গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছে নিপীড়িত গাজাবাসী। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি–বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গাজাবাসীর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ইংরেজি অক্ষরে ছবিতে লেখা রয়েছে, ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপস’ অর্থাৎ গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, সংহতি জানাই। আগামীকাল ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দিন।’ খবর বাংলানিউজের।
আজ বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, মানুষ ও মুসলিম হিসেবে এসব (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান–অফিস–আদালত) বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয়, বরং দলমত নির্বিশেষে সারাদেশের ছাত্র–জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাই–বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারব না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারব।
তিনি বলেন, এনসিপি, বিএনপি জামায়াত বা কোনো (রাজনৈতিক) দলের ব্যানারে নয় বরং দল–মত নির্বিশেষে ‘বাংলাদেশ’ ব্যানারে আগামীকাল আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি। প্রত্যেক জেলায় ছাত্র–জনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনো দল মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ হতে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক।
আজ শিক্ষাঙ্গনে ধর্মঘট, কাল বিক্ষোভের ডাক : বিডিনিউজ জানায়, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূ–খণ্ড গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ও পরীক্ষা বর্জন, অফিস আদালত বন্ধ রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। বিশ্বব্যাপী ডাকা এই কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও। এছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ সোমবার পাঠদান ও পরীক্ষা স্থগিত করেছে। দুই ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তরও বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছে জনসংযোগ দপ্তর।
গণহত্যা বন্ধের পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে এই কর্মসূচির পালনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। তারা সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান–পরীক্ষা বর্জন ও অফিস–আদালত বন্ধ রাখার জন্য দেশের ছাত্র–জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদ ও চলমান গণহত্যা বন্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিবৃতি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানান তারা।
আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান এবং দুপুর ১২টায় প্রতিটি শহরের সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল সহকারে শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে ছাত্রদল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস–পরীক্ষা স্থগিত : গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস–পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দুই ঘণ্টা দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।