বিপিসির মেরিন ফুয়েল বিপণন জটিলতা কাটছে

শুল্কমুক্ত সুবিধায় শুল্কায়নের সিদ্ধান্ত নীতিমালা সংশোধনের অনুরোধ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৫ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সমুদ্রগামী জাহাজের বাঙ্কারিংয়ে জটিলতা কাটতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে বাঙ্কারিংয়ের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো আমদানিকৃত ১৫ হাজার মেট্রিক টন লো-সালফার মেরিন ফুয়েল খালাসে শুল্কায়ন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কাটতে শুরু করেছে। দূর হয়েছে বাঙ্কারিংয়ের ট্যাংকার নিয়োগ নিয়ে নতুন জটিলতাও। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক সভায় নীতিমালা শুল্কযুক্ত শব্দের স্থলে শুল্কমুক্ত করে নীতিমালা সংশোধনের জন্য রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি বাঙ্কারিং সরবরাহের জন্য ৫০০ মেট্রিক টন সক্ষমতার ট্যাংকার ব্যবহারের আগের সিদ্ধান্তও বহাল রাখা হয়। শুল্কমুক্ত হিসেবে নীতিমালা সংশোধনে রাজস্ব বোর্ডের সম্মতি পেলেই বাঙ্কারিংক সরবরাহ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে বিপিসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) বিশ্বব্যাপী সমুদ্রগামী জাহাজের সালফার নিঃসরণ কমানোর জন্য তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ (৩.৫০%) সালফার ফুয়েল অয়েলের পরিবর্তে লো-সালফার হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) হিসেবে দশমিক ৫ শতাংশ (০.৫০%) মেরিন ফুয়েল বাঙ্কারিং করার নির্দেশনা দেয়। এ নিয়ে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার ‘বাংলাদেশের জলসীমায় যাতায়াতকারী দেশী বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে জ্বালানি সরবরাহের জন্য বাঙ্কারিং নীতিমালা’ গেজেট প্রকাশ প্রকাশ করে। তবে বাংলাদেশে আসা বিদেশি জাহাজগুলোর বাঙ্কারিংয়ে অনীহার কারণে লো-সালফার ফুয়েল বাঙ্কারিং নিশ্চিতের বিষয়টি দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে। সর্বশেষ দেড় লাখ টন মেরিন ফুয়েল আমদানির পদক্ষেপ নেয় বিপিসি। ৭৫ হাজার টন সরাসরি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এবং ৭৫ হাজার টন ‘জি টু জি’ পর্যায়ে আমদানি করা হচ্ছে। প্রথম চালানে ১৫ হাজার টন লো-সালফার মেরিন ফুয়েল আমদানি করে বিপিসি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আমদানিকৃত মেরিন ফুয়েল পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের প্রধান ডিপোতে খালাস হয়। কিন্তু শুল্কায়ন জটিলতার কারণে এখনো পর্যন্ত বিপণন শুরু হয়নি।
সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকৃত মেরিন ফুয়েল খালাসের পর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের ছাড়পত্র নিতে গেলে বাধারমুখে পড়ে বিপিসি। কারণ বাঙ্কারিং নীতিমালায় মেরিন ফুয়েলকে ‘শুল্কযুক্ত’ হিসেবে উল্লেখ করা ছিল। নীতিমালার ৭(গ) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংকার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে মূল্য পরিশোধের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ বাংকার গ্রহণের পূর্বে ইতঃপূর্বে গ্রহণকৃত বাংকারের তথ্য প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তেল বিপণন কোম্পানি কর্তৃক সরবরাহকৃত সকল তেল শুল্কযুক্ত হিসেবে সরবরাহ করা হবে।’ অথচ বাঙ্কারিংয়ের জন্য মেরিন ফুয়েল আমদানি শুল্কমুক্ত থাকার কথা।
অন্যদিকে বাঙ্কারিং নীতিমালা মোতাবেক ১০টি প্রতিষ্ঠানের ট্যাংকার নিয়োগের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে ১৫ সেপ্টেম্বর বিপিসিকে আইনি নোটিশ দেয় মেসার্স চিটাগাং এন্টারপ্রাইজ নামের একটি বাঙ্কার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আবার গত ৬ অক্টোবর নতুন বাঙ্কারিং নীতিমালা সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে বিপিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় মেসার্স শাহ আমানত মেরিন সার্ভিস। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দেশি বিদেশি বাঙ্কার সরবরাহের জন্য ১০০ থেকে ৩০০ মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েলের চাহিদা থাকে। কিন্তু নতুন নীতিমালায় ন্যুনতম ৫০০ টন সক্ষমতার ট্যাংকার সংগ্রহের পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা পে-অর্ডার জামানত নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। ওই চিঠিতে বাঙ্কারিংয়ের জন্য জাহাজের ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৩০০ মেট্রিক টন এবং জামানত হিসেবে ৫ লক্ষ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি রাখার সুপারিশ করা হয়।
এরপর নিজেদের আইনজীবীর মতামতের উপর ভিত্তি করে তিন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান থেকেও মতামত নেয়ার জন্য পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চিঠি দেয় বিপিসির বিপণন বিভাগ। বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এখনো মতামত পাওয়া যায়নি বলে গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন বিপিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে এর আগেই গত রোববার এক সভায় ৫০০ টনের কম সক্ষমতার ট্যাংকার নিয়োগের সুযোগ বাতিল করে দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাঙ্কার সাপ্লাইয়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘৫০০ টনের কম সক্ষমতার জাহাজকে বাঙ্কারিংয়ের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি প্রথম থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিলাম। ২০১৪ সালে যখন নীতিমালা হয় তখন আমরা চেয়েছিলাম বাঙ্কারিংয়ের জন্য ন্যূনতম ৩০০ টনের ট্যাংকারকে সুযোগ দেওয়া জন্য। তখন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল বঙ্গোসাগর সবসময় উত্তাল থাকে, ৩০০ টনের জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। তখন ৫০০ টনের জাহাজের কথা নীতিমালায় সংযুক্ত হয়।’ তিনি বলেন, ‘রোববার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের এক পর্যায়ে জানানো হয়, ডিজি শিপিং (সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর) থেকে বাঙ্কারিং দেওয়ার জন্য ৫০০ টনের নীচের ট্যাংকারকে অনুমতি দেবে না। এমএমডি (নৌবাণিজ্য অধিদপ্তর) থেকে ১০০০ হাজার টনের নীচের ট্যাংকারকে অনুমতি দেওয়া হবে না। সমুদ্রে জাহাজ চলবে ডিজি শিপিং ও এমএমডির নীতিতে। যেহেতু লো-সালফার মেরিন ফুয়েল আইএমও রেগুলেশন অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে, সেহেতু এমএমডির নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমারও ৩০০-৩৫০ টনের কয়েকটি ট্যাংকার রয়েছে। এতে আমি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
এ বিষয়ে বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মো. সামশুদ্দোহা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বাঙ্কারিং নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নীতিমালায় শুল্কযুক্তের স্থলে শুল্কমুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি রাজস্ব বোর্ডকে জানিয়ে দেওয়া হবে। নীতিমালা সংশোধন হওয়ার পরে শুল্কমুক্ত সুবিধায় মেরিন ফুয়েল শুল্কায়ন করার পর বাঙ্কারিং সরবরাহ দেওয়া শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ওই বৈঠকে ৫০০ টনের নীচের ট্যাংকারকে বাঙ্কারিং সরবরাহের কাজে নিয়োগের বিষয়েও আলাপ হয়েছে। তবে এমএমডির বাধ্যবাদকতার কারণে ৫০০ টনের নীচের ট্যাংকারগুলোকে বাঙ্কারিং সরবরাহের কাজে নিয়োগের আর সুযোগ নেই। কিন্তু ৫০০ টন সক্ষমতার ট্যাংকারে প্রয়োজনবোধে কম ফুয়েল পরিবহন করার সুযোগ রাখার বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সরকারের এ যুগ্ম সচিব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১১ জেলে ও কোল্ড স্টোরেজকে অর্ধলক্ষাধিক টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের কর আদায়কারী বরখাস্ত