আনোয়ারা : আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে সনাতনী ধর্মের হাজারো ভক্তের ভিড় হয়। গতকাল রবিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সৈকতের জলে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এবার তিথির কারণে মহানবমী পূজার পরই একই দিনে দশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে। এছাড়া কর্ণফুলী নদী, আনোয়ারার শঙ্খ নদ, ইছামতী খালসহ উপজেলার ১১ ইউনিয়নের বিভিন্ন পূজামন্ডপ এলাকার পুকুরেও প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাগর মিত্র বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও পারকি সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের ব্যক্তি বর্গের সহায়তায় শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, পারকি সৈকত ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নদী বা নিজেদের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ : হাটহাজারী উপজেলায় গতকাল বেলা তিনটা হতে বিভিন্ন স্পটে প্রতীমা নিরঞ্জন কার্যক্রম তদারকি করেন হাটহাজারী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন রিমন কান্তি মুহুরী, উপজেলা পূজা পরিষদের আহ্বায়ক লায়ন অশোক কুমার নাথ, প্রাক্তন সভাপতি দূর্গাপদ নাথ, লায়ন রনধীর চৌধুরী ভুলন, রাজন মুহুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক বাবলু দাশ, সদস্য সচিব উজ্জ্বল দত্ত, বনানী মজুমদার, বিশ্বনাথ চৌধুরী, মিলন চৌধুরী, কল্যাণ পাল, বিকাশ নন্দী, অরূপ ভট্টাচার্য, প্রিয়াশীষ চক্রবর্তী, রিপন নাথ, নাথুরাম ধর, রনি দাশ রকেট, জিকু শীল, লিটন নাথ প্রমুখ। হাটহাজারী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ আহবায়ক অশোক কুমার নাথ, সদস্য সচিব উজ্জ্বল দত্ত এক বিবৃতিতে সুস্ট ও সুন্দর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা সম্পন্ন হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন, র্যাব, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার, গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বাঁশখালী : বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, বাঁশখালীতে ৮৮টি সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা মণ্ডপ বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল থেকে বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থানে দুর্গাপূজা মণ্ডপ বিসর্জন দেওয়া হয়। মহালয়ার পর ৯ অক্টোবর পালিত মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ১২ অক্টোবর মহানবমী আর রবিবার ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে পুজার পরিসমাপ্তি ঘটে। বাঁশখালীতে এবার পুকুরিয়ায় ৭টি, সাধনপুরে ১৪টি, বাহারছড়ায় ৪টি, কালীপুরে ১৪টি, বৈলছড়িতে ৬টি, কাথরিয়ায় ২টি, সরলে ৪টি, পৌরসভার জলদীতে ১৭টি, চাম্বলে ১৩টি, নাপোড়ায় ২টি, শেখেরখীলে ১টি, শীলকূপে ৪টিসহ ৮৮টি মণ্ডপে সার্বজনীন পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদনের জন্য উপজেলা প্রশাসন, থানা প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কাজ করা হয়। বাঁশখালী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও কাউন্সিলর অধ্যাপক প্রনব কুমার দাশ ও সাধারণ সম্পাদক ঝুন্টু কুমার দাশ পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সাইফুল ইসলাম পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন আক্তার বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজাকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় পূজার্থী, থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানায়। এদিকে বাঁশখালীতে সারাদিন ব্যাপী পূজা বিসর্জন দেওয়া হলেও সবচেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা বিসর্জন দেওয়া সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রাম সাধনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত বিশাল দিঘীতে। এ সময় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হিমাংশু বিমল ভট্টাচার্য্য, কর্নেল (অব.) তপন মিত্র চৌধুরী, ইয়াং ওয়ান গ্রুপের জিএম দিপেশ রায় মিল্টন এবং সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান কে.এম. সালাহ্উদ্দীন কামাল, লায়ন শেখর কুমার দত্ত, ইউপি সদস্য করুণাময় ভট্টাচার্য, দেলোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
চন্দনাইশ : চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে চন্দনাইশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হলো সনাতনী সমপ্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার চন্দনাইশের ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ১২৮টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল রবিবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে স্ব–স্ব পূজা উদযাপন কমিটি।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমরান আল হোসাইন জানান, দুপুর ১০/১১টা থেকে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। প্রতিমা বিসর্জনের সময় যাতে কোন ধরনের বিশৃংখলা না ঘটে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। ফলে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই চন্দনাইশে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন শেষ হয়।
বান্দরবান : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে প্রতিমা বিসর্জ্জনের মাধ্যমে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব। রোববার (১৩ অক্টোবর) শারদীয় উৎসবের শেষ দিনে দুপুরে সাড়ে বারোটায় জেলা শহেরর স্থানীয় রাজারমাঠে আয়োজিত সার্বজনীন কেন্দ্রীয় দুর্গাপূজা মণ্ডপের প্রতিমাগুলো বিসর্জনের জন্য ট্রাকে তুলে সারাশহর ঘুরানো হয়। এ সময় জেলা সদরের বালাঘাটা, কালাঘাটা, হাফেজঘোনা, মেম্বার পাড়াসহ আশপাশের পূজামণ্ডপের প্রতিমাবাহী গাড়িগুলোও যুক্ত হয় প্রতিমা র্যালিতে।
শহর প্রদক্ষিণ শেষে দুটোর সময়ে বাজারস্থ সাঙ্গু নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এ সময় সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী–পুরুষ, তরুণ–তরুণী, শিশু–কিশোররা সমবেত হয় সাঙ্গু নদী চরে বিসর্জ্জনস্থলে। এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষদিনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। পুলিশ আনসার সদস্যদের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়। বান্দরবান দুর্গোপূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ দাস জানান, এবার জেলায় ৩১টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোউৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ১১টি, লামা উপজেলায় ৮টি, আলীকদম উপজেলায় ৫টি, রুমা উপজেলায় ১টি, রোয়াংছড়ি উপজেলায় ১টি, থানচি উপজেলায় ২টি এবং সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৩টি। প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব শেষ হয়েছে রোববার। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসাহ উদ্দীপনায় উৎসব পালনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পক্ষে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
কাপ্তাই : কাপ্তাই প্রতিনিধি জানান, কাপ্তাই উপজেলায় গতকাল (১৩ অক্টোবর) উৎসব ও আনন্দমুখর পরিবেশে কর্ণফুলী নদীর উপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশেনের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা বিসর্জনের সময় শতাধিক ছোট বড় ইঞ্জিন নৌকা বিভিন্ন রকমের প্রতিমা নিয়ে বিভিন্ন পূজা মন্ডপের ভক্ত ও অনুসারীরা কর্ণফুলী নদীতে নৌ র্যালি করেন। পরে সবাই শৃঙ্খলার সাথে কর্ণফুলী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেন।
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। মঙ্গল প্রদীপ জ্বেলে বিসর্জন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ভোক্তা অধিকারের সাবেক মহাপরিচালক এবং কাপ্তাই উপজেলার প্রাক্তন ইউএনও বাবলু কুমার সাহা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপার এ এস এম ফরহাদ হোসেন, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদ হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্বরুপ মহুরী, চন্দ্রঘোনা থানার ওসি আনচারুল করিম, কাপ্তাই থানার ওসি মোঃ মাসুদ এবং চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবির খিয়াং। বক্তব্য রাখেন উপজেলা দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দীপক কান্তি ভট্টাচার্য্য এবং সাধারন সম্পাদক প্রিয়তোষ ধর পিন্টু। বাবলু বিশ্বাস অমিতের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঝুলন দত্ত।
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মুসলমান জনগণও উপস্থিত ছিলেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক পূজা উদযাপন কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।