বিপ্লব উদ্যানে চুক্তি বহির্ভূত দোকান ভেঙে দিয়েছে চসিক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নগরের বিপ্লব উদ্যানে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দোতলার দোকান ভেঙে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) জাহানারা ফেরদৌস। এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর চুক্তির শর্ত লক্সঘন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ করা এক সারি বসার স্থান (দোকানের সামনে) ভেঙে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় চুক্তি বহির্ভূতভাবে যেসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছে তা নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলার জন্য সাতদিন সময় দেয়া হয়েছিল। এদিকে প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পাঁচ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালত। এতে বিপ্লব উদ্যানে কেন ‘অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রচার করা হবে না’ তা জানাতে পাঁচদিনের সময় দেয়া হয়েছে। বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের ইজারাদার স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টসের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের করা আবেদনের শুনানি শেষে গত বুধবার এ আদেশ দেয়া হয়।

প্রশাসক ছাড়াও কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছেপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. মোজাম্মেল হক, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম এবং প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদকে। এর আগে বিবাদী করে ইজারাদার মিজানুর রহমান জেলা জজ আদালতে আরবিট্রেশন মিস মামলা (১৭৫/২০২০) দায়ের করেন। এতে চুক্তির শর্তভঙ্গের অভিযোগ এনে বিপ্লব উদ্যানে চসিকের উচ্ছেদ অভিযান অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।

আবেদনে বাদী দাবি করেন, তফসিলে স্থিত দোকান ভেঙে ফেললে বাদী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া উভয়পক্ষের উদ্ভূত বিরোধ চুক্তি মোতাবেক নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিবাদী যেন বিপ্লব উদ্যানে প্রবেশ করতে না পারে, দুইতলা বিশিষ্ট দোকান না ভাঙে, নালিশী সম্পত্তির রূপ পারিবর্তন করতে না পারে, চুক্তি অনুযায়ী উন্নয়ন কাজে বাধা দিতে না পারে, লাগিয়তকৃত দোকানে ব্যবসা পরিচালনায় বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টসের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গতকাল বিকেলে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আদালত সিটি কর্পোরেশনকে শোকজ করেছে। এরপরও তারা আদালতের আদেশ অমান্য করে ভাঙছে। এখানে আরবিট্রেশন ক্লস আছে। সিটি কর্পোরেশনকে আমি নিজে আরবিট্রেশনের চিঠি দিয়েছি, আইনজীবী দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আরবিট্রেশনে আসবে না বলছে। আরবিট্রেশনে আসতে তো দুর্বলতার কিছু নেই। তিনি বলেন, আমি যদি ভুল করে থাকি আদালত যে রায় দিবে সেটা মেনে নিব। তৎকালীন মেয়র থেকে সব নিয়ম কানুন মেনে আমরা নিয়েছি। এখন আমাকে রাজনীতির মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে তো লাভ নাই। আমি প্রফেশনাল আর্কিটেক্ট, আমাকে রাজনীতির বল বানিয়ে লাভ নাই।

উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী বলেন, বিপ্লব উদ্যানে দুই তলায় ভাঙা হচ্ছে। কিছু বাকি আছে, সেটা কাল (আজ) শেষ হবে।’ ইতঃপূর্বে দেয়া সময় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই/তিনদিন সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা এরমধ্যে ভাঙেনি, তাই আমরা ভাঙলাম। আদালতের নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওসব জানি না। ফাইল হয়ে ভাঙার নির্দেশনা আসে, সেই আলোকে আমরা ভাঙতে চলে আসি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছে সেভাবে করছি।

নোটিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, এটা সমস্যা না। কোর্টে অভিযোগ করায় জানতে চেয়েছে। যেটা সত্য সেটা আমরা জানাব, নির্দিষ্ট সময়ে জবাব দিব। শোকজের সাথে দোকান ভাঙা স্থগিত রাখার কোনো সম্পর্ক নেই। না ভাঙার জন্য কোনো নির্দেশনাও দেয়নি। তারা অভিযোগ দিয়েছে সে আলোকে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে। তিনি বলেন, ইজারাদার প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশনের সাথে যে চুক্তি করেছে তা লক্সঘন করেছে। কথা ছিল, তারা একপাশে ১৫০ বর্গফুট করে ২৫টি দোকান করবে। কিন্ত তারা প্রতিটি দোকান ২০০ বর্গফুট করেছে। তারা দুইতলাতিনতলা স্ট্রাকচার করে ফেলেছে। ওয়াকওয়েতে বেঞ্চ দিয়ে চায়ের দোকানের আড্ডাখানা বানিয়েছে। হাঁটার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উন্নয়ন কাজ ছয়মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বললেও এক বছর নয় মাসেও শেষ করেনি। এই দীর্ঘসময়ে দোকান ছাড়া আর কিছুই তারা করেনি।

চুক্তির শর্ত লক্সঘনের বিষয়ে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ‘স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড’ এর চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, চুক্তির বাইরে অবৈধ কিছু করিনি। পার্কের ফ্যাসিলিটি বৃদ্ধির জন্য কিছু বিষয় যুক্ত করতে হয়েছে। ওনি (প্রশাসক) বলছেন দুইতলা স্থাপনা হয়েছে। আসলে ডেভেলাপমেন্টের প্রথম যে ডিজাইনটা ছিল সেটা ফার্স্ট কনসেপ্ট প্রেজেন্টেশন। পরে আমরা যখন রিয়েল গ্রাউন্ডে আসি তখন ডিজাইনটা ডেভেলাপ করি। আমি চেয়েছি, বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বা আর্বান ফুড প্লাজা করার। সেটা একপাশে নিয়ে যায় এবং রাস্তার দিকটা উন্মুক্ত করে দিই। চুক্তিতে ২৫টি দোকান ছিল। এর বাইরে পার্কটা চালাতে গেলে আরো অনেক কিছুর দরকার হয়, যেমন স্টোর লাগে। সেটা তো চুক্তিতে নেই। একইভাবে সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম, পুলিশ বক্স দিয়েছি সেগুলো তো চুক্তিতে নেই। কিন্তু পার্কের ফ্যাসিলিটি হিসেবে পরে যুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয়তলায় কিন্তু যে ফ্রেম দিয়েছি তা গ্রিনে লুক পাবে। তখন মনে হবে এটা সবুজ ঘাস।

উল্লেখ্য, সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর চসিকের সাথে স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড ও রি ফর্ম এর সাথে বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধনে ২০ বছরের জন্য চুক্তি হয়। গত ২৫ আগস্ট পরিদর্শনে যান চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তখন তিনি সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে চুক্তির শর্ত লক্সঘনের প্রমাণ পাওয়ায় চুক্তি বহির্ভূত স্থাপনা অপসারণ না করা পর্যন্ত ইজারাদার প্রতিষ্ঠানকে সেখানে নির্মিত দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার সৈকতের ৫২ স্থাপনা উচ্ছেদের বাধা কাটল
পরবর্তী নিবন্ধ২৫ হাজার কোটি টাকায় নির্মাণ হবে মেরিন ড্রাইভ