সুমাইয়া জেরিন চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন আত্মনির্ভরশীল হওয়ার। বাদ সাধে বিয়ে, পরিবারের চাপে বিয়ে হয়ে যায় জেরিনের। কিন্তু স্বপ্নটা রয়েই যায়। তার সেই স্বপ্ন আবারও জেগে ওঠে ফেসবুকে–অনলাইনে নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পোস্ট দেখে। উৎসাহিত হন অনলাইন ব্যবসার প্রতি। শুরু করেন তৈরি পোশাকের ব্যবসা।
দেশের অনেক নারীই বর্তমান সময়ে অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। বর্তমান যান্ত্রিক কর্মব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র আজ প্রযুক্তিনির্ভর। আর এতে পিছিয়ে নেই ঘরের নারীরা। তারা অনলাইনের সাহায্য নিয়ে বিাভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ঘরে বসে ফোন করে কিংবা মেসেজ পাঠিয়ে পছন্দের পণ্যটি ক্রেতাদের পৌঁছে দিচ্ছে অনলাইনে নারী উদ্যোক্তারা। আর এসবই সম্ভব হয়েছে ফেসবুক অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহারে। অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে সফলতাও পাচ্ছেন চাকরিবাকরি না করে ঘরে থাকা এই নারীরা। পুরুষের পাশাপাশি এখন নারী উদ্যোক্তারাও আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন অনলাইন ব্যবসাকে। এসব অনলাইন পেইজে যারা ব্যবসা করেন, তাদেরকে গ্রাহকের চাহিদা এবং রুচি দুটি মিলিয়েই পণ্য সংগ্রহ করতে হয়। গ্রাহকের চাহিদা আর পছন্দ নিয়ে প্রতি মুর্হূতে তাদের ভাবতে হয়।
বাংলাদেশের নারীদের ঘরে বসে কাজ করার এমন চমৎকার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে ই–কমার্স। গত কয়েক বছরে অনলাইনভিত্তিক ই–কমার্স ব্যবসার বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। আর দেশের অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশেরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। আজকের নারীরা শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সাংবাদিকতা, ক্রীড়াসহ নানা দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তেমনিভাবে অনলাইন ব্যবসা–বাণিজ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে, অনলাইন প্লাটফর্মের এই নারী উদ্যোক্তাদেরকে ব্যবসা করে টিকে থাকতে হয় নগরীর অভিজাত শো–রুমের কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্টের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এবং এই সকল বড় ব্যবসায়ীদের চেয়েও ভালো পণ্যটি গ্রাহকের হাতে পৌঁছাতে হচ্ছে। আবার একই সঙ্গে দামও সাশ্রয়ী রাখতে হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে বিভিন্ন অভিজাত শো–রুমের সঙ্গে অনলাইন ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতায় থাকতে গিয়ে লাভের অংশ ছেড়েই ব্যবসা করতে হচ্ছে নারী উদ্যোক্তাদের। তাছাড়া ওইসকল বড় বড় অনলাইন ফ্যাশন হাউস, জুয়েলারি হাউসসহ নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীরাও এখন অনলাইনমুখী। অন্যদিকে ব্যবসা পরিচালনার সুবিধাহেতু হাজার হাজার নারী এখন অনলাইন ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। ফলে ই–কমার্সের বাজারে একটা অসম লড়াই শুরু হয়েছে।
অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন যে, ই–কমার্সের মাধ্যমে এই ব্যবসায়ের বাড়বাড়ন্ত দিকটি ইতিবাচক। কেননা দেশে অনলাইনে ব্যবসা চালু হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই জনগণকে কষ্ট করে মার্কেটে যেতে হচ্ছে না। বরং ক্রেতা এখন ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে তার পছন্দের জিনিসটি অর্ডার দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিনতে পারছেন। তাছাড়া অনলাইনের আরেকটি সুবিধা হলো এখানকার বিক্রেতারা হরেদরে পণ্য বিক্রি না করে প্রায়শই বিশেষায়িত পণ্য বা বিশেষ মডেল বা মার্কেটের চালু পণ্যের বাইরেও দারুণ দারুণ পণ্য নিয়ে হাজির হচ্ছেন। যা ক্রেতাদেরকে পণ্য ক্রয়ের বৈচিত্রপূর্ণ স্বাদ এনে দেয়। অনলাইনের আরেকটি সুবিধা হলো, এক্ষেত্রে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে বিল পরিশোধও অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই করতে পারছেন। ফলে কোন ঝামেলা না থাকায় অনলাইন ব্যবসা মানুষের জীবনকে স্বাচ্ছন্দময় ও সহজ করে তুলছে। আর বিশেষজ্ঞরা এটিকেই প্লাস পয়েন্ট হিসাবে ভাবছেন। তারা মনে করেন, এই ব্যবসায়ে সীমিত লাভের বিষয়টি আরো কিছুদিন টালমাটাল থাকলেও আখেরে এটি স্থিতিশীল হবে। পাশাপাশি হঠাৎ গজিয়ে ওঠা হরেক ব্যবসায়ীরাও একটা পর্যায়ে গিয়ে বাজার থেকে ছিটকে পরবেন প্রতিযোগিতায়। কারণ এধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্রেতার বিশ্বস্ততা অর্জন করা, যা অনেকটাই কঠিন। তবে একবার বিশ্বস্ততা অর্জন করলে পরবর্তীতে সমস্যা হয় না। তাই অনলাইন ব্যবসায়ী নারীরা তাদের এই বিশ্বস্ততা অর্জন করবেন, ধরে রাখবেন, এগিয়ে যাবেন, টিকে থাকবেন এই প্রত্যাশা আমরা রাখতেই পারি।