সিনিয়র নেতাদের একাংশের বিদ্রোহের মধ্যে নতুন মহাসচিব বেছে নেওয়ার পর এবার জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং দুই কো–চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মজিবুর রহমান চুন্নুকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এই তিন জ্যেষ্ঠ ও বিদ্রোহী নেতাকে সব পদ–পদবীসহ দল থেকে গতকাল সোমবার অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেন দলের চেয়ারম্যান। এদিন বিকালে জাতীয় পর্ার্টির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়। তবে তিন নেতাই জিএম কাদেরের এ সিদ্ধান্ত মানছেন না; তারা বলছেন, এটি ‘অবৈধ ও গঠনতন্ত্র’ বিরোধী। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
এর আগে কাউন্সিলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নেতৃত্বপর্যায়ে কলহের মধ্যে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব পদে নিয়োগ দেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী এ নিয়োগের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়েছেন। সেই শূন্য পদে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব নিয়োগ দিয়েছেন। এ আদেশ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।
এর পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৫ জুন দলের মতবিনিময় সভায় সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো–চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং কো–চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মজিবুর রহমান চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এর তিন দিন পর গত ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সভায় এই তিনজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এমতাবস্থায় পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই তিনজনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ পার্টির সকল পদ–পদবি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ রাতে বলেন, ‘কাউন্সিল ডিক্লেয়ার করার পরে কাউকে সরানো যায় না। এই সিদ্ধান্ত কাউন্সিল থেকেই আসতে হবে। কাউকেই কারণ দর্শানো নোটিস ব্যতিত অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। এটা ন্যাচারাল জাস্টিস বিরুদ্ধ। প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্তও যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলেও তাকে কারণ দর্শানো নোটিস দিতে হবে। এগুলো সবই অবৈধ। আমরা মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিব মানি এবং আমরা আমাদের স্বপদে বহাল আছি।’
এ ব্যাপারে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। একজন পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি গঠনতন্ত্রকে ডিঙিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এতে তার স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। আমরা অবশ্যই এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।’
পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর মুজিবুল হক চুন্নু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। জাতীয় কাউন্সিল ডাকার পরে পদ থেকে বহিষ্কার করার কোনো এখতিয়ার নেই চেয়ারম্যান এর। এটা অগঠনতান্ত্রকি, বেআইনি। উনার সিদ্ধান্ত মানি না, উনার এখতিয়ার নেই। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
প্রসঙ্গত, মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বাদ দিয়ে ২০২১ সালের ৯ অক্টোবর মজিবুর রহমান চুন্নুকে মহাসচিব করেছিলেন জিএম কাদের।