চট্টগ্রাম মহানগরীর সিআরবি এলাকায় অবস্থিত জরাজীর্ণ ও অচলপ্রায় রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতালকে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ–সুবিধা সম্বলিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতালে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরিদর্শন করলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। গতকাল দুপুরে পরিদর্শনকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আবু জাফর মিঞা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণের মাঝে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগে কোনো কর্মচারী হাসপাতাল নেই। চট্টগ্রাম মহানগর বিভাগীয় শহর হওয়ায় এখানে সরকারি সকল দপ্তরের কার্যালয় অবস্থিত। বর্তমানে বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এই শহরে বসবাস করেন। এখানে সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য বিশেষ কোনো হাসপাতাল না থাকায় তারা ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইতোমধ্যে দেশের সকল বিভাগে বিভাগীয় কর্মচারী হাসপাতাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিভাগেও বিভাগীয় কর্মচারী হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত প্রস্তাব অনুমোদন ও বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই অন্তবর্তীকালীন সিআরবির রেলওয়ে হাসপাতালকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মচারী হাসপাতাল হিসাবে ব্যবহার করার কার্যক্রম গ্রহণ করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মচারী হাসপাতালে রূপান্তর হলে হাসপাতালটির কার্যকারিতা ও উপযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা না হওয়ায় দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যাবে। এতে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ও বাঁচবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি সব দপ্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজন, পৌষ্যদের স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের জন্য মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নামমাত্র মূল্যে নিশ্চিত করা। আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালের নির্ভরশীলতা কমিয়ে অর্থ সাশ্রয় এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ভোগান্তিহীন, জবাবদিহিমূলক ও সাশ্রয়ী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা।
১৩ দশমিক ৭৮ একর জমিতে অবস্থিত হাসপাতালে তিনটি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। বহির্বিভাগে হাসপাতালের কর্তব্যরত কর্মচারীর সহযোগিতায় ডিএমএস কক্ষ, এঙ–রে কক্ষ, প্যাথলজি, ইসিজি কক্ষ, ডেন্টাল কক্ষ ইউনিট, ডটস কর্নার ও ডিসপেনসারি রয়েছে। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে কক্ষগুলোর ভেতরে অবস্থিত যন্ত্রপাতি, বেড অপরিছন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
অন্তঃবিভাগে ১০০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল এটি। ১টি পুরুষ ওয়ার্ড, ১টি নারী ওয়ার্ড, ১টি সার্জিক্যাল ওয়ার্ড, ১টি প্রসূতি ওয়ার্ড, নার্সরুম, ভিআইপি কেবিন, ১টি ক্রিয়েশন কক্ষ রয়েছে। বেশিরভাগ কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।
জরুরি বিভাগে কোনো রোগীর সেবা কার্যক্রম দেখা যায় না। অপারেশন বিভাগে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো অচল, অপরিষ্কার ও ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা কম। একজন ডাক্তার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসকের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ১২টির বিপরীতে মাত্র ১ জন ডাক্তার কর্তব্যরত আছেন। নার্সের মঞ্জুরিকৃত পদ ৬টি, এর বিপরীতে দায়িত্বরত আছেন ৩ জন। কর্মচারী মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৩৪৩টি। এর বিপরীতে বর্তমানে কর্তব্যরত আছেন ২৩০ জন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতালে রূপান্তরের পর বিভাগের সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা ই–রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে উপকারভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত হবেন। অনলাইনের মাধ্যমে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন। ডাক্তারের পরামর্শ মতে আইডি কার্ডের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রয়োজনীয় সেবা ফি পরিশোধ করতে পারবেন। ই–টোকেন সিস্টেম চালুর মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হবে। অনলাইনে আইডির মাধ্যমে রিপোর্ট দেখানো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতে যেকোনো বিভাগ থেকে সুলভ মূল্যে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ থাকবে। রোগ নিরূপণের জন্য আধুনিক প্যাথলজিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা সঠিক চিকিৎসা পাবেন।
হাসপাতালটি পরিচালিত হবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধান ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহযোগিতায়। জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তার মাধ্যমে যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে। হাসপাতালের সামগ্রিক কার্যক্রম কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং কমিটির কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট জনবল প্রেষণে প্রস্তাবিত হাসপাতালে পদায়ন করা হবে। এছাড়া চট্টগ্রামের স্থানীয় স্পেশালাইজড চিকিৎসকগণসহ এনজিও এবং বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় কর্মরত অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা প্রদান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে।