প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীতের আগমনে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিমানবন্দরসহ সকল প্রবেশ পথে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা এবং বিদেশ ফেরতদের কোয়ারান্টাইনে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন আবার সময় এসে গেছে, যারা বাইরে থেকে আমাদের দেশে আসবেন তাদের পরীক্ষা করা, কোয়ারেন্টাইনে রাখা-এটা আমাদের এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি পোর্টে আগের মত ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কেউ ঢুকতে গেলেই করোনাভাইরাস নিয়ে ঢুকছে কিনা-সেটা পরীক্ষা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমি আশা করি, সেটা আপনারা করবেন। শেখ হাসিনা গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস-২০২০ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসসের।
তিনি ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। আজকে যারা তরুণ-যুবক ভবিষ্যতে এই দেশটি তারাই পরিচালনা করবে উল্লেখ করে ’৭৫ থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত ২১ বছর এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক পরবর্তী আরও ৮ বছর জাতির জীবন থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। ৭৫ এর পর দেশ যে অবস্থায় ছিল, সে রকম ব্যর্থতায় পুনরায় পর্যবসিত হোক তাঁর সরকার চায় না, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেরকম অন্ধকার যুগ আর বাংলার মানুষের জীবনে যেন না আসে। তাঁরা যে আলোর পথে আজ যাত্রা শুরু করেছে, সেটাই যেন আমরা ধরে রাখতে পারি।
যুবকদের জন্য সরকার প্রদত্ত নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে নিজেদেরকেই নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক বা উদ্যোক্তা হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। তাঁর সরকার ফ্রিল্যান্সারদের স্বীকৃতির জন্য সনদ প্রদানের চিন্তা-ভাবনা করছে বলেও তিনি অনুষ্ঠানে জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস-২০২০ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেট এবং খাম ও অবমুক্ত করা হয়। ‘মুজিবর্ষের আহ্বান, যুব কর্মসংস্থান,’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সারাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য তাঁর সরকার ঘোষিত ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা দিয়েছি যেন আমাদের অর্থনীতির গতিটা অব্যাহত থাকে। তাঁর সরকারের যথাযথ পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতি এখনও সচল রয়েছে, যেটা অনেক উন্নত দেশও এখন করতে পারছে না,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এরমাঝেই পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প এবং রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান। যেগুলো সম্পন্ন হলে আরো বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তাঁর সরকার মুজিববর্ষে শতভাগ গৃহ আলোকিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, বিদ্যুৎ দিচ্ছি, রাস্তা-ঘাট করে দিচ্ছি, পাশাপাশি নৌপথ, রেলপথ, বিমান সব পথগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য আমাদের যুব সমাজের মাঝে যে মেধা, মনন আছে তা যেন তারা কাজে লাগাতে পারে। তারা যেন নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। নিজেদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। শুধু দুই পাতা পড়েই চাকরির পেছনে ছোটাছুটি না করে।’ যোগ করেন তিনি।
যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থান শুরু বা স্টার্ট আপের জন্য মূলধন হিসেবে তাঁর সরকার বাজেটে বরাদ্দ রেখেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইসিটি ক্ষেত্রটা এখন সবথেকে আধুনিক এবং সেজন্য যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, যুব সমাজকে বলছি, নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করতে হবে। আমিই বস হব। আমিই কাজ দেব। নিজের মধ্যে যে শক্তিটা আছে, সেটা কাজে লাগাতে হবে।