বিমল ঘোষ (১৯১০–১৯৮২)। একজন খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক। বিমল ঘোষের জন্ম ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড়ে। পিতা অনাদিপ্রসন্ন ঘোষ এবং মাতা ব্রজবালা দেবী। কলকাতার নারকেলডাঙা জর্জ হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে (বর্তমানের গভর্নমেন্ট কলেজ অব আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট) ভর্তি হন মুদ্রণ ও বিজ্ঞাপন বিষয়ক ক্ষেত্রে শিক্ষালাভের জন্য। বিমল ঘোষ ছাত্রাবস্থাতেই লেখালেখি শুরু করেন। এ সময়েই ছোটদের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে। আর্ট কলেজে শিক্ষালাভের পর কর্মজীবন শুরু করেন ‘অ্যাডভান্স‘ পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগে। পরে যোগ দেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। তাঁর উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকার ছোটদের আসর ‘আনন্দমেলা‘ প্রতিষ্ঠা হয় ও প্রসার ঘটে। এই সময় তিনি ‘মৌমাছি‘ ছদ্মনামে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তিনি তাঁর ছদ্মনাম আর আনন্দবাজার পত্রিকায় ছোটদের পাতা ‘আনন্দমেলা‘ সম্পর্কে কোন এক সাহিত্যসভায় বলেছেন – “আমিই ‘মৌমাছি’ ছদ্মনাম নিয়ে ‘আনন্দমেলা‘-র পরিচালনা করি। ….আমি মৌমাছি, আমার কাজই হল দেশের বিভিন্ন পুষ্পোদ্যান থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌচাক অর্থাৎ আনন্দমেলা–য় জমা করা এবং তোমাদের কাছে পরিবেশন করা। তোমাদেরও এই মধু সংগ্রহ করে ছড়িয়ে দিতে হবে শহরের, গ্রামের ও শহরতলির দূরদূরান্তে।” তিনি আনন্দমেলার মাধ্যমে গড়ে তোলেন শিশু ও কিশোরদের জন্য ‘মণিমেলা’ নামের সংগঠন। এই সংগঠন এক সময় বাংলা ও বাংলার বাইরে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। বহু স্থানে ‘মণিমেলা’র শাখা গড়ে উঠেছিল। ছোটদের জন্য তিনি অজস্র ছড়া কবিতা নাটক গল্প উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর রচিত শিশুসাহিত্যের সংখ্যা এক–শো চল্লিশ। ‘মায়াময়ূর’ তাঁর জনপ্রিয় নাটক। ‘চেঙাবেঙা’ বইটির জন্য তিনি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব উৎসবে তিনি ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে যোগ দেন। বিমল ঘোষ আকাশবাণীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত ছিলেন। বিমল ঘোষের প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – ‘ইউরোপের অগ্নিকোণে’, ‘কামাল পরদেশী’ ‘চেঙাবেঙা’। তিনি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ই মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।