বাজেট সহায়তা ও জলবায়ু খাতের একটি প্রকল্পে ৯০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সাত দিনের মধ্যে সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ খাতে আরও ৬৫ কোটি ডলার ঋণের অনুমোদন দিল বিশ্ব ব্যাংক। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটির গত শুক্রবারের পর্ষদ সভায় ঋণের এ অর্থ অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ বিনিয়োগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়িয়ে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে খরচ কমবে বাংলাদেশের। বন্দরের পরিচালন দক্ষতাও বাড়বে বলে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঋণ অনুমোদন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
নতুন এ টার্মিনাল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক। এর আগে গত ২২ জানুয়ারি বাজেট সহায়তা হিসেবে ৫০ কোটি ডলারের পাশাপাশি বাংলাদেশকে নগর উন্নয়নের আরেকটি প্রকল্পে ৪০ কোটি ডলারের ঋণ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।
‘বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এর আওতায় চট্টগ্রাম বন্দরের অদূরে এ টার্মিনাল স্থাপন করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পাশে বঙ্গোপসাগরের তীরে বে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ২০১৭ সালে কনসালটেন্ট নিয়োগ করা হয়। কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান ফিজিবিলিটি স্টাডি ও মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত মাস্টার প্ল্যানের মোড়ক উন্মোচন করেন।
১,২২৫ মিটার দীর্ঘ দুটি কন্টেনার টার্মিনাল এবং ১,৫০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালসহ মোট তিনটি টার্মিনাল রয়েছে মাস্টার প্ল্যানে। তিনটি টার্মিনালের দৈর্ঘ্য ৪.৯৫ কিলোমিটার। মাস্টার প্ল্যানে মোট ১১টি জেটি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। চ্যানেলে যথোপযুক্ত নাব্যতা থাকায় সেখানে ১২ মিটার ড্রাফটের এবং ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।
আবহাওয়া এবং সাগরের বড় বড় ঢেউ থেকে রক্ষা করতে একটি ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার বা ঢেউনিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বে টার্মিনাল থেকে বহিঃনোঙরের দূরত্ব এক কিলোমিটার।
মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দর এবং আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ যৌথভাবে নির্মাণ করবে। আধুনিক সুবিধার বে টার্মিনালটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালিত হবে। এতে সাগরের তীব্র ঢেউয়ের আঘাত, স্রোত ও বিরূপ আবহাওয়া থেকে বন্দর রক্ষা পাবে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।
বিশ্ব ব্যাংক বলছে, নির্মাণ শেষে গভীর সমুদ্রগামী পানামা ভেসেলসের মতো বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে গভীর সমুদ্রবন্দরে। এটি কার্যক্রম শুরু করলে জাহাজের মালামাল পরিবহনের সময় কমে আসবে। টার্মিনালটি চালু হলে আমদানি–রপ্তানি পর্যায়ে দৈনিক ১০ লাখ ডলার সাশ্রয় হওয়ার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল বাংলাদেশ, যা দেশটির সক্ষমতা সংকুচিত করে রাখছে। বে টার্মিনাল প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য গেম চেঞ্জার হবে। এটি পরিবহন খরচ, সময় কমিয়ে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াবে। বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার বাজার খুলবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন টার্মিনাল হিসাবে বে টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ বে টার্মিনাল প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২১০ কোটি ডলার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে উত্তর হালিশহরে বে টার্মিনালের অবস্থান। বে টার্মিনাল থেকে বহির্নোঙরের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার এবং চ্যানেলের প্রশস্থতা ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মিটার।
বে টার্মিনাল হলে ২৪ ঘণ্টাই সেখানে জাহাজ ভিড়তে পারবে। বে টার্মিনাল চ্যানেলে কোনো বাঁক নেই এবং যথোপযুক্ত নাব্যতা থাকায় সেখানে ১০ থেকে ১২ মিটার গভীরতার সর্বোচ্চ ৬ হাজার টিইইউজ বহনকারী জাহাজ বন্দরে ভেড়ানো সম্ভব হবে।
বে টার্মিনালে প্রাথমিকভাবে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। যেখানে একটি ১ হাজার ২২৫ মিটার দীর্ঘ কন্টেনার টার্মিনাল (কন্টেনার টার্মিনাল–১), একটি ৮৩০ মিটার দীর্ঘ কন্টেনার টার্মিনাল (কন্টেনার টার্মিনাল–২) এবং একটি ১ হাজার ৫০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। তিনটি টার্মিনালের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার।
মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ টার্মিনালে জেটি থাকবে ছয়টি। বে টার্মিনালে মোট ১৩টি জেটি থাকবে। বে টার্মিনালে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি সুবিধা থাকবে। প্রকল্পের পূর্ব দিকে থাকছে পোর্ট অ্যাকসেস রোড ও রেললাইন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর জোয়ারের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় দিনে দুবার জাহাজ যাতায়াত করতে পারে। বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার এবং ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভিড়তে পারে।