নগরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরে পরীক্ষার মুখে পড়েছেন দলটির ১৩ নেতা। আজ নগরের ১৫ থানায় কেন্দ্রঘোষিত এ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করার কথা রয়েছে। কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ১০ জন কেন্দ্রীয় এবং নগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির শীর্ষ তিন নেতার মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিদ্যমান গ্রুপিং মিটিয়ে এবং অন্যান্য ‘প্রতিবন্ধকতা’ এড়িয়ে কর্মসূচি সফল করা কিছুটা চ্যালেঞ্জ দায়িত্বপ্রাপ্তদের জন্য।
তাছাড়া তারা সফলভাবে কর্মসূচি সম্পন্ন করতে পারছে কীনা তা পর্যবেক্ষণ করবে কেন্দ্র। ফলে এক ধরনের পরীক্ষার মুখেই পড়লেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ–গ্যাস, চাল–ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর দমন–নিপীড়ন বন্ধ করা, দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতা–কর্মীদের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
অধীনে নির্বাচনসহ ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা’ দাবিতে আজ চট্টগ্রামসহ দেশের মহানগরের থানাগুলোতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে। ইতোমধ্যে সারা দেশের থানাগুলোর জন্য দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরের ১৫ থানার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ১৩ নেতাকে। এর মধ্যে দুইজন দুটি করে থানার দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ডবলমুরিং ও আকবর শাহ থানার, ভাইস
চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে হালিশহর ও পাহাড়তলী থানার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে বায়েজিদ থানার, চেয়ারর্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারকে পাঁচলাইশ থানার, চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হককে বন্দর থানার,
সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমকে সদরঘাট থানার, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীনকে চকবাজার থানার, উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক মা ম্যা চিং–কে ইপিজেড থানার, সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদারকে পতেঙ্গা থানার এবং আরেক সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ হারুনকে খুলশী থানার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এছাড়া নগরের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে নগর বিএনপি আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনকে বাকলিয়া থানার, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করকে কোতোয়ালী থানার এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে চান্দগাঁও থানার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আজ বিকেল ৩টায় আগ্রাবাদ চৌমুহনী মোড় থেকে শুরু হবে ডবলমুরিং থানার পদযাত্রা। এছাড়া পোর্ট কানেকটিং রোডের ওয়াপদা মোড় থেকে নয়াবাজার বাজার পর্যন্ত হালিশহর থানা, জালালাবাদ বটতলী থেকে বালুচরা পর্যন্ত বায়েজিদ থানা, তিনপুলের মাথা থেকে কাজীর দেউড়ি মোড় পর্যন্ত
কোতোয়ালী থানা, বাকলিয়া অনন্তবিলাসের সামনে থেকে রাহাত্তারপুল পর্যন্ত বাকলিয়া থানা, স্বাধীনতা পার্ক থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত চান্দগাঁও থানা, কেয়ারি ইলিশিয়ামের সামনে থেকে গণি বেকারি বা দেওয়ানবাজার পর্যন্ত চকবাজার থানা, কর্নেলহাট সিডিএ থেকে পূর্ব ফিরোজ শাহ মিনার পর্যন্ত আকবর শাহ থানা, কদমতলী রাহাত স্টোর থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত সদরঘাট থানা, কাঠগড় থেকে নাজিরপাড়া পর্যন্ত পতেঙ্গা থানা, ঝনকপ্লাজা থেকে সল্টগোলা
রেলক্রসিং পর্যন্ত বন্দর থানা, মুরাদপুর এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের সামনে থেকে কাতালগঞ্জ মোড় পর্যন্ত পাঁচলাইশ থানা, সাগরিকা মোড় থেকে নয়াবাজার পর্যন্ত পাহাড়তলী থানা, আমবাগান মোড় থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত খুলশী থানা এবং সল্টগোলা ক্রসিং সিডিএ মার্কেট থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত
ইপিজেড থানার পদযাত্রা কমসূচি পালিত হবে। বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন নগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মো. ইদ্রস আলী।
জানা গেছে, কর্মসূচিকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। ওয়ার্ড এবং থানার নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে একাধিক বৈঠক করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেও থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের উপর নির্ভর করবে কর্মসূচির সাফল্য। তাই থানা, ওয়ার্ড
এবং ইউনিটের নেতাকর্মীরা গত কয়েকদিন ধরে কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। স্থানীয় লেকাজনকেও পদযাত্রায় অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তারা।
কর্মসূচির বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সরকার পতন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে আমরা ধীরে ধীরে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদের সকল নেতাকর্মী রাস্তায় আছে। ফলে আন্দোলনের ফলাফল দ্রুত পাব আমরা। আন্দোলন–কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকলে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উৎসাহ পায় এবং তারা উজ্জ্বীবিত হয়। তাই থানায় থানায়
পদযাত্রা কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা ইতিবাচক। তাছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা সবসময় মাঠে আছে এবং তারা অ্যাক্টিভ। ইতোপূর্বেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
আজকের পদযাত্রায় ব্যাপক লোকসমাগম হবে দাবি করে তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ নিবে। এর আগে মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে একবার পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। সেখানেও বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ অংশ নেয়।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান আজাদীকে বলেন, ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। দলের কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিবেন। কারণ লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য মানুষ কষ্টে আছে। তারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। পদযাত্রায় সে ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটবে। একই কথা বললেন নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর। তিনি বলেন, জনগণই কর্মসূচি সফল করবে।












