বিশ্বব্যাপী বিপন্ন বাঘ, বনরুই, কচ্ছপ, হাঙ্গর ও শাপলাপাতাসহ বেশ কিছু বন্যপ্রাণীর আবাস এখনও টিকে আছে বাংলাদেশের স্থলজ ও জলজ পরিবেশে। কিন্তু স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে এদের একটা বড় অংশ আজ বিলুপ্তপ্রায়। ‘বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য দমনে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা’ শীর্ষক গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।
কর্মশালায় বলা হয়, বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য দমনসহ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ বন্যপ্রাণী অস্তিত্ব বিলীনের জন্য দায়ী সব ধরনের হুমকি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য-উপাত্ত বিস্তারিত ও সঠিকভাবে গণমাধ্যমগুলোতে তুলে ধরতে পারলে তা বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যের ধরন এবং গতিধারা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পেতে সাহায্য করবে। শুধু তাই ই নয়, এতে করে সরকারি কর্তৃপক্ষও বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধে উৎসাহী হবেন। ফলে এই ধরনের প্রজাতিগুলোকে চিরতরে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. আব্দুল আউয়াল সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী উক্ত কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কঙবাজার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল। বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্য এবং এ সংক্রান্ত অপরাধগুলোর প্রতিবেদনের
গুণগত মানোন্নয়নে এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সঠিক ও সম্পূর্ণ প্রতিবেদন লেখার দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশ ও বন অধিদপ্তর কঙবাজার এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম সমূহের ৩২ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
কঙবাজার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল তাঁর বক্তব্যে বলেন, বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য দমনে একটা বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা হলো অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা। বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সাংবাদিক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদসহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে সরকারের সাথে একাত্ম হয়ে লড়তে হবে। আমাদের বন্যপ্রাণীরা আমাদের সম্পদ। যদি আমরা দ্রুতই কোন পদক্ষেপ না নিই অচিরেই আমরা এদের চিরতরে হারিয়ে ফেলবো।
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. আব্দুল আউয়াল সরকার তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে, গ্রেপ্তার করতে এবং বিচারকার্য সম্পন্ন করতে দেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বন অধিদপ্তর এবং ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশ সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় কার্যকরী প্রশিক্ষণ কর্মশালা নিয়মিতভাবে পরিচালনা করছে। বন্যপ্রাণী ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও জনমত তৈরির মাধ্যমে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্যের বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরে গণমাধ্যমকর্মীরাও আমাদের এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
কর্মশালার প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাব্লিউসিএস বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ড. লস্কর মাকছুদুর রাহমান, সিনিয়র অ্যাডভাইজার মো. তারিকুল ইসলাম, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর সামিউল মোহসেনিন এবং এডুকেশন কো-অর্ডিনেটর নাদিম পারভেজ প্রমুখ।