারা জানেন, যখন ক্যানসার হয় তখন লোকটাও মারা যায় ফ্যামিলিও মারা যায়। আমরা যদি তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব করতে পারি তাহলে কিন্তু এটা আমাদের সাকসেস বলে মনে করব। আজকে যে হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হচ্ছে আমরা যদি চেষ্টা করি, তবে এখানেও সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় ভালো কিছু করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং সহসভাপতি এসএম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ ও ট্রেজারার নাসির উদ্দিন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. আবু তারেক ইকবাল, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, ইসি কমিটির সদস্য ডা. একেএম নাসির উদ্দিন, আর্কিটেক্ট আশিক ইমরান চৌধুরী প্রমুখ।












