বিতর্ক না থাকলে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গঠন সহজ হয় না : তথ্যমন্ত্রী

নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে বিতর্ক প্রতিযোগিতা বড় ভূমিকা রাখে : আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রাষ্ট্রে একটি ন্যায় এবং জ্ঞানভিত্তিকসমাজ গঠন করতে চান। ন্যায়, জ্ঞান এবং যুক্তিভিত্তিক সমাজ গঠন করতে হলে সমাজে বিতর্ক থাকতে হয়। বিতর্ক না থাকলে ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গঠন সহজ হয় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ড. হাছান মাহমুদ গতকাল শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র আয়োজিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। সারাদেশ থেকে ১০৪টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের আয়োজনে এই যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হচ্ছে এতে বিতর্ক ও যুক্তিভিত্তিক এবং গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের স্টুডিওতে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। স্বাগত বক্তব্য দেন বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন অনেকদিন বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম- কেন বিতর্ক প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া হলো। তখন আমাকে টেলিভিশনের কর্মকর্তারা বললেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সরকারেরও অনেক সমালোচনা হয়, সেজন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমি বললাম, সমালোচনা তো হতে হবে। সরকারেরও সমালোচনা হতে হবে। সমালোচনাবিহীন সমাজ হতে পারে না। সমাজে সমালোচনা থাকতে হবে, দায়িত্বে যারা থাকবে তাদের সমালোচনা অবশ্যই হবে। দায়িত্বে না থাকলে তো সমালোচনা নাই। বিতর্ক হতে হবে, তাহলেই সমাজ এগিয়ে যাবে। তখন আমি সিদ্ধান্ত দিলাম বিটিভির দুটি কেন্দ্রে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করার।
গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত বিতর্কের ফাইনাল রাউন্ডের বিষয় ছিল ‘শুদ্ধাচার ও নৈতিকতা গঠনে পরিবারের চেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাই বেশি।’ দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক এতে সভাপতিত্ব করেন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ টেঙটাইল বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের বিতার্কিকেরা অংশ নেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এরকম একটা বিষয়কে পছন্দ করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আসলে নৈতিকতা এবং শুদ্ধাচার সুষ্ঠু সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবিক অর্থে সমগ্র বিশ্বব্যাপী মানুষ প্রচণ্ডভাবে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রের ব্যবহারের সাথে সাথে মানুষও যন্ত্রের মতো জড় পদার্থ হয়ে যাচ্ছে এবং সেটির সাথে নৈতিকতা এবং মানবিকতাও লোপ পাচ্ছে। এটি সমগ্র বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। মানবজাতিকে যদি টিকিয়ে রাখতে হয় তাহলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মানুষ যদি যন্ত্রের মত জড় পদার্থ হয়ে যায়, নৈতিকতা এবং মানবিকতা হারিয়ে যায়, তাহলে তো মানুষ আর মানুষ থাকে না। এই ক্ষেত্রে এখানে পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটিরই ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারো চেয়ে কারো ভূমিকা কম নয়।
বিজয়ী এবং রানার-আপ দুই দলকে অভিনন্দন জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, আমি নিজেও স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি, কখনো তৃতীয় হইনি। আমি নিজের জীবনের পেছনে ফিরে তাকালে বুঝি, যারা আজকে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে যে দক্ষতা ও কনফিডেন্স তৈরি হয় জীবন চলার পথে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ তাদেরকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সুদূর রংপুর থেকেও দল এসেছে। শূন্য দশমিক ৬৬ পয়েন্টের ব্যবধানে একটি দল বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি দুটি দলই বিজয়ী হয়েছে। কারণ হচ্ছে দশমিক ৬৬ কোনো ব্যবধান নয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, বিতর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এতে যুক্তি থাকে, আলোচনা থাকে। একজন মানুষকে যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার ক্ষেত্রে, নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে বিতর্ক প্রতিযোগিতা বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। এই ধরনের যুক্তিবাদী মানুষেরাই ভবিষ্যতে আমাদের দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এত বিশাল একটি আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান। সারাদেশের ২০৪টি টিম নিয়ে অনুষ্ঠিত এত বিশাল একটি আয়োজনের জন্য চট্টগ্রামকে বেছে নেয়ায় তিনি নীতি নির্ধারক মহলকে ধন্যবাদ জানান। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে চট্টগ্রামের কোনো টিম থাকলে ভালো লাগতো বলে মন্তব্য করে এম এ মালেক বিজয়ী এবং রানার আপ দলকে অভিনন্দন জানান। তিনি বির্তকে দুদলই জিতেছে বলেও মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠান শেষে বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের বিজয়ী দল বাংলাদেশ টেঙটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও রানার-আপ দল জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রতিযোগীদের হাতে ট্রফি ও সম্মাননার চেক তুলে দেন মন্ত্রী। পরে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিল্পী ও কলাকুশলীদের সুবিধার্থে সংস্কার শেষে পুনরায় বিটিভি ক্যাফেটেরিয়ার উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেমু ট্রেন ফের নিয়মিত হচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধনিজের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পড়ানো যাবে না : শিক্ষামন্ত্রী