চট্টগ্রামে নারী ও শিশুর সাতটি ট্রাইবুন্যালে বছরের পর বছর ধরে বিচারাধীন মামলাগুলো অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। একটি ট্রাইব্যুনালে গত ছয় মাস ধরে বিচারক পদটি শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে মহামারী করোনার ধাক্কা। এভাবে সবগুলো ট্রাইব্যুনাল মিলে ১৮ হাজারের অধিক মামলার বিচার কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত) ২০১৩ অনুযায়ী, ট্রাইবুন্যালে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করার কথা রয়েছে। তবে চট্টগ্রামে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে বিচারাধীন মামলাগুলো নিষ্পত্তি হতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দশ বছর বা তারও অধিক সময় লেগে যাচ্ছে। কোনো কোনো মামলা রয়েছে দশ বছর বা তারও অধিক সময় ধরে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। ২০০৯ সালে ফটিকছড়ি ভুজপুরে একশিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটির রায় হয়। অথচ ওই ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তারের পাশাপাশি সেই বছরেই চার্জশিট দেয়া হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময়মতো সাক্ষী না পাওয়ায় মামলার বিচারিক কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া সাধারণ সাক্ষীর পাশাপাশি সরকারি সাক্ষীকেও সময়মতো পাওয়া যাচ্ছে না। এতে মাসের পর মাস ধরে পেছাতে থাকে মামলাগুলোর ধার্য্য তারিখ। সম্প্রতি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে একটি মামলায় সাক্ষী হিসেবে এক চিকিৎসককে তিন দফা সমন জারি করা হয়। এরপরও আদালতে নির্ধারিত ধার্য্য তারিখে ওই চিকিৎসক উপস্থিত হননি। এতে করে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখে পিছিয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা সবগুলো মামলার ক্ষেত্রেই ঘটছে।
এরমধ্যে গত ১৩ সেপ্টেম্বর টেকনাফের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির এক যুগ আগের দুর্নীতির মামলায় চার্জগঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। এক মাস পর ১৫ অক্টোবর ধার্য্য তারিখে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলেও ওইদিন প্রথম সাক্ষী দুদক কর্মকর্তা উপস্থিত হননি। এতে করে মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ তারিখ আগামী বছর ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে যায়।
সাক্ষী সময়মতো না পাওয়ার পাশাপাশি নারী ও শিশুর একটি ট্রাইব্যুনালে গত ৬ মাস ধরে বিচারক পদ শূণ্য রয়েছে।
এব্যাপারে নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম আজাদীকে বলেন, করোনা মহামারীর আগে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম অনেকটা গতির মধ্যে ছিল। এসময় অনেক মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল। তবে করোনার কারণে মামলার বিচার কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। এখন কিছু কিছু মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। এটা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে বলে জানান নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের এই আইনজীবী।
তবে মামলা সময়মতো নিষ্পত্তি না হওয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষীকে দায়ী করছেন অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম। তিনি বলেন, সময়মতো সাক্ষী না আসায় বিচার কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে। এতে মামলার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও বিলম্ব হচ্ছে।
আইনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,মামলার সাক্ষীরা কেউ মারা গেছেন বা সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে এসব মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে।
আইনজীবীরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণের পর হত্যার মতো সংবেদনশীল অপরাধগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে চার্জগঠন করে বিচারকার্য শুরু করা যায়। সেখানে যে কয়েকজন সাক্ষী পাওয়া যাবে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে মামলা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
আইনজীবীরা জানান, চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।
আইনজীবীরা জানান,দূর-দূরান্ত এবং দুর্গম এলাকা থেকে আগত বিচার প্রার্র্থীরা বিচারক না থাকা কিংবা সাক্ষী না আসায় শুধুমাত্র হাজির হয়ে তারিখ পরিবর্তনে বিদায় নিতে হয়, যা খুবই দুঃখজনক।