ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলানের বিতর্কিত শিল্পকর্ম ‘কমেডিয়ান’ যেখানে একটি কলা দেয়ালে ডাক্ট–টেপ দিয়ে আটকানো হয়েছে। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের সোথবি‘স নিলামে ৳৬.২ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে। এই কলাটি মাত্র ৳০.৩৫ ডলারে ম্যানহাটনের আপার ইস্ট সাইডের একজন বাংলাদেশি ফল বিক্রেতার কাছ থেকে কেনা হয়েছিল।
৬.৯ মিলিয়ন ডলারে ডাক্ট–টেপ দিয়ে লাগানো একটি কলা বিক্রি হওয়া নিঃসন্দেহে মানবতার মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ওপর প্রশ্ন তোলে। এটি অনেকের কাছে আধুনিক সমাজের অতিরিক্ত ভোগবাদ, আড়ম্বর এবং অর্থহীনতাকে তুলে ধরে। এ ধরনের ঘটনা কয়েকটি দিক তুলে ধরতে পারে:
অর্থহীনতাকে পণ্যীকরণ: আধুনিক শিল্পে অবাক করার ক্ষমতাই কখনো কখনো মূল্যের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। এরকম শিল্পকর্ম প্রচলিত ধারণাগুলো ভেঙে চমক সৃষ্টি করে, এবং সেই চমকই বাজারে বিশাল দামে বিক্রি হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এমন অদ্ভুত কিছুতে এত মূল্য দেয়া কি মানবিক মূল্যবোধের অপচয় নয়?
মানবতার সংকট ও অর্থহীনতায় নিমজ্জন: এত বিপুল অঙ্কের অর্থ এমন কিছুতে ব্যয় করা, যা বাস্তবিকভাবে মানুষের জীবন বা সমাজে কোনো প্রভাব ফেলে না, এটি কি আমাদের নৈতিক অধঃপতনের প্রতিচ্ছবি নয়? বিশ্বের অনেক জায়গায় মানুষ যখন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের শিকার, তখন এমন অর্থ অপচয় নিন্দনীয়।
ব্র্যান্ডিং ও গল্পের শক্তি: শিল্পকর্মটির নিজস্ব কোনো মূল্য হয়তো নেই, কিন্তু এটি তৈরির পেছনের গল্প এবং শিল্পীর পরিচিতি সেটিকে মূল্যবান করে তুলেছে। এটি দেখায়, বাস্তব গুণাগুণের চেয়ে মানুষের উপলব্ধি এবং প্রেক্ষাপট কেমনভাবে মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলে।
ধন–সম্পদের বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি: এটি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্যের গভীরতা তুলে ধরে। যখন কিছু মানুষ শুধুমাত্র ‘মজার’ জন্য এত বিপুল অর্থ ব্যয় করতে পারে, তখন অনেক মানুষ দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য সংগ্রাম করছে।
ধন–সম্পদের বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি: অর্থবিত্তের অপব্যবহার ও প্রদর্শনবাদ। ডাক্ট–টেপ দিয়ে লাগানো একটি কলার জন্য ৬.৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার ঘটনা আধুনিক সমাজের ধন–সম্পদের বৈষম্যকে নির্মমভাবে তুলে ধরে। এটি দেখায়, একদিকে পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্র অংশের মানুষ যাদের হাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ কেন্দ্রীভূত, তারা এমন অর্থ এমন জিনিসে ব্যয় করছে যা বাস্তবিক অর্থে প্রয়োজনীয় নয়। অন্যদিকে, পৃথিবীর একটি বড় অংশের মানুষ দিন কাটাচ্ছে দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও মৌলিক চাহিদার অভাবে।
প্রথমত, সহজ অর্থের প্রভাব। বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদশালী ব্যক্তিদের কাছে অর্থ উপার্জন অনেক সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে উত্তরাধিকার, শেয়ার বাজার, বা বিলাসী ব্যবসার মাধ্যমে। এই সহজে উপার্জিত অর্থ অনেক সময় কম গুরুত্বপূর্ণ বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে ব্যবহার করা হয়। এটি অনেক ক্ষেত্রে শুধু সামাজিক অবস্থান বা ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যই করা হয়।
দ্বিতীয়ত, প্রদর্শনবাদ ও সামাজিক প্রতিযোগিতা। এই ধরনের কেনাকাটা মূলত একধরনের সামাজিক প্রদর্শনবাদ বা ‘শো–অফ’–এর অংশ। অনেক ধনী ব্যক্তি এমন কিছু কেনেন, যা তাদের জীবনযাপনে কোনো বাস্তব মূল্য যোগ করে না, বরং তাদের সামাজিক অবস্থানকে ‘ভিন্ন’ বা ‘উন্নত’ হিসেবে তুলে ধরে। ডাক্ট–টেপ দিয়ে লাগানো কলাটি এমন একটি উদাহরণ, যেখানে বাস্তব মূল্যহীন একটি বস্তু শুধু তার ব্যতিক্রমী উপস্থাপনার কারণে বিলাসিতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
তৃতীয়ত, বৈষম্যের গভীর প্রভাব। যখন সমাজের এক শ্রেণি বিলাসিতার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করতে পারে, তখন আরেক শ্রেণি দু’বেলা পেট ভরানোর জন্য সংগ্রাম করে। এটি শুধু অর্থনৈতিক বৈষম্য নয়, বরং সামাজিক ও নৈতিক বৈষম্যেরও ইঙ্গিত দেয়। একটি সাধারণ কলার জন্য যে অর্থ ব্যয় হয়, তা দিয়ে হয়তো একটি গ্রামে শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হতো, বা ক্ষুধার্ত মানুষের পেট ভরানোর ব্যবস্থা করা যেত।
চতুর্থত, অপরিণামদর্শিতা ও বৈষয়িকতায় নিমজ্জন। ধনীদের অনেকেই সহজে উপার্জিত অর্থকে মূল্যহীন কাজ বা কেনাকাটায় ব্যবহার করেন, যা মানবিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো অবদান রাখে না। এটি শুধুমাত্র তাদের সামাজিক অবস্থানকে জাহির করার জন্য এবং একে অপরের সাথে ‘কে বেশি প্রভাবশালী’ তা দেখানোর প্রতিযোগিতার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনাটি একটি বৃহত্তর বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে। অর্থ ও সম্পদের এমন অপব্যবহার কেবল ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি পুঁজিবাদী সমাজের গভীর সমস্যাকে চিহ্নিত করে। যেখানে সম্পদশালী ব্যক্তিরা তাদের অর্থ কম গুরুত্বপূর্ণ জিনিসে ব্যয় করতে সক্ষম, সেখানে দরিদ্রদের মৌলিক অধিকারও অনেক সময় অস্বীকৃত থেকে যায়। এটি আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, এবং মানবতার প্রতি দায়িত্ববোধ নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।
তবে, অন্য একটি দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, এ ধরনের শিল্প সমাজকে আয়নার মতো সামনে তুলে ধরে। এটি আমাদের চমকে দিয়ে বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে এমন প্রশ্ন তোলে আমরা আসলে কী মূল্যায়ন করি এবং কেন?
ব্র্যান্ডিং ও গল্পের শক্তি: শিল্পকর্মের মূল্য নির্ধারণে প্রেক্ষাপট ও কাহিনির প্রভাব
শিল্পকর্মের নিজস্ব গুণাগুণ হয়তো কখনো কখনো অতি সাধারণ বা নগণ্য হতে পারে, ডাক্ট–টেপ দিয়ে লাগানো একটি সাধারণ কলা। কিন্তু এর মূল্যবান হয়ে ওঠার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হলো গল্প এবং ব্র্যান্ডিং। আধুনিক শিল্পের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা দেখায় কীভাবে মানুষের উপলব্ধি ও আবেগ কোনো কিছুর মূল্যকে প্রভাবিত করে।
প্রথমত, গল্পের শক্তি। শিল্পকর্মটি কেন এবং কীভাবে তৈরি হলো? এই কাহিনিটি অনেক সময় এর আর্থিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্য বৃদ্ধি করে। কলাটির উদাহরণে ধরা যাক, শিল্পী এটিকে শুধু একটি কলা হিসেবে উপস্থাপন করেননি; এটি সমাজে বিদ্যমান ভোগবাদ, অর্থনৈতিক অসমতা এবং শিল্পের ধারণার প্রতি একটি প্রশ্ন ছিল। এই গল্প বা দর্শন মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে, এবং সেই বৌদ্ধিক চ্যালেঞ্জই অনেকের কাছে এর মূল্যবান দিক।
দ্বিতীয়ত, শিল্পীর পরিচিতি ও খ্যাতি। এই শিল্পকর্মটি যদি কোনো অপরিচিত শিল্পী বানাতেন, তাহলে এর প্রতি আগ্রহ খুবই কম হতো। কিন্তু শিল্পীর আগে থেকেই থাকা খ্যাতি ও তার কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ এটি আলাদা মাত্রা দেয়। এটি প্রমাণ করে যে, একজন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড হিসেবে শিল্পীর নাম তার কাজের বাজারমূল্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
তৃতীয়ত, মানুষের উপলব্ধির প্রভাব। এই কলাটি বাস্তবে হয়তো কোনো ব্যবহারিক উপকার করে না, বা এটি তৈরি করতেও কোনো বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু এটি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটি সাধারণ জিনিসকে অসাধারণ হিসেবে দেখানোর দৃষ্টিভঙ্গি তাতেই মানুষের উপলব্ধি বদলে যায়। শিল্পকর্মের সঙ্গে জুড়ে থাকা দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিত এটিকে একটি ‘কথোপকথনের কেন্দ্রবিন্দু’তে পরিণত করে।
চতুর্থত, ব্র্যান্ডিং–এর কৌশল। এই কলাটির প্রদর্শনী, তার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া, এবং একে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি এসবই একটি পরিকল্পিত ব্র্যান্ডিং–এর অংশ। শিল্পকর্মটি আসলে একটি ‘ভিজ্যুয়াল স্টেটমেন্ট’ হয়ে উঠেছে, যা শুধু প্রদর্শনী বা নিলামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে প্রবল আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এর প্রতি মানুষের আকর্ষণ এবং এর আর্থিক মূল্য অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
সবশেষে, এটি প্রমাণ করে যে, শিল্পকর্মের বাস্তবিক বা উপযোগী মূল্য ছাপিয়ে তার প্রেক্ষাপট, গল্প, এবং ব্র্যান্ডিং সেটিকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান করে তুলতে পারে। মানুষের আবেগ, কৌতূহল এবং দৃষ্টিভঙ্গি কোনো কিছুর আর্থিক মূল্য নির্ধারণে কীভাবে প্রধান ভূমিকা পালন করে, তা এ ধরনের উদাহরণে স্পষ্ট হয়।
নিলামে এই উচ্চ মূল্যে বিক্রির পর, ক্রেতা জাস্টিন সান, যিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্যোক্তা, উল্লেখ করেছেন যে তিনি ভবিষ্যতে আরও কলা কিনতে আগ্রহী, বিশেষ করে সেই বাংলাদেশি বিক্রেতার কাছ থেকে। এটি শিল্পকর্মটির প্রতীকী মূল্য এবং এর পেছনের সরবরাহ চেইনের প্রতি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এই ঘটনা শিল্পের মূল্যায়ন, সরবরাহ চেইন, এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপর বৈশ্বিক বাজারের প্রভাব নিয়ে নতুন আলোচনা উত্থাপন করেছে। এটি দেখায় কীভাবে একটি সাধারণ পণ্য, যেমন একটি কলা, সৃজনশীল উপস্থাপনার মাধ্যমে বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
জাস্টিন সান একজন মানুষ যখন দেয়ালে ডাক্ট–টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলা ৳৬.২ মিলিয়ন ডলারে কেনেন, তখন অনেকেই তাকে পাগল ভাবেন। কিন্তু এই গল্পের শেষটা সবাইকে চমকে দিয়েছে। চীনে জন্ম নেওয়া জাস্টিন সান সবসময়ই বড় স্বপ্ন দেখেছেন। ২০১৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ঞজঙঘ, একটি ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম যা ইন্টারনেটকে বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে কাজ করে। তার নেতৃত্বে, ঞজঙঘ দ্রুত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর একটি হয়ে ওঠে। কিন্তু এটি ছিল তার যাত্রার শুরু মাত্র।
এরপর সান আরও সাহসী পদক্ষেপ নেন। তিনি বিটটরেন্ট কিনে ব্লকচেইনের মাধ্যমে ফাইল শেয়ারিং পুনর্গঠিত করেন এবং চড়ষড়হরবী, শীর্ষ ক্রিপ্টো এঙচেঞ্জগুলোর একটি কিনে নেন। তার এই পদক্ষেপগুলো তাকে ক্রিপ্টো দুনিয়ার শীর্ষ ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। তবে এই যাত্রায় বিতর্কও কম হয়নি।
২০২৪ সালের নভেম্বরে জাস্টিন সান শিল্পের জগতে প্রবেশ করেন এক অভিনব স্টাইল নিয়ে। তিনি মরিজিও ক্যাটেলানের বিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘কমেডিয়ান’ কেনেন, যা দেয়ালে ডাক্ট–টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলা। সথেবিজ–এর নিলামে ৳৬.২ মিলিয়ন ডলারে এটি কেনার ঘটনাই ছিল চমকপ্রদ। তবে এর পর যা হলো, তা অবিশ্বাস্য।
হংকংয়ে এক প্রেস ইভেন্টে, সান দেয়াল থেকে কলাটি খুলে সবার সামনে খেয়ে ফেলেন। তার মন্তব্য? ‘এটা অন্য কলার তুলনায় অনেক ভালো।’ সেই এক কামড়ে ৳৬.২ মিলিয়ন মূল্যের শিল্পকর্মটি শেষ হয়ে যায় এবং এটি হয়ে ওঠে এক অনন্য পারফরমেন্স শিল্প।
জাস্টিন সানের এই কর্মকাণ্ড কেবল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নয়, এটি একটি বার্তাও দেয়। এই কলা একটি প্রতীক। এটি দেখায় যে, একটি সাধারণ জিনিস কীভাবে শিল্প, গল্প এবং দৃষ্টি দিয়ে মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে। কলাটির দাম ঠিক ততদিনই ছিল যতদিন এটি দেয়ালে আটকানো ছিল। সান সেটি খেয়ে ফেলার মাধ্যমে এটিকে পরিণত করেন এক চিরন্তন গল্পে।
সান শুধু এই কলা দিয়ে আলোচনায় আসেননি; এর আগে তিনি ৳৪.৫ মিলিয়ন খরচ করে ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে এক লাঞ্চের আয়োজন করেছিলেন। তার প্রতিটি পদক্ষেপ, বিশেষ করে উচ্চ প্রোফাইল ক্রিপ্টো প্রকল্পে বিনিয়োগ, তাকে মনোযোগের কেন্দ্রে নিয়ে আসে।
কলাটি খাওয়া ছিল একটি বার্তা:
মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা অপরিহার্য। আপনার সেরা আইডিয়াও কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না যদি মানুষ তা দেখতে না পায়। দৃষ্টি আকর্ষণই আধুনিক জ্বালানি। ডিজিটাল দুনিয়ায় মনোযোগ পাওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা।
জাস্টিন সানের এই কর্মকাণ্ড শেখায় যে, বড় কিছু করতে হলে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সাহসী হতে হবে। তিনি কলাটিকে এক সাধারণ বস্তু থেকে শিল্প এবং গল্পের প্রতীকে রূপান্তরিত করেছেন, যা দেখায় যে গল্প বলার ক্ষমতা কীভাবে অর্থ ও মূল্যকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
জাস্টিন সান যা করেছেন, তার মূল উজ্জ্বলতা ছিল কৌশলে। সবাই ৳৬ মিলিয়ন একটি কলার জন্য দেওয়ার অযৌক্তিকতায় মনোযোগ দিয়েছিল, কিন্তু তারা আসল কৌশলটি বুঝতে পারেনি। এটি কলার ব্যাপারে ছিল না; এটি ছিল জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ। সেই ৳৬ মিলিয়ন ছিল একটি কেনাকাটা নয়, বরং এটি ছিল একটি বিশ্বব্যাপী মনোযোগে বিনিয়োগ।
প্রতিটি প্রধান সংবাদমাধ্যম এ ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছে, এবং এটি একটি বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর মাধ্যমে সান পৃথিবীজুড়ে বিজ্ঞাপন পেয়েছেন, অথচ খুব কম খরচে। সান ঠিক জানেন কীভাবে সিস্টেমটিকে কাজে লাগাতে হয়।অথচ, এই কলার দাম শখের মতো একটি সস্তা বিজ্ঞাপন নয়; এটি একটি স্বতন্ত্র মার্কেটিং কৌশল, যেখানে একটি বিতর্কিত পদক্ষেপই তাকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দিয়েছে। একদিকে এটি মনে হতে পারে যে তিনি কিছু ‘অদ্ভুত’ কিনেছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি একটি অভিনব বিপণন কৌশল চালিয়েছেন, যা তাকে এবং তার ক্রিপ্টো ইম্পায়ারকে এক নতুন স্তরে নিয়ে গেছে।
লেখক: সিনিয়র ম্যানেজার, স্ট্র্যাটেজিক সেলস,
এলিট পেইন্ট এন্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রীজ লি.