বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট নির্মাণে চীনা টিমের সাথে সমঝোতা

ঢাকায় কাল আনুষ্ঠানিক চুক্তি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১২ মার্চ, ২০২৩ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে প্রস্তাবিত ডিজাইনসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে চীনা প্রতিনিধি দল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একমত হয়েছে। আনুষঙ্গিক বিষয়ের মধ্যে বার্ন ইউনিটের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা, প্ল্যানিং, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সামগ্রিক ডিজাইন রয়েছে। মোট কথা চীনের অর্থায়নে দেড়শ শয্যার এই বার্ন ইউনিটে কি কি থাকবে তা নিয়ে দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে দুই পক্ষের মাঝে ‘ইন্সপেকশন মিনিটস’ শীর্ষক সমঝোতা সই হয়েছে। চমেক হাসপাতালের পক্ষে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান এবং চীনা প্রতিনিধিদলের পক্ষে টিম লিডার নিং টিংলং এতে সই করেন। চীনের পক্ষে ঢাকাস্থ চীন দূতাবাসের ইকোনমিক ও কমার্শিয়াল অফিসের সেকেন্ড সেক্রেটারি শি চেন ও চীনা টিমের সদস্য লিও বো সাথে ছিলেন। সারা দেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল সেন ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

এ সময় চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার, বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী, সানশাইন গ্রামার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাফিয়া গাজী রহমান, সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান, জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন, চমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. অংসুই প্রু মারমা, বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) ডা. ইমতিয়াজ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. সুমন বড়ুয়া, চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রাজিব পালিত, ডা. হুমায়ুন কবীর, ডা. জাহাঙ্গীর আলম, ডা. রুমা ভট্টাচার্যসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সমঝোতা সইয়ের পর চীনা প্রতিনিধিদলসহ সংশ্লিষ্ট সবাই প্রস্তাবিত জায়গা গোঁয়াছি বাগান এলাকা পুনরায় পরিদর্শন করেন।

গতকাল এই সমঝোতার পর আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। বিশেষায়িত এই বার্ন ইউনিট স্থাপনের বিষয়ে চীনা দূতাবাস ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাঝে আগামীকাল আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

চমেক হাসপাতালে বিশেষায়িত এই বার্ন ইউনিট স্থাপনের লক্ষ্যে ৫ সদস্যের চীনা টিম ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসে। ২৮ ফেব্রুয়ারি তারা চট্টগ্রামে আসে। ১২ দিনের কর্মযজ্ঞ শেষে গতকাল তারা ঢাকায় ফিরে গেছেন।

চট্টগ্রামে অবস্থানকালীন প্রত্যেক দিন তারা হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সাথে মতবিনিময় করেছেন। বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটের জন্য চূড়ান্ত করা গোঁয়াছি বাগানেও কয়েক দফা পরিদর্শন করেছেন। এর মাঝে ৩ মার্চ স্থাপত্য অধিদপ্তরের এক স্থপতিসহ চট্টগ্রামে আসেন সারা দেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণের দায়িত্ব পাওয়া ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি চীনা টিমের সাথে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। পরে চূড়ান্ত করা স্থান গোঁয়াছি বাগান পরিদর্শনে যান।

চীনের পক্ষ থেকে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে প্রাথমিক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন চায়না কিউয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের বিজনেস ম্যানেজার (সাউথ এশিয়া) লিও বো। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট হবে দেড়শ শয্যার। এর মাঝে ১০টি আইসিইউ, শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২৫টি এইচডিইউ এবং অত্যাধুনিক তিনটি অপারেশন থিয়েটার থাকবে। জরুরি বিভাগের পাশাপাশি বর্হিঃবিভাগও থাকবে। প্রাথমিকভাবে ৬ তলা ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। ভবনের প্রতি ফ্লোরে স্পেস থাকবে ১৬ হাজার বর্গফুট। বার্ন ইউনিটের ৬ তলা এই ভবনের পাশাপাশি সরঞ্জাম স্থাপনের জন্য একতলা বিশিষ্ট আলাদা আরেকটি ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, একতলা ভবনটিতে অঙিজেন প্ল্যান্ট, সাবস্টেশন ও জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন করা হবে। প্রায় এক একর জায়গার উপর বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট গড়ে তোলা হবে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় নির্ধারণ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। এর শতভাগই অনুদান সহায়তা। অর্থাৎ সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট করে দেবে চীন।

বিশেষায়িত এই বার্ন ইউনিট স্থাপনে ১৩ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইআরডির সাথে চীনা কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে জানিয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই তারা কাজ শুরু করতে আগ্রহী। আগামী ২ বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে বিশেষায়িত এই বার্ন ইউনিটের সেবা চালুর বিষয়ে চীনা টিমের প্রতিনিধিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

চূড়ান্ত করা স্থানে থাকা বিদ্যমান বিভিন্ন স্থাপনা সরাতে চীনা প্রতিনিধিদল অনুরোধ করেছে জানিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, তারা যত দ্রুত সম্ভব জায়গাটি প্রস্তুত করে দিতে বলেছে। চুক্তির পরই তারা কাজ শুরু করতে চায়। আমরা জায়গাটি বুঝিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওই জায়গায় অবৈধভাবে বসবাসরতদের স্থাপনা সরাতে ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে না সরালে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহায়তায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুদিনে পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধদুটি টিম চট্টগ্রামে, আজ বৈঠক হবে অ্যাকশন প্ল্যান