বিএসটিআই চট্টগ্রামে স্থাপিত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগার

দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না ঢাকায়, সব পরীক্ষা করা যাবে নতুন দশতলা ভবন উদ্বোধন কাল

জাহেদুল কবির | শুক্রবার , ২৭ জুন, ২০২৫ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

নতুন যুগে প্রবেশ করছে মান নিয়ন্ত্রণে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়। পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগার (ল্যাব) না থাকার দুঃখ এবার ঘুচছে। বিএসটিআই’য়ে প্রায় কাজ পরীক্ষা নিরীক্ষা নির্ভর। পণ্যের গুণগত মান ঠিক আছে কি না সেটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে হয় কর্মকর্তাদের। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সবকিছু নির্ভর করে। এখানে আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ ল্যাব না থাকার কারণে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ঢাকার ওপর নির্ভর করতে হতো চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের। এতে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থের অপচয় হতো। আগামীকাল শনিবার নগরীর আগ্রাবাদ জাম্বুরী মাঠ সংলগ্ন বিএসটিআই’য়ের নবনির্মিত দশতলা ভবন উদ্বোধন হচ্ছে। সেখানে স্থাপন করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষাগার। আগের ল্যাবে ৯২টি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হতো। এখন বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত সব পণ্যের পরীক্ষা হবে চট্টগ্রামেই।

জানা গেছে, বিএসটিআই দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য, বৈদ্যুতিক ও প্রকৌশল পণ্য, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্যসহ মোট ৩১৫টি পণ্য নজরদারি করছে। এসব পণ্যের মধ্যে চট্টগ্রামে ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হতো ৯২টি পণ্যের। এছাড়া ফিজিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন করা যেত ২৪টি পণ্যের। নতুন ল্যাবে পানি, গুঁড়ো দুধের মেলামিন, ফায়ার এক্সটিংগুইসারের মান, ত্বকের বিভিন্ন প্রসাধনী, ইলেকট্রিক মিটারের মান, লেখা এবং ছাপাখানার কাগজ পরীক্ষা এবং শিশু খাদ্য, টাইলস, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল, কলম, সস, জুস, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, পেনসিল, চকলেট, মেটার মেলামিন, এন্টিবায়েটিক রেসিডু, স্বর্ণের বিশুদ্ধতা নির্ণয় করা হবে। অনদিকে নতুন ৩১ মেশিনের মাধ্যমে সকল ধরণের পেট্রোলিয়াম পণ্যের পরীক্ষা করাও সম্ভব হবে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে বিএসটিআই কার্যালয়ের কাজের পরিধি বাড়লেও সক্ষমতা সেভাবে বাড়েনি। বর্তমানে বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম নগরী ও উপজেলা ছাড়াও রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন লোগো ব্যবহার করে অনেক প্রতিষ্ঠান খাদ্যপণ্য বাজারজাত করছে। এসব ক্ষেত্রে আবার ওইসব পণ্যের মোড়কে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকে না। মূলত বিএসটিআইয়ের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব পণ্যের ভোক্তারা। এছাড়া ওজন স্কেলে (বাটখারা) বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান সেটি মানছে না।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএসটিআইয়ের মূল তদারকির কাজ চারটি বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে টেস্টিং কেমিক্যাল, টেস্টিং ফিজিক্যাল, মেট্রোলজি ও সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম)। জনবল সংকটের কারণে মাঠ পর্যায়ে বিএসটিআইয়ের মনিটরিং জোরদার করাও সম্ভব হচ্ছে না। বিএসটিআইয়ের সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) বিভাগে একজন উপপরিচালক, ৪ জন সহকারী পরিচালক ও ৬ জন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা দিয়ে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে কাজ চালাতে হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে মেট্রোলজি বিভাগে। সেখানে ১ সহকারী পরিচালক এবং ৩ জন পরিদর্শক ও ২ জন পরীক্ষক দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। অপরদিকে টেস্টিং ফিজিক্যালে একজন উপপরিচালক, ২ সহকারী পরিচালক এবং ২ পরীক্ষক দিয়ে চলছে কার্যক্রম। এছাড়া টেস্টিং কেমিক্যাল বিভাগে পরীক্ষক আছেন মাত্র ৭ জন। এছাড়া একজন উপপরিচালক এবং ২ জন সহকারী পরিচালক।

বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানি দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিএসটিআই’য়ে নতুন ভবনের উদ্বোধন হচ্ছে আগামী শনিবার। এই ভবনের জন্য আমরা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেছি। কারণ এই ভবনে স্থাপন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক পূর্ণাঙ্গ ল্যাবরেটরি। ইতোমধ্যে ল্যাবের মেশিন চলে এসেছে। এগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। একই সাথে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। এখন থেকে কাউকে আর পরীক্ষার জন্য ঢাকার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। সব পরীক্ষা চট্টগ্রামেই হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে কারবারি ও দুই সেবনকারীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা