বিদ্যুতের দাম বাড়ায় কৃষকের আয় কমবে : কৃষিমন্ত্রী

| শুক্রবার , ৩ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

বিদ্যুতের দাম বাড়ায় চাষিদের উৎপাদন ও আয় কমে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব তো পড়বেই। ফসলে পানি দিতে না পারলে উৎপাদন কম হবে। তবে জমিতে সার দেওয়া নিয়ে কৃষকরা ঝুঁকি নিতে চায় না। ফলে এদেশের চাষিরা নিজের বউয়ের গয়না কিংবা গরু বিক্রি করেও সার কিনবেন। হয়ত চাষিদের কষ্ট হবে, তার আয় কমে যাবে। তার যে লাভ হওয়ার কথা, সেটা হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে নেদারল্যান্ডসের পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডাম অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসির (ভিভিডি) এমপি ফিম ভ্যান স্ট্রিয়েনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। খবর বাংলানিউজের।

বিদ্যুতের দাম বাড়ায় সেচের ওপর প্রভাব পড়তে পারে কিনা এমন প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জ্বালানির প্রয়োজন আছে। কৃষি যেহেতু আমাদের একটি মৌলিক বিষয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এখাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই হিসেবে বিভিন্ন উপকরন্তু সার, রাসায়নিক,পানি, সেচ এগুলোর ওপর আমরা বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকি দিয়েছি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম এতই বেড়েছে, টনপ্রতি আড়াইশ ডলারের সার এক হাজার ডলারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দাম বাড়াননি। যখন অর্থ মন্ত্রণালয় প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছিল যে এ দামে আমরা সার দিতে পারবো না, আপনারা সারের দাম বাড়ান, তখন আমি নিজেও কনভিনসড (রাজি) ছিলাম। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথাও বলেছি। তিনি বলেছেন, না, সারের দাম বাড়াবো না। সব উন্নয়ন বন্ধ থাকলেও আমরা সারের দাম বাড়াব না। সেই নীতিতে তিনি এখনো অটল আছেন। এদেশের চাষিরা নিজের বউয়ের গয়না কিংবা গরু বিক্রি করেও সার কিনবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জমিতে সার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই তারা ঝুঁকি নিতে চায় না। হয়ত উৎপাদন ওই রকম কমবে না। কিন্তু চাষিরা ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু সরকারের হাতে এর (বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি) কোনো বিকল্পও নেই।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা তো চাই কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হোক। আমাদের ৬০৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন। তাদের জীবিকার জন্য কোনো নাকোনোভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যুতের দাম বাড়লে তাদের আয় কমে যাবে, সন্তানদের লেখাপড়াসহ তাদের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যেভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পড়েছে, তাতে সরকারেরও কোনো উপায় নেই। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার ঝুঁকি নিচ্ছে, প্রশ্নে হেসে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেটি তো ঠিকই। চাষির উৎপাদন কিছুটা কমে যাবে। তাদের আয় কিছুটা কমবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ না করলে এভাবে মাসে মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ত কিনা; জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইএমএফ তো সারের দামও বাড়াতে বলে। সারে যে ভর্তুকি দিই, সেটিই তো আইএমএফওয়ার্ল্ড ব্যাংক মানে না। তারা সারাজীবন বাধা দিয়ে আসছে। বিএনপির সময় ৯০ টাকা যে সার ছিল, আমরা ১৬ টাকায় দিয়েছি। আইএমএফওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কথা শুনতে গিয়ে অনেককেই বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। তখন তো প্রধানমন্ত্রীর ওপর অনেক চাপ ছিল। তারা বলতো, সারে ভর্তুকি দিলে তোমরা উন্নয়ন করবে কীভাবে? তাহলে স্কুলকলেজ ও রাস্তাঘাটের কী হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি না, বিনিয়োগ করছি। আমরা সেই বিনিয়োগের ফল পাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্ত্রীর মামলায় আলোচিত এসপি ফারুকী বরখাস্ত
পরবর্তী নিবন্ধলামায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে, আহত ২৫