বিদেশি বিনিয়োগ আরো বেশি পরিমাণে বাড়াতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২০ জুলাই, ২০২৩ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ ও লাভজনক। নিরাপদ পরিবেশ হওয়ায় বিভিন্ন খাতে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে পারেন অবলীলায়। বাংলাদেশ যেহেতু বিনিয়োগবান্ধব একটি দেশ। বিদেশিদের জন্য নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের পরিবেশ থাকায় বিদেশিরা কোনো আশঙ্কা ছাড়াই এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশিদের বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বা বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল, আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি, ইপিজেডসহ বিভিন্ন খাতে বিদেশিদের বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে।

এদিকে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৫৯ কোটি মার্কিন ডলার। শতকরা হিসাবে যা ২০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশে এফডিআই এসেছে ৩৪৮ কোটি ডলার। আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে যা ছিল ২৮৯ কোটি ডলার। তবে নতুন বিনিয়োগ বাড়লেও বিনিয়োগের স্টক কমেছে। সামগ্রিকভাবে বিশ্বে বিনিয়োগ কমেছে। আর একক দেশ হিসাবে বিনিয়োগে এগিয়ে রয়েছে চীন ও কম্বোডিয়া। এ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায় বেড়েছে ২০ শতাংশ।

আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে এফডিআইপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। সামগ্রিকভাবে গত বছর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোয় যেখানে এফডিআই প্রবাহ ১৬ শতাংশ কমেছে, সেখানে বাংলাদেশে ২০ শতাংশ বেড়েছে। সব এলডিসির পাওয়া মোট এফডিআইয়ের ৭০ শতাংশই পেয়েছে মাত্র ৫টি দেশ। এর মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। বাকি চার দেশ হলো ইথিওপিয়া, কম্বোডিয়া, সেনেগাল ও মোজাম্বিক।

বাংলাদেশে এমনিতেই এফডিআইয়ের পরিমাণ অনেক কম। সে তুলনায় গত বছর কিছুটা ভালো এফডিআই এসেছে। দেখতে হবে, এখন নতুন বিনিয়োগ কতটা আসছে। যাঁরা এখানে অনেক দিন ধরে ব্যবসা করছেন, তাঁরা মুনাফার একটি অংশ আবার বিনিয়োগ করেন। সেটা এফডিআইয়ে দেখানো হয়। সে জন্য নতুন বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

দেশে ২০২০ সালে এফডিআই হ্রাসের পর ২০২১ সালে আবার বাড়ে, যা পরের বছরও বজায় থাকে। ২০২১ সালে দেশে এফডিআই এসেছিল ২৮৯ কোটি ডলার। অন্য বছরগুলোর মধ্যে দেশে ২০১৫ সালে ২২৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ২৩৩ কোটি ডলার, ২০১৭ সালে এসেছিল ২১৫ কোটি ডলার ও ২০১৯ সালে ২৮৭ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছিল।

দেশে ২০২২ সালে এফডিআই বাড়লেও সামগ্রিক এফডিআই স্টক বা মোট বিনিয়োগের স্থিতি কিন্তু কমেছে। এই বছর বিনিয়োগের স্থিতি কমে ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০২১ সালে ছিল ২ হাজার ১৫৮ কোটি ডলার।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। এটি ইতিবাচক। তবে এই সংখ্যা এখনও সন্তোষজনক নয়। তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের খারাপ অবস্থা। এর মূল কারণ অবকাঠামোগত সমস্যা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অন্যতম। বর্তমান অবস্থায়, বিনিয়োগ বাড়ানো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। কারণ বিদেশিরা অনেক কিছু দেখে বিনিয়োগ করে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস (সহজে ব্যবসা করা সংক্রান্ত) রিপোর্ট। এটি রিপোর্টে বাংলাদেশকে আরও ভালো করতে হবে।

কিছুদিন আগে পত্রিকান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে সবচেয়ে বড় বাধা সাতটি। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দুর্নীতি। এরপরেই আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে আইনের দ্রুত প্রয়োগের অভাব, সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মাত্রাতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ, দুর্বল অবকাঠামো ও গ্যাসবিদ্যুৎ সংকট, জমির অভাব ও ক্রয়ে জটিলতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় অঙ্কের ঋণ জোগানে সক্ষমতার অভাব এবং স্থানীয়দের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যোগসূত্র ও সমন্বয়ের অভাব। এর বাইরেও বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সুশাসনের অভাবকে দায়ী করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা প্রথমেই বড় বাধায় পড়েন যোগাযোগের ক্ষেত্রে। সাধারণত দেশে বিদেশি বড় বিনিয়োগ আসে দেশি উদ্যোক্তার হাত ধরে। কিন্তু দেশের বিনিয়োগকারীরা যৌথ উদ্যোগে কারখানা করতে আগ্রহী নন। তারা একক মালিকানায় শিল্প স্থাপনেই আগ্রহী বেশি। ফলে বিনিয়োগ সম্মেলন, আমদানিরপ্তানির মাধ্যমে বিদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যে সম্পর্ক হয় তাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশি বিনিয়োগকারীদের হাত ধরেই বিদেশি বিনিয়োগ আনা সহজ। এ কারণে দেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিদেশি উদ্যোক্তাদের একটি সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে হবে। এতে বিদেশি বিনিয়োগ আসা সহজ হবে।

অর্থনীতিবিদরা আরও বলেন, সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কীভাবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা। দেশে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হয়েছে। এখন কীভাবে এক দরজায় সব সেবা দিয়ে বিদেশিদের সেখানে আকর্ষণ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে